স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচসমূহ

ব্যক্তিস্বাধীনতার যথাযথ সংরক্ষণের জন্য স্বাধীনতার রক্ষাকবচ প্রয়োজনীয়। স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হল স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা। তাই বর্তমান রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থায় স্বাধীনতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যে ব্যবস্থার উপর প্রাধান্য আরোপ করা হয়, সেগুলি হল –

[1] লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকার

সংবিধানের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ করা স্বাধীনতার এক গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য করা হয়। সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকলে সাধারণ নাগরিকগণ সেই সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

[2] ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ

স্বাধীনতার আর একটি রক্ষাকবচ হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ। এ প্রসঙ্গে মন্তেস্কু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা বলেছেন। এই নীতির প্রবক্তাদের মতে, সরকারের সমস্ত ক্ষমতা যদি একই ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে, তাহলে স্বৈরাচারিতা সৃষ্টি হয়। ফলে স্বাধীনতা ব্যাহত হয়।

[3] আইনের অনুশাসন

আইনের অনুশাসন বলতে বোঝায়- আইনের পরিপূর্ণ প্রাধান্য এবং আইনের দৃষ্টিতে সাম্য। আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার প্রচলিত আইন অনুযায়ী সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। আইনের দৃষ্টিতে সাম্য বলতে বোঝায়, সকলের জন্য একই আইনের অস্তিত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলেই অভিন্ন আইনব্যবস্থার অধীন।

[4] গণভোট, গণউদ্যোগ ও পদচ্যুতি বা প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণভোট, গণউদ্যোগ, পদচ্যুতি প্রভৃতি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলি স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য হয়। সরকার বা জনগণের প্রতিনিধিরা কোনো অন্যায় করলে নাগরিকগণ এই সকল পদ্ধতির মাধ্যমে তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারে। নাগরিকগণ মূলত এই সকল পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার বা জনগণের প্রতিনিধিরা কোনো অন্যায় করলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারে।

[5] ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, রাষ্ট্রক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হলে জনগণের স্বাধীনতা ভোগে প্রতিবন্ধকতা কম থাকে।

[6] দায়িত্বশীল সরকার

দায়িত্বশীল সরকার হল স্বাধীনতার এক অন্যতম রক্ষাকবচ। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থায় সরকারকে আইনসভার মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধীপক্ষের সমালোচনার ভয়ে সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না। সুসংবদ্ধ বিরোধী দলগুলি জনস্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখেই সরকারি কার্যকলাপের সমালোচনা করে ও জনমতকে সতর্ক রাখে।

পরিশেষে বলা যায়, স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলির তাৎপর্য এককভাবে নয়, এগুলির মিলিত অবস্থানের ভিত্তিতেই স্বাধীনতার প্রকৃত পরিবেশ গড়ে ওঠে। কারণ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জনগণ সচেতন, সতর্ক, সচেষ্ট না হলে নিছক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment