অথবা, ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ব্যক্তিগত অভিমত সংক্ষেপে লেখো
সৈয়দ মুজতবা আলী ও রবীন্দ্রনাথ
সৈয়দ মুজতবা আলীর সমস্ত জীবনটাই কার্যত রবীন্দ্রনাথময়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে কিশোর মুজতবা প্রথম রবীন্দ্রনাথকে চাক্ষুষ করেন। প্রথম দেখাতেই যে অমোঘটান তিনি অনুভব করেন, সেই টানেই ছুটে আসেন শান্তিনিকেতনে। কবিগুরুর কাছে শিক্ষালাভের সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর। এই ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরেই খানিক ভিন্ন ধাঁচের শ্রদ্ধার্ঘ্য তিনি অর্পণ করেছেন কবিকে।
রবীন্দ্রসৃষ্টির মহত্ত্ব
সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রসৃষ্টির মহত্ত্ব আলোচনার মাধ্যমে পক্ষান্তরে গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছেন। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এ প্রবন্ধ রচিত। শিরোনামটিও কবির জন্মদিনকে নির্দেশ করছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গল্প- নাটক-উপন্যাস যে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সমপর্যায়ের বা তার চেয়েও উৎকৃষ্ট, তা প্রাবন্ধিক প্রথমেই বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং শান্তিনিকেতন নির্মাণ যে দেশ ও জাতিকে যুগ যুগ ধরে নতুন নতুন দিশা দেখাবে সে বিষয়েও তিনি নিঃসন্দেহ।
রবীন্দ্রগানের শ্রেষ্ঠত্ব
প্রবন্ধটির মূল উপজীব্য রবীন্দ্রনাথের গান। তাঁর গান কোন্ কোন্ বৈশিষ্ট্যের জন্য অননুকরণীয়, অতুলনীয়-দৃষ্টান্ত-সহ প্রাবন্ধিক তা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দচয়ন, অর্থমাধুর্য নটরাজের ভঙ্গির মতোই পরিমিত ও যথার্থ- তাই সে গান অবিকল্প। প্রাবন্ধিকের মতে, রবীন্দ্রসংগীত একটি অখণ্ড, সম্পূর্ণ রূপ আর তার মধ্য থেকে পাওয়া অতৃপ্তি হল উচ্চাঙ্গ রসসৃষ্টির ব্যঞ্জনা, যা সংগীতকে আরও বিশেষ করে তুলে তা বারবার শ্রোতাকে শুনতে প্ররোচিত করে। তাই তা একই সঙ্গে অখন্ড এবং অশেষ। মাত্র কয়েকটি শব্দ আর সুর দ্বারা শ্রোতাকে কল্পরাজ্য থেকে বাস্তব ভূমির মধুর সফর করান রবীন্দ্রনাথ, এমনই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী তিনি। তাই সৈয়দ মুজতবা আলীর কাছে • তিনি ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’।