Chakdaha Bapuji Balika Vidyamandir
বিভাগ-ক
(i) ফ্রান্সে ক্যাপিটেশন ছিল – (d) উৎপাদন কর।
(ii) ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন – (b) অ্যাডাম স্মিথ।
(iii) রোবসপিয়র ছিলেন একজন (a) জেকোবিন নেতা।
(iv) ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ হল – (b) গ্রেফতারি পরওয়ানা।
(v) মেটারনিখ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন – (d) অস্ট্রিয়ার।
(vi) ইটালির ঐক্য আন্দোলনের মস্তিষ্ক’ বলা হয় – (b) ক্যাভুরকে।
(vii) ইউরোপের রুগ্ণ মানুষ বলা হয় – (c) তুরস্ককে।
(viii) ‘এপ্রিল থিসিস’-এর প্রবক্তা হলেন – (a) লেনিন ।
(ix) ‘মেইন ক্যাম্ফ’-এর লেখক হলেন – (a) হিটলার।
(x) উড্রো উইলসন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন – (b) আমেরিকার।
(xi) ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় – (a) জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে।
(xii) নাৎসি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন – (c) হিটলার।
(xiii) স্পেনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – (c) ১৯৩১ খ্রি।
(xiv) প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ হয় (a) হিরোশিমাতে।
(xv) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় – (c) ১৯৩৯ খ্রি।
(xvi) ‘D Day’ নামে পরিচিত ছিল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের – (b) ৬ জুন।
(xvii) ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’ নামকরণটি (a) রুজভেল্টের দেওয়া।
(xviii) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত (d) হেগ-এ।
(xix) জাতিসংঘের সদস্য ছিল না (d) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(xx) জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় – (b) ১৯১৯ খ্রি।
বিভাগ-খ
উপবিভাগ : A
(i) ফরাসি জাতীয় সভার নাম ছিল স্টেটস্ জেনারেল।
(ii) শ্রীরঙ্গপত্তমে জেকোবিন ক্লাব গঠন করেন টিপু সুলতান।
(iii) লা মার্টিন ছিলেন ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর ফ্রান্সের অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকারের রাষ্ট্রপতি।
(iv) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর।
উপবিভাগ : B
(i) তুর্কি ভাষায় বলকান শব্দের অর্থ নদী । – মিথ্যা।
(ii) ‘করভি’ ছিল বিনা পারিশ্রমিকে বাধ্যতামূলক শ্রমদান। — সত্য।
(iii) আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। – সত্য।
(iv) গ্যারিবল্ডি ছিলেন কার্বোনারি দলের প্রতিষ্ঠাতা। মিথ্যা।
উপবিভাগ : C
নামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভের মিলকরণ :
(i) মেটারনিখ (c) অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী
(ii) জন হে (d) উন্মুক্ত দ্বার নীতি
(iii) ম্যাক্সিম গোর্কি (a) রুশ সাহিত্যিক
(iv) চেম্বারলেন (b) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
উপবিভাগ : E
(i) ব্যাখ্যা (a) বৈদেশিক যুদ্ধ ও রাজপরিবার খাতে অপরিমিত অর্থ ব্যয় করা হত।
(ii) ব্যাখ্যা (c) ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সসহ সমগ্র বিশ্বে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে।
(iii) ব্যাখ্যা – (b) সোভিয়েত রাশিয়ার ওপর জার্মানির আক্রমণ।
(iv) ব্যাখ্যা (b) পারস্পরিক সহযোগিতার দ্বারা আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির সমাধান করা।
বিভাগ-গ
3 (i) বুরবোঁ শাসনকালে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভরূপে পরিচিত এক বিশেষ ক্ষমতাশালী রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মচারীরা হল ‘ইনটেনডেন্ট’। তবে স্থানীয় বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ প্রশাসন, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সৈন্যসংগ্রহ-সহ বিভিন্ন বিষয় তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। লেফেভর লিখেছেন, নেকড়েতুল্য এই কর্মচারীদের অত্যাচারে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
(ii) অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে ফিজিওক্র্যাট নামে এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব হয়। এই মতবাদের মূল কথা হল (ক) অবাধ বাণিজ্য, (খ) এই মতবাদে বলা হয় জমি সমস্ত সম্পদের উৎস। তাই প্রত্যেক জমির মালিকের ভূমিকর দেওয়া উচিত। (গ) এই মতবাদে বলা হয়, মানুষ নিজেই তার স্বার্থরক্ষার সবচেয়ে বড়ো বিচারক।
(iii) বিসমার্কের সঙ্গে জার্মানির ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সংগ্রাম ইতিহাসে ‘কুলটুর ক্যাম্ফ’ বা ‘সভ্যতার সংগ্রাম’ নামে পরিচিত। বিসমার্ক একাধিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ক্যাথলিকদের সম্পূর্ণভাবে দমন করতে প্রয়াসী হলে ক্যাথলিকগণ শ্রমিক ও সমাজতন্ত্রীদের সমর্থন ও সহযোগিতায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিসমার্ক রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাথলিকদের সঙ্গে আপস -মীমাংসা করেন।
(iv) Balurghat High School-এর 6. (iv)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(v) উপদ্বীপের যুদ্ধের সময় (১৮০৮-১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ) নেপোলিয়নের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পোর্তুগালে অবস্থানরত ইংরেজ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলি ট্যাগাস নদী থেকে আটলান্টিক সমুদ্র পর্যন্ত একটি আত্মরক্ষামূলক দুর্গ প্রাকার তৈরি করে নিজেদের রক্ষা করেন এটি ‘টোরেস ভেড্রাসের সুরক্ষা রেখা’ নামে বিখ্যাত।
(vi) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে মেটারনিখ জার্মানির কার্লসবাড শহর থেকে যে নির্দেশনামা জারি করেন তা ‘কার্লসবাড ডিক্রি’ নামে পরিচিত। এই ডিক্রি অনুসারে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানির প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক মতবাদের কণ্ঠরোধ করা হয়।
(vii) শিল্পবিপ্লবের ফলে কারখানা প্রথার উদ্ভব হয়। উদ্যোগপতি ও শিল্পপতিরা কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সমগ্র অংশকে একই ছাদের তলায় উপস্থাপিত করেন এবং মজুরির বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগ করে যন্ত্রপাতির সাহায্যে বৃহদায়তন উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। এই পরিবর্তিত উৎপাদন প্রথা কারখানা বা ফ্যাক্টরি প্রথা নামে পরিচিত।
(viii) রাশিয়ায় বলশেভিক দলের মুখপত্রের নাম হল প্রাভদা। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল প্রাভদা পত্রিকায় লেনিন তাঁর এপ্রিল থিসিস নামক এক নতুন মতবাদে বলশেভিকদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, জারতন্ত্রের পতনের পর বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রী সরকারের পতন ঘটিয়ে সোভিয়েতগুলির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।
(ix) Burdwan Raj Collegiate School -এর 3. (vi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(x) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের, ইটালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি মিউনিখ চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির ফলে জার্মানি চেকোশ্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চল লাভ করেছিল।
(xi) UNESCO-এর সম্পূর্ণ নাম United Nations Educational Scientific and Cultural Organisation FAO-এর সম্পূর্ণ নাম Food and Agricultural Organisation
(xii) Balurghat High School -এর 6. (xii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xiii) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মূল দায়িত্বহল– নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ ছাড়া যেমন জাতিপুঞ্জের হল সদস্য হওয়া যায় না, তেমনি পরিষদ কোনো রাষ্ট্রের সদস্য পদ নাকচও করে দিতে পারে, নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব নির্বাচন করে থাকে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপত্তা পরিষদ সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা করে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমেও বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারে।
বিভাগ-ঘ
4 উপবিভাগ : A
(i) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 4. (i) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) সন্ত্রাসের রাজত্ব : ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুদণ্ডের পর থেকে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় দিক থেকে বিভিন্নরকম জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই সময় ফ্রান্সে এক জরুরি শাসন জারি হয়। এই আপৎকালীন জরুরি শাসনকে ফ্রান্সে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ নামে অভিহিত করা হয়। ফ্রান্সে এই ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ চলে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত।
