প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার,
ভূমিকা :
সূর্য, গ্রহ, চন্দ্ৰ প্রকৃতির দান। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মাঝে যা কিছু তার সর্বময় কর্তা ব্রহ্মা। লীলাময়ীর লীলা অন্তহীন। সৃষ্টির আনন্দে কখনও উদ্বেল, আবার ধ্বংসের মারণযজ্ঞে তিনিই সর্বময় যন্ত্রী। যে সূর্য প্রাণের আধার, তারই তেজ প্রাণহন্তা। প্রকৃতির এই দুই রূপ এর মাঝে মানুষ চলেছে নদীর উদ্দাম তরঙ্গে আছড়ে পড়া আঘাতের পর আঘাত খেতে খেতে। সৃষ্টির মাঝে ধ্বংসকারিণী রূপের বর্ণনা ভয়াবহ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নানান রূপ : প্রাকৃতিক বিপর্যয় পৃথিবীর বুকে নানারূপে নেমে আসে। কখনও বিক্ষুব্ধ তরঙ্গমালার বিধ্বংসী বন্যারূপে, কখনও গগনভেদী রণদামামা সর্বগ্রাসী সামুদ্রিক ঝড় রূপে। কখনও আবার মুহূর্তের কম্পনে ধ্বংসকারী ভূমিকম্প, আবার কখনও বা দাবানলসম চৈত্রের চিতা জ্বালিয়ে ছাই করে দিতে আসে খরা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়রূপে বন্যা :
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি রূপ বন্যা। বন্যার প্রধান কারণ বৃষ্টি এবং পরিকল্পনাহীন নদীবাঁধ প্রকল্প। বর্ষায় ভারতের নদনদী, খালবিল সমস্তই জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। নদীর বুকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বা শুখা মরশুমে চাষোপযোগী জল সরবরাহের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে ঘটে জলস্ফীতি। এ ছাড়া নদীর দু’ধারের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জলের চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। এতেও বন্যার সৃষ্টি হয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়রূপে ঝড় :
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আর-এক রূপ সামদ্রিক ঝড়। এর ভয়ংকরতম রূপ মানুষ প্রত্যক্ষ করল ১৯৯৯ সালের ২৯সে অক্টোবর। ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ‘সুপার সাইক্লোন’ রূপে। আড়াইশো কিলোমিটার বেগের ঝড়। তাতে ২০তলা বাড়ির সমান উঁচু হয়ে সমুদ্রের জল আছড়ে পড়ল। লক্ষ লক্ষ মানুষ জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। এ ছাড়া বাংলাদেশের বুকে সীতারে’র তাণ্ডব, আয়লা, শ্রীলঙ্কার প্রলয়ংকর নার্গিসে’র কথা মানুষ চিরদিন আতঙ্কের মধ্যে স্মরণ করবে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়রূপে ভূমিকম্প :
বিজ্ঞান সভ্যতাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির কাছে সে অসহায়। ভূমিকম্প অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে স্বতন্ত্র। ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল গুজরাট, ১৯৯০-এ লাটুরে ঘটেছিল ভয়াবহ ভূমিকম্প। সাম্প্রতিক কালে নেপালে ঘটে গেল ভয়াবহ ভূমিকম্প। হাজার হাজার মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেল। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘড়বাড়ি নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়রূপে খরা :
শস্য-শ্যামলা, সুজলা-সুফলা ধরণি। বিচিত্র প্রকৃতির লীলা। তাই শস্য-শ্যামলা ধরণি কখনও হয়ে ওঠে রুক্ষ। তাপক্লিষ্ট হয়ে পুড়ে যায় ধরা। কর্ষণযোগ্য ভূমি খরার কবলে হয়ে ওঠে মরুপ্রান্তর। পানীয় জলের অভাবে মানুষ বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকে। তাপক্লিষ্ট মানুষ বিদায় নেয় পৃথিবীর বুক থেকে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতিকার :
সংগ্রাম করা মানুষের জীবনের ধর্ম। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বারে বারে এসেছে কিন্তু মানুষ শক্তি হারায়নি। তাই দুর্বার শক্তি নিয়ে মানুষ বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে জলনিকাশি ব্যবস্থা, খাল-নদী সংস্কার করতে হবে। নদী বাঁধগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। পরিকল্পিত জলাধার নির্মাণ করে জল ধারণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত ফসলের জন্য গভীর নলকূপের সাহায্যে মাটির অভ্যন্তরে থাকা মাতৃদুগ্ধসম জলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। তবে ঝড়ের আভাস আগাম দেওয়া হলেও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। মানুষ প্রকৃতির কাছে একেবারেই অসহায়।
উপসংহার :
বিজ্ঞান মানুষকে অনেক দিয়েছে। ধরণি দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ। প্রকৃতির ভয়ংকর রূপের মাঝে খুঁজে নিতে হবে আনন্দের ভুবনকে। বিপর্যয়ে কাতর হওয়া নয়, বরং নতুন করে যাত্রা শুরু করা। হৃদয়ে থাকুক স্বতোৎসারিত শক্তি।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবজীবন, (২) প্রকৃতির অভিশাপ ও তার পরিণাম।