সোলন কে ছিলেন? তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
সোলনের পরিচয়
সোলন (Solon) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত বিভিন্ন আইনের জন্যও তাঁকেই বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী করা হয়েছে। এথেন্সের আরকন (খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৪ অব্দ) হিসেবে তিনি যে ব্যাপক সংস্কার রূপায়ণ করেন, সেগুলি খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে গ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম সূত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এথেন্সে অভিজাত শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমশই সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে শুরু করে। মানুষের ক্ষোভ বিদ্রোহের আকার ধারণ করার আগেই বিশৃঙ্খল শাসনকে শৃঙ্খলায় আনতে খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৪ অব্দে রাষ্ট্রের সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোলনকে, তিনিই এথেন্সে গণতন্ত্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সোলন প্রবর্তিত সংস্কারসমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা- সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার।
সোলনের সামাজিক সংস্কারসমূহ
(i) ড্রেকনের আইন ব্যতীত অন্যান্য আইন বাতিল
নরহত্যা ও রক্তপাত সংক্রান্ত ড্রেকনের আইন বজায় রেখে সোলন অন্যান্য আইনগুলি বাতিল করে দেন।
(ii) শিক্ষার প্রসার ঘটানো
সোলন বলেন যে, সন্তানকে কার্যকরী কোনও শিক্ষা প্রদান না করলে বৃদ্ধাবস্থায় পিতার ভরণ-পোষণের জন্য সন্তান দায়ী থাকবে না। গান, সাহিত্য, কাব্য, শরীরচর্চায় প্রত্যেক ছেলেমেয়ের শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি তিনি বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেন।
(iii) ব্যক্তিস্বাধীনতায় অগ্রাধিকার
কোনও কোনও বিষয়ে ব্যক্তিগত অধিকারকে সোলন ক্ষুণ্ণ করলেও কিছুক্ষেত্রে আবার ব্যক্তিস্বাধীনতাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, যারা নিঃসন্তান তাদেরকেও তিনি নিজের ইচ্ছামতো সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্বাচনের অধিকার প্রদান করেন।
সোলনের রাজনৈতিক সংস্কারসমূহ
(i) অভিজাতদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ
অভিজাত শ্রেণির রাজনৈতিক আধিপত্যকে খর্ব করতে সোলন পূর্বের আর্থিক ভিত্তিতে বিভক্ত তিনটি শ্রেণির নাগরিক ছাড়া থিটিস নামের আর একটি শ্রেণি তৈরি করে, দরিদ্র কারিগর-শ্রমিক ও চাষিদের কিছু রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করেন।
(ii) গণপরিষদের অধিকার বৃদ্ধি
সোলন গণপরিষদকে আরকন-সহ অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিশেষ অধিকার প্রদান করে গণপরিষদের ক্ষমতা ও অধিকার বৃদ্ধি করেন।
(iii) চারশজন সদস্যবিশিষ্ট পরিষদ গঠন
বাউলি (Boule) নামে পরিচিত পরিষদটির পুনর্গঠনের মাধ্যমে সোলন এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। চারটি জাতিগোষ্ঠী বা tribe মিলে তৈরি হয় ঐক্যবদ্ধ অ্যাটিকা। এই চারটি tribe-এর প্রতি tribe থেকে ১০০ জন প্রতিনিধিকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে মোট ৪০০ জন সদস্য মিলে গঠিত হয় পরিষদ। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়েও এখানে আলোচনা চলত।
(iv) লটারির মাধ্যমে আরকন নির্বাচন
সোলনের রাজনৈতিক সংস্কারের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল লটারির মাধ্যমে আরকন নির্বাচন। তবে এই ব্যবস্থায় অযোগ্য ব্যক্তির নিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি সুকৌশলে লটারির সঙ্গে নির্বাচনের মিশ্রণ ঘটান।
(v) হেলাইয়া আদালত প্রতিষ্ঠা
অ্যারিস্টটল হেলাইয়া (Heliaea) আদালত প্রতিষ্ঠাকে সোলনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার বলেছেন। বস্তুতপক্ষে এই আদালতই ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রের সর্বপ্রধান ধারক।