এই সময়কালে ফ্রান্সে ব্যাপক আত্মঘাতী ও হিংসাশ্রয়ী ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফ্রান্সের দুই দল জিরন্ডিস্ট ও জেকোবিন উভয়ের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সাঁকুলোৎদের সমর্থন পেয়ে জেকোবিন দল শক্তি অর্জন করে। জেকোবিন দলনেতা রোবসপিয়রের নেতৃত্বে শুরু হয় সন্ত্রাসের অধ্যায়। বিপ্লবী নেতারা বিপ্লবের খাতিরে পঞ্চাশ হাজার নরনারীকে গিলোটিনে প্রাণদণ্ড দেন। প্রায় তিন লক্ষ মানুষকে গ্রেফতার করা হয় সন্দেহের আইনে। রানি মেরি আঁতোয়ানেত সন্ত্রাসের শিকার হন। এছাড়াও বৈজ্ঞানিক বেইলি, জিরন্ডিন দলের সদস্য মাদাম রোলা, বার্নেভ, হিবার্ট, দাঁতো প্রমুখ সন্ত্রাসের বলি হন। শেষ পর্যন্ত রোবসপিয়রসহ আরও ২৪ জন সহগামীকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসের রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে গিলোটিন যন্ত্রে রোবসপিয়রের হত্যার পর।
উপবিভাগ : B
(iii) Balurghat High School-এর 7. (ii) অথনা -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) কোড নেপোলিয়ন : ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় কীর্তি হল তাঁর আইন সংহিতা বা কোড নেপোলিয়ন।
কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তনের কারণ
পূর্বে ফ্রান্স ও বিভিন্ন প্রদেশে কোনো সাধারণ আইনবিধি ছিল না। সমগ্র দেশে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক, পরস্পরবিরোধী এবং যুগের অনুপযোগী প্রায় ৩৬০টি বিভিন্ন ধরনের আইন প্রচলিত ছিল। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তিত হয়।
আইন সংহিতা রচনা : নেপোলিয়নের উদ্যোগে ফ্রান্সের ৪ জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত একটি কমিশন চার বছর (১৮০০-০৪ খ্রিস্টাব্দ) ধরে মোট ২,২৮৭টি (মতান্তরে ২,২৮১টি) ধারাযুক্ত একটি আইনবিধির সংকলন করেছিলেন যা ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন নিজে নামকরণ করেছিলেন ‘কোড নেপোলিয়ন’।
কোড নেপোলিয়নের বিভাগ ও বৈশিষ্ট্য : আইন সংহিতাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল– দেওয়ানি আইন, ও ফৌজদারি আইন, ও বাণিজ্যিক আইন।
এই আইন সংহিতার বৈশিষ্ট্য ছিল (ক) আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান, ও যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ, (খ) সামন্ততান্ত্রিক বৈষম্যের অবলুপ্তি, (গ) ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি প্রভৃতি।
কোড নেপোলিয়নের ত্রুটি : কোড নেপোলিয়ন ত্রুটিমুক্ত ছিল না। যেমন – (ক) রোমান আইনকে প্রাধান্য দেওয়ায় প্রগতিশীলতার পথ বন্ধ হয়েছিল, (খ) নারীসমাজের মর্যাদা হ্রাস করা হয়েছিল, ও শ্রমিকদের অধিকারকে স্বীকার করা হয়নি প্রভৃতি।
কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব : এই আইনবিধির মূল নীতিগুলি পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। তাঁর এই আইনবিধির জন্য নেপোলিয়নকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলা হয় ।
উপবিভাগ : C
(v) Burdwan Raj Collegiate School-এর 4. (v) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(vi) প্রিন্স মেটারনিখ ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি নেপোলিয়নের পতনের পর ফরাসি বিপ্লবের আদর্শকে অস্বীকার করে পুরাতন স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, তা ইতিহাসে মেটারনিখ ব্যবস্থা (Metternich System) নামে পরিচিত। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতির ভাগ্যনিয়ন্তা এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে ইউরোপীয় রাজনীতি পরিচালিত হত। তাই এই সময়কে ঐতিহাসিক লুই ফিশার ‘মেটারনিখের যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
মেটারনিখ ব্যবস্থা : মেটারনিখ ছিলেন প্রতি বিপ্লব বা বিপ্লবের বিরোধিতার মূর্ত প্রতীক। তাঁর নীতি ছিল প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রগতিবিরোধী। ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করে তিনি ফরাসি বিপ্লবের পূর্ববর্তী যুগের রাজনৈতিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
উদ্দেশ্য : মেটারনিখ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল- (ক) ইউরোপের রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। (খ) ইউরোপে প্রাক্-ফরাসি বিপ্লব যুগের রাজনৈতিক অবস্থাকে ফিরিয়ে আনা।
