অথবা, “এ জীবন ধন্য মেনেছি”-প্রসঙ্গ-সহ ব্যাখ্যা করো।
প্রাবন্ধিক যে যে ভাষা জানতেন
মুজতবা আলী অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে দু-চারটে ভাষা জানার কথা বললেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় চোদ্দো-পনেরোটি ভাষা জানতেন। তিনি ফারসি, ফরাসি, জার্মান, ইংরেজি, ইতালীয়-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন।
যে রস ও রসবর্ণনা
সৈয়দ মুজতবা আলী গানের মধ্যে যে রসের সন্ধান করেছিলেন, তা হল গীতিরস-যা তিনি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রসংগীতে।
যা আস্বাদ্য তা-ই হচ্ছে রস। গানের ক্ষেত্রে যা আস্বাদ্য তা হচ্ছে গীতিরস। সাহিত্যে রসের অর্থ আনন্দ বা সংবিৎ। পণ্ডিতদের ভাষায় রস অভিব্যক্ত হয়। সেই অভিব্যক্তির অর্থ হল সহৃদয় সামাজিকের চিত্তের আনন্দস্বরূপের অভিব্যক্তি। এককথায়, আনন্দাংশের নির্মল অভিব্যক্তিই হল রস। সংগীতরসপ্রধান কাব্যকে ইংরেজিতে বলে লিরিক।
গানের গীতিরস একান্ত কবিমানসের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিসৃষ্ট। প্রকৃতিজগৎ বা জীবন কবির হৃদয়ে নানা স্পন্দন ও উপলব্ধির সৃষ্টি করে, কবি তাকেই নিপুণভাবে প্রকাশ করে গীতিরসের জন্ম দেন। রবীন্দ্রনাথের গীতিভাবনায় রয়েছে প্রকৃতির রূপ, সেইসঙ্গে শব্দচয়নের বিশিষ্টতায় এক অনন্ত-অলৌকিক অসীম প্রাণকে উপলব্ধি করা যায়। সামান্যের মধ্যে অসামান্য, ক্ষুদ্রের মধ্যে বৃহৎ, রূপের মধ্যে অরূপের ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করাই রবীন্দ্র গীতিরসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই গীতিরসেরই আজীবন সন্ধান করেছেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী।
গীতিরসাস্বাদন
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনায়-শেলি-কীট্স, গ্যোটে-হাইনে, হাফিজ-আত্তার, কালিদাস-জয়দেব, গালীব-জওক প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য কবি-সাহিত্যিক-গীতিকারদের কবিতা ও গানের রসাস্বাদনের কথাই উল্লেখ করেছেন।