সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী ফটিককে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার জন্য তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। কিন্তু মামাবাড়িতে মামির অত্যাচারে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। স্নেহহীন, মায়ামমতাহীন কলকাতার পরিবেশে ফটিক হাঁপিয়ে ওঠে। কোনোমতেই এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনি সে। এই বিরুদ্ধ পরিবেশে ফটিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক রবীন্দ্রনাথ এই উক্তিটি করেছেন।
বাল্যকাল অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পণের মুহূর্তে, অর্থাৎ তেরো-চোদ্দো বছর বয়সের ছেলেদের মতো পৃথিবীতে বালাই আর নেই। এদের না আছে শোভা, না আছে কর্মদক্ষতা। শৈশব স্নেহ এরা পাওয়ার যোগ্য নয়, আবার এদের সঙ্গসুখও কারোর কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। এদের মুখে আধো-আধো কথা ন্যাকামি ও পাকা কথা জ্যাঠামি বলে মনে হয়। শৈশব ও যৌবনের অনেক দোষ মাফ করা যায়, কিন্তু এই সময়কালের কোনো স্বাভাবিক ত্রুটিও অসহ্য বলে মনে হয়।
ফটিকের বয়সিরা বুঝতে পারে, পৃথিবীর কোথাও তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। অথচ এই বয়সেই কারোর কাছ থেকে কোনো প্রকার বন্ধুত্ব অথবা স্নেহ পেতে এরা উদ্গ্রীব হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদেরকে কেউ স্নেহ করতে বা প্রশ্রয় দিতে সাহস করে না। এরই ফলস্বরূপ এদের চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হয়ে যায়।
আরও পড়ুন – দর্শন শব্দের অর্থ MCQ