প্রয়োগ : মেটারনিখ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাঁর এই নীতি সফলভাবে প্রয়োগ করেছিলেন • নেপোলিয়ন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করেছিলেন সেই বংশের রাজাদের ওই দেশের সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মেটারনিখ। জার্মানির জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করার জন্য তিনি সেদেশে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাড ডিক্রি জারি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। তবে মেটারনিখ ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ 1 তিনি পুরাতন রাজতন্ত্রকে সমর্থন করে ও প্রগতিশীলতার বিরোধিতা করে যুগবিরোধী কাজ করেছিলেন। তা ছাড়া শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপে যে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছিল সেখানে পুরাতন রাজতন্ত্র ছিল সম্পূর্ণ বেমানান। এ ছাড়াও তাঁর অদূরদর্শিতা ও ইংল্যান্ডের বিরোধিতা মেটারনিখ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল।
উপবিভাগ : D
(vii) ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া প্রভৃতির তুলনায় ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু হওয়ার কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন। তবে তাঁদের মতে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। যেমন- পুঁজিবাদী শিল্পের বিকাশ, উপযুক্ত বাজার গঠন, আমদানি-রপ্তানির সুবিধা, মূলধনের প্রাচুর্য, দক্ষ শ্রমিক ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি। ইংল্যান্ডে এই সমস্ত উপাদানগুলির সবকিছুই বর্তমান থাকায় শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।
উল্লেখ্য, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার ক্ষেত্রে শিল্প সহায়ক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের আবিষ্কার ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হারগ্রিভসের স্পিনিং জেনি, জন কে-এর উড়ন্ত মাকু, আর্করাইটের ওয়াটার ফ্রেম, স্যামুয়েল ক্রম্পটনের মিউল, কার্টরাইটের পাওয়ার লুম, জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন, হামফ্রে ডেভির সেফটি ল্যাম্প বা নিরাপত্তা বাতি, জন স্মিটনের ব্লাস্ট ফার্নেস বা লোহা গলাবার চুল্লি প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে বস্ত্রশিল্পের উন্নতির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।
ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা যে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীদের চেয়ে উন্নতমানের ছিলেন, এমন নয়। তবে ইংল্যান্ডের পরপর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া ইংল্যান্ডের প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো অনুসরণ করেই তাদের দেশে শিল্পায়ন ঘটায়। এইসব দেশের প্রযুক্তিবিদরা ইংল্যান্ডে এসে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়ে শিল্পোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাতেন। অর্থাৎ, ইংল্যান্ডই ছিল শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্যান্য দেশের কাছে ‘মডেল’ বা ‘আদর্শ’। তাই শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডকে ইউরোপের শিক্ষক বলা হয়।
(viii) নব সাম্রাজ্যবাদ (New Colonialism) : ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরোপের বাইরে বিশেষত আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। এই প্রবণতাই ‘নব সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত।
সাম্রাজ্যবাদের উন্মেষের কারণ
নব সাম্রাজ্যবাদের উন্মেষের কারণগুলি হল নিম্নরূপ –
(ক) শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ ও শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রির জন্য বাজার দখল এবং বাড়তি জনসংখ্যার স্থান সংকুলানের জন্য উপনিবেশ দখল করতে গেলে নব সাম্রাজ্যবাদ ত্বরান্বিত হয়।
(খ) ভৌগোলিক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা নয়া সাম্রাজ্যবাদের প্রেরণা জোগায়।
(গ) ইউরোপীয় দেশগুলির কাছে সেইসময় সাম্রাজ্যবিস্তার ছিল জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মাপকাঠি।
(ঘ) খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের ধর্মপ্রচারের প্রয়াস ছিল নয়া সাম্রাজ্যবাদের পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
(ঙ) জাতীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা ছিল নব সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম কারণ।
(চ) নব সাম্রাজ্যবাদের অপর একটি কারণ হল মানবশক্তি ও মানবসম্পদের উৎস খুঁজে বের করে তার যথাযথ ব্যবহার করা।
(ছ) নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার এবং উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করাই ছিল নব সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম বড়ো কারণ।
উপবিভাগ : E
(ix) Bankura Zilla School-এর 4. (vi) অথবা -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(x) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল বলশেভিক নেতা লেনিন সুইটজারল্যান্ডের নির্বাসন থেকে রাশিয়ায় ফিরে এসে বলশেভিক কর্মীদের উদ্দেশে এক কর্মধারা প্রকাশ করেন, যা ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে খ্যাত।
বিষয়বস্তু : বলশেভিক কর্মীদের উদ্দেশে লেনিন যে এপ্রিল থিসিস ঘোষণা করেছিলেন, সেখানে বলা হয়- (ক) মার্চ বিপ্লবে যেহেতু সোভিয়েতগুলি প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল, সেহেতু সব ক্ষমতা সোভিয়েতগুলিকে দিতে হবে। (খ) বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। (গ) শান্তি, রুটি ও জমির স্লোগানকে বাস্তবায়িত করে শ্রমিকদের রুটি, কৃষকদের জমি এবং সেনাদলকে শান্তি দেওয়া হবে। (ঘ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়া বিরত থাকবে ইত্যাদি।
গুরুত্ব : রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব সংগঠনে এপ্রিল থিসিসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কারণ- (ক) লেনিনের শান্তি, জমি ও রুটির স্লোগান সৈনিক, কৃষক ও শ্রমিককে একত্রিত করে বিপ্লবের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। (খ) এপ্রিল থিসিস ঘোষণার পরেই বলশেভিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কৃষক, শ্রমিক ও সেনা প্রতিনিধিদের সংগঠন সোভিয়েতের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
এইভাবে লেনিনের এপ্রিল থিসিস মার্চ বিপ্লবকে নভেম্বর বিপ্লবে রূপায়িত করতে সক্ষম হয়েছিল।
উপবিভাগ : F
(xi) ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এই সন্ধি জার্মানির কাছে ছিল অপমানজনক ও জবরদস্তিমূলক। যার ফলস্বরূপ জার্মানির প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবতারণা হয়েছিল।
ভার্সাই সন্ধির ভূমিকা :
প্রতিশোধ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তি জার্মানির ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। এই কারণে তারা জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী বলে ঘোষণা করে অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করে।
জার্মানির প্রতি অবিচার : ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির সমৃদ্ধ খনিজ অঞ্চল কেড়ে নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা, যা জার্মানির পক্ষে কখনোই মেটানো সম্ভব ছিল না।
জার্মান জাতীয়তাবোধের উন্মেষ : বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি ও মিত্রশক্তিবর্গের বিমাতৃসুলভ আচরণ জার্মান জাতির মনে জাতীয়তাবোধ ও আত্মমর্যাদার উন্মেষ ঘটিয়েছিল।
উপনিবেশ কেড়ে নেওয়া : ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে আলসাস, লোরেন, ইউপেন, ম্যালমেডি, মরেসনেট প্রভৃতি অঞ্চল জার্মানির কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। জার্মানির আপার সাইলেসিয়ার একটি অংশ চেকোশ্লোভাকিয়াকে এবং পূর্ব সীমান্তের পোজেন এবং পশ্চিম প্রাশিয়া অঞ্চল পোল্যান্ডকে দেওয়া হয়। ডানজিগকে উন্মুক্ত বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দূরপ্রাচ্যের জার্মান উপনিবেশগুলি জাপানকে দেওয়া হয়। এইভাবে জার্মানি তার অংশ ভূখণ্ড হারায়।
সামরিক শক্তি হ্রাস : ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির জল, স্থল ও বিমানবাহিনী ভেঙে দিয়ে জার্মানির সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে এক লক্ষ করা হয়।
হিটলারের উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : এমতাবস্থায় ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ওপর জার্মানরা আস্থা হারায় এবং নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি হিটলারের উত্থানের পথকে প্রশস্ত করে। হিটলার ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্তগুলি মানতে অস্বীকার করেন এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের পর হিটলার যে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেন তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ প্রস্তুত করেছিল।
এই কারণে ভার্সাই সন্ধিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা চলে।
