সাম্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো

সাম্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো

সাম্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো
সাম্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো

সাম্যের প্রকৃত অর্থ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠে সাম্যের প্রকৃত অর্থ হল ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধায় সমতা লাভ। অর্থাৎ সাম্য প্রত্যেকটি মানুষের আত্মোপলব্ধিতে বিশেষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রদত্ত সাম্যের সংজ্ঞা

সাম্যের সংজ্ঞা প্রসঙ্গেবিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাদের মতামত দিয়েছেন, সেগুলি হল-

(i) বার্কার: বার্কার সাম্য বলতে বুঝিয়েছেন, অধিকার বণ্টনের সেই পদ্ধতিগত নিয়মকে, যা ন্যায়ের অনুসরণে ও ন্যায় থেকে উদ্ভূত।

(ii) ল্যাস্কি: সাম্য বলতে সকলের প্রতি সমান আচরণকে ল্যাস্কি বোঝাননি। তাঁর মতে, সাম্য হল অসমান অংশকে সমান করার একটি প্রক্রিয়া। সাম্য হল সামাজিক শক্তির এইরূপ বিন্যাস, যা পরিশ্রমের অংশভাগের সঙ্গে প্রাপ্যর অংশভাগের এক ভারসাম্য আনে।

(iii) মার্কসবাদী: মার্কসবাদীদের মতে, সাম্য হল সেই অবস্থা বা পরিবেশ, যেখানে শ্রেণিশোষণ থাকবে না। সাম্য হল শ্রেণিহীন, শোষণহীন এক সামাজিক ব্যবস্থার পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় সাম্য হল স্বাধীন ও মানবিক এক সামাজিক পরিবেশ।

সাম্যের সংজ্ঞাগুলি থেকে এই ধারণা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রদর্শন অনুসারে কোনো একটি শ্রেণি রাষ্ট্রের কাছে বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত হতে পারে না। রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিক তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সমান সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের কাছে বা আইনের চোখে সকল মানুষই সমান।

সাম্যের বৈশিষ্ট্য

অধ্যাপক ল্যাস্কি তাঁর প্রণীত গ্রন্থ-এ গ্রামার অফ পলিটিক্স (A Grammar of Politics)-এ সাম্য নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাম্যের দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, তা হল- বিশেষ সুযোগের অনুপস্থিতি এবং সকলের জন্য উপযুক্ত সুযোগসুবিধা দান।

সাম্যের প্রকৃতি

সাম্যের প্রকৃতি প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন-

(i) ল্যাস্কির অভিমত: ল্যাস্কি মনে করেন, সাম্য হল বৈষম্য অবসানের একটি প্রক্রিয়া। তিনি সাম্য বলতে সকলের প্রতি সমান ব্যবহারকে বোঝাননি। কারণ-প্রত্যেকটি মানুষের দাবি, চাহিদা এবং প্রয়োজন কখনোই এক হতে পারে না। তাই সাম্য বলতে সমতাকে বোঝায় না। ল্যাস্কি সাম্যের প্রকৃতিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- নেতিবাচক অর্থে সাম্য এবং ইতিবাচক অর্থে সাম্য।

(ii) বার্কারের অভিমত: বার্কারের মতে, সাম্য হল একটি পরিবর্তনশীল ধারণা। সময়, কাল ও দেশের সামাজিক-আর্থিক পরিবেশ অনুসারে সাম্যের ধারণা গতি পায়। তাঁর মতে, সাম্য বলতে সকলের জন্য সমজাতীয় সুযোগসুবিধাকে বোঝায় না। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির গুণ ও প্রতিভা সমান নয়।

(iii) মার্কসীয় অভিমত: মার্কসবাদীদের মতে, বৈষম্যমূলক সমাজে কখনোই সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এই কারণেই সমাজে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুসারে ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ পেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, সাম্যের অর্থ অভিন্নতা নয়। সাম্য বলতে বিশেষ সুযোগসুবিধার অনুপস্থিতি এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে ন্যূনতম সমান সুযোগসুবিধা লাভের অধিকারকে বোঝায়।

আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment