বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা

ভূমিকা : 

নতুন শতাব্দীর নতুন সূর্য। পুরাতন শতাব্দী তার আবর্জনা মালিন্য নিয়ে ফিরে গেছে, উপহার দিয়েছে নতুন একবিংশ শতাব্দী। অথচ কোথায় ছিল মানুষ আদিম জগতে। বন্য পশুর সঙ্গে লড়াই। কাঁচা মাংস ছিল খাদ্য; গাছের বাকল, পশুর চামড়া ছিল লজ্জা নিবারণের মাধ্যম। আজ বিজ্ঞানের দৌলতে উন্নত পোশাক শরীরে। সু-উচ্চ অট্টালিকা তার শান্তির নীড়। শিল্প-বিকাশের চিহ্ন চিমনির ধোঁয়ায়। বিজ্ঞানকে নিয়েই মানুষ সভ্যতার শিখরে।

বিজ্ঞানমনস্কতা কী? : 

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা শব্দদুটি অর্থের পার্থক্যের দিকে থেকে ভিন্ন। বিজ্ঞান হল বিমূর্ত জ্ঞান, কেউ বলেন বিশেষ জ্ঞান, তাই বিজ্ঞান। প্রথম অর্থটিই যুক্তিগ্রাহ্য, কারণ বিজ্ঞান হল সমাধান সূত্র, তার প্রকাশ বা মূর্ত রূপই হল প্রযুক্তি। পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে বুঝতে হবে মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের প্রয়োগ। বিজ্ঞানমনস্কতা মানুষের শুভবোধের জাগরণ ঘটায়। সামাজিক জীবনে চলার পথে অজ্ঞানতার কারণে যে দুঃখ, হতাশা; বিজ্ঞানমনস্ক হলে সেগুলিকে দূর করা যায়।

বিজ্ঞানমনস্কতার প্রয়োজনীয়তা : 

কতকগুলি সামাজিক অনুশাসনের মধ্য দিয়ে আমরা চলি। কিন্তু সমাজের প্রচলিত রীতিগুলি মানুষের বৃদ্ধির পরিপন্থী হলেও বিজ্ঞানমনস্কতার অভাবে আমরা সেগুলিকে কাটিয়ে উঠতে পারি না। সংস্কারের দাস হয়ে আমরা চলি। ফলে, জীবনের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়। যা সত্য তাকে ভ্রান্ত বলে প্রচার করি, যা চিরন্তন তাকে অস্বীকার করি। সত্যকে সত্য বলে বহু মনীষী ক্রোধান্ধ মানুষের হাতে প্রাণ দিয়েছেন। খ্রিস্ট, গ্যালিলিয়ো, আর্কিমিডিসকে আমরা হারিয়েছি অজ্ঞানতার জন্যে।
        বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদের অন্ধকার থেকে আলোকে নিয়ে আসে, অজ্ঞানতা দূর করে। মানুষ ধর্মভীরু। ধর্মের অনুশাসনই মানুষের চলন। প্রকৃত ধর্মবোধ মানুষের অন্তরে জাগ্রত না হলে সামাজিক কুসংস্কার, জীর্ণ-লোকাচার থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারবে না। বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদের মনের অজ্ঞানতা দূর করে দেয়।

বিজ্ঞানমনস্কতা জাগানোর পথ : 

পুঞ্জীভূত গ্লানি সহসা বিদূরিত হয় না। বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলাও সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন ‘মানস জাগরণ’। মানুষের মধ্যে যে মিথ্যা লোকাচার রয়েছে তা দূর করার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। বিজ্ঞানমনস্কতা এদের শুভবুদ্ধির সহায়ক হবে। জোর, চাপসৃষ্টি, অহংবোধ থাকলে সামাজিক সংস্কারই হোক, জীর্ণ-লোকাচার হোক, কোনো কিছুরই পরিবর্তন করা যায় না। তা ছাড়া মানুষ যুক্তিবাদী। তার বোধ, ধারণা, চিন্তা, জ্ঞান রয়েছে এবং অনেক বেশি উন্নত। সেখানে কার্যকারণ সম্বন্ধীয় যুক্তি মানবে না, মানানো যাবে না, তা হতে পারে না। তাই বিজ্ঞানমনস্করা আগে বিজ্ঞানমনস্ক করতে মানুষের দরবারে যাচ্ছে।

উপসংহার : 

যুগের পরিবর্তনে মানুষের চিন্তাধারারও পরিবর্তন হয়। বিজ্ঞান মানুষকে চিন্তার সুযোগ দিয়েছে। মানুষ যুক্তি, বুদ্ধি দিয়ে কার্যকারণ যাচাই করতে চায়। তাই আমাদের ভাবতে হবে মানবসমাজকে সুন্দর করে গড়ে তোলার ওপর। আগামী প্রজন্মের জন্য এ ধরাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য চাই বিজ্ঞানমনস্কতা। বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া ছাড়া মানুষের বাঁচার অন্য কোনো পথ নেই।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা, (২) বিজ্ঞানমনস্কতাই মানবকল্যাণের দিগ্‌দর্শন, (৩) বিজ্ঞানমনস্কতার প্রয়োজনীয়তা।

Leave a Comment