(xii) তোষণনীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে নিজ নিজ নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক ইটালি, জার্মানি ও জাপানের আগ্রাসন নীতিকে সমর্থন করাকেই ‘তোষণনীতি’ বলা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তোষণনীতি : নীচে তোষণনীতির কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল (ক) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বাল্ডউইনের আমলে (১৯৩৫- ৩৭ খ্রিস্টাব্দ) ইঙ্গ-জার্মান নৌচুক্তির (১৯৩৫ খ্রি) দ্বারা জার্মানিকে অস্ত্রসজ্জার এবং ব্রিটিশ নৌবহরের ৩৫% ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। (খ) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিগের নির্দেশ অমান্য করে আবিসিনিয়া আক্রমণকারী ইটালিকে ব্রিটেন নানাভাবে সাহায্য করে। ও ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ইটালি ও জার্মানির সাহায্যপ্রাপ্ত জেনারেল ফ্রাঙ্কোর বিদ্রোহে ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিষ্ক্রিয় থাকে। (গ) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সংযুক্তির বিষয়ে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। হিটলারের অস্ট্রিয়া আক্রমণের পূর্বে ব্রিটেন এই বিষয়ে ইটালি ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনায় বসে। ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার প্রতি সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করলেও তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। ও ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মিউনিখ চুক্তি দ্বারা ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিবর্গ জার্মানির সঙ্গে চেকোশ্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলের সংযুক্তিকরণ মেনে নেয়। এইভাবে ইঙ্গ-ফরাসি তোষণনীতির ফলশ্রুতিতে হিটলার বিনা যুদ্ধে চেকোশ্লোভাকিয়ার এক বিরাট অংশ দখল করেন।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাহায্য প্রদান হিটলারকে পোল্যান্ড, দখলের ইন্ধন জুগিয়েছিল। আবার অপরদিকে পোল্যান্ডকে জার্মানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ইঙ্গ-ফরাসি প্রচেষ্টাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল।
ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি শক্তিবর্গ যদি প্রথম থেকেই তোষণনীতির পরিবর্তে প্রতিরোধনীতি গড়ে তুলত, তাহলে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে এড়ানো যেত।
বিভাগ-ঙ
5 (i) ভূমিকা : ফ্রান্সের জাতীয় সভার নাম ছিল ‘স্টেটস্ জেনারেল’ (States General)। ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ফ্রান্সের আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য হন। অভিজাতরা স্টেটস্ জেনারেলের গঠন ও ভোটদান পদ্ধতি আগের মতো রাখতে চেয়েছিলেন। তারা চেয়েছিলেন ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে যেখানে স্টেটস্ জেনারেল স্থগিত হয়েছিল ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকেই পুনরায় গঠিত হোক।
স্টেটস্ জেনারেল : পুরোনো নিয়মে যাজক, অভিজাত ও সাধারণ মানুষ পৃথক পৃথকভাবে তিন সভায় ভোট দিত। অর্থাৎ, তিনটি শ্রেণির তিনটি ভোট ধরা হত সদস্য অনুসারে মাথাপিছু ভোটাধিকার ছিল না। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে স্টেটস্ জেনারেলের নির্বাচন হয়। এতে নির্বাচিত মোট ১২১৪ জন সদস্যের মধ্যে প্রথম বা যাজক শ্রেণির ৩০৮ জন, দ্বিতীয় বা অভিজাত শ্রেণির ২৮৫ জন এবং তৃতীয় বা সাধারণ শ্রেণির ৬২১ জন সদস্য নির্বাচিত হন।
এখানে তৃতীয় শ্রেণির নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যা ছিল বেশি। তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা সংঘবদ্ধ হয়ে ‘পেট্রিয়টিক পার্টি’ (Patriotic Party) বা ‘ন্যাশনাল পার্টি’ (National Party) নামে একটি দল গঠন করে। ‘পেট্রিয়টিক পার্টি’ দাবি করে যে, তিন শ্রেণির প্রতিনিধিরা একই সভায় বসবে এবং মাথাপিছু ভোটের ভিত্তিতে স্টেটস্ জেনারেলের কাজ পরিচালিত হবে।
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন বসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত হয়। তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা দাবি করে যে- তিনটি সম্প্রদায়ের যৌথ অধিবেশন করতে হবে, প্রতি সদস্যকে ভোটাধিকার দিতে হবে।
যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় এই দাবির বিরোধিতা করে। রাজা ষোড়শ লুই তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি অগ্রাহ্য করে প্রচলিত ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। রাজার সিদ্ধান্তে তৃতীয় শ্রেণির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে এক সভায় মিলিত হয় এবং তারা নিজেদের সভাকেই ‘জাতীয় সভা’ (National Assembly) বলে ঘোষণা করে।
তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিদের তরফ থেকে জানানো হয় যে, তারাই হল সমগ্র ফরাসি জাতির প্রতিনিধি, তাই কর ধার্য করার অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে (১৭ জুন, ১৭৮৯ খ্রি)। ঐতিহাসিক গ্রান্ট (Grant) ও টেম্পারলি (Temperley)-এর মতে, এই ঘটনাটি হল ‘ফরাসি বিপ্লবের ক্ষুদ্র প্রতীক’ (It was the French Revolution in miniature) |
উপসংহার : রাজা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। ২০ জুন তৃতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা টেনিস কোর্টের মাঠে একত্রিত হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে এবং তা ধীরে ধীরে ফরাসি বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায়।
(ii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 5. (ii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iii) বলশেভিক বিপ্লবের সামাজিক কারণ : আধুনিক বিশ্বের একটি যুগান্তকারী ঘটনা হল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব। এই রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের পশ্চাতে একাধিক কারণের পাশাপাশি সামাজিক কারণও দায়ী ছিল। সেগুলি হল –
সামাজিক বৈষম্য : বৈষম্যমূলক রুশ সমাজব্যবস্থায় দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি সকল প্রকার রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। অপরদিকে একশ্রেণির মুষ্টিমেয় ধনী অভিজাত পরিবার দেশের যাবতীয় জমি কুক্ষিগত করে রাখত। ফলে ধনীরা আরও অধিক ধনী এবং দরিদ্ররা আরও অধিক দরিদ্র হতে থাকে।
কৃষকদের অসন্তোষ : কৃষকদের অসন্তোষ রুশ বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। রাশিয়ায় কৃষকদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করলেও কৃষকরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তাদের অবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটেনি। তারা প্রাপ্ত জমির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য হত। দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের অবস্থার অবনতি হয় ও জোতদার শ্রেণির (কুলাক) প্রভাব বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষক অসন্তোষ রাশিয়ায় জারতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করেছিল।
শ্রমিকদের অসন্তোষ : রাশিয়ার শিল্পায়নের ফলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। রুশ সরকার বিদেশি শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষা করলেও শ্রমিকস্বার্থের প্রতি উদাসীন ছিল। ফলত, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়াতেও অবাধে শ্রমিক শোষণ চলতে থাকে। কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ, অনাহার-অর্ধাহার, বস্তি জীবনের দুরবস্থা, শোষণ-অত্যাচার শ্রমিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এছাড়া তাদের কাজের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। ফলে তারা উপলব্ধি করে যে, জারতন্ত্রের পতন না ঘটলে এই অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটবে না।
রুশীকরণ নীতি : রুশ সমাজ বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠলেও জার সরকার অ-রুশ জনগণের ওপর নানারকম দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে এবং তাদের ওপর জোর করে রুশ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় ।
সামাজিক অধঃপতন : রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। জার সরকার সাধারণ জনগণের শিক্ষার প্রসারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অশিক্ষিত জনগণ মদ্যপান এবং নানারকম কুঅভ্যাসে রত ছিল। তাদের মধ্যে কোনো রকম সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বলশেভিক দল রুশ জনগণকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে সচেতন করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
দার্শনিকদের প্রভাব : রুশ বিপ্লবে দার্শনিকদের প্রভাব ছিল অপরিসীম। গোর্কি, টলস্টয়, তুর্গেনেভ, গোগোল, পুসকিন, বাকুনিন প্রমুখ সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ স্বৈরাচারী জার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এছাড়া দার্শনিক কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রবাদ রাশিয়ার জনগণকে প্রভাবিত করেছিল। নির্যাতিত শ্রমিকশ্রেণি স্বৈরতন্ত্রের উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
এই সমস্ত সামাজিক কারণগুলি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেছিল।