নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৫

Barrackpore govt High School

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৫

(i) ফ্রান্সে বিপ্লবের পূর্বে মোট কৃষিজমির দশভাগের একভাগ ছিল – (b) চার্চের অধীনে।
(ii) ফ্রান্সে প্লেবিয়ান শ্রেণিভুক্ত ছিল – (d) কৃষকরা। –
(iii) তুর্গো ছিলেন রাজা ষোড়শ লুই-এর – (b) অর্থমন্ত্রী। 
(iv) ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে যার প্রকৃত নাম তিনি হলেন (a) ভলতেয়ার।
(v) নেপোলিয়নের ধারণায় ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের আসল শত্রুদেশ হল (a) ইংল্যান্ড। 
(vi) নেপোলিয়ন যে দেশকে ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’-এ পরিণত করেন, সেই দেশটি হল – (b) পোল্যান্ড।
(vii) ‘Battle of the Nations’ নামে পরিচিত (d) লিপজিগের যুদ্ধ ।
(viii) ফ্রান্সে ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের’ রাষ্ট্রপতি হন – (a) লুই নেপোলিয়ন।
(ix) প্রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ‘সেডানের যুদ্ধ’ হয় (c) ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে।
(x) ‘Colonia’ শব্দটি যে শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা হল (b) লাতিন।
(xi) আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, মহান আকবর, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রমুখের হাত ধরে যে পথ চলা শুরু হয়, তাকে বলে – (c) সাম্রাজ্যবাদ ।
(xii) নৈরাজ্যবাদের জনক’ বলা হয় – (c) প্রুধোঁকে।  
(xiii) ‘জার্মানিও সূর্যের নীচে বসবাস করে’ এই উক্তিটি করেন (a) কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম ।
(xiv) ‘অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য ‘নয়া অর্থনীতি’ বা ‘নিউ ডিল’ নামে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন (c) রুজভেল্ট।
(xv) জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে বলা হত – (d) কড়িলো। 
(xvi) লেনিন প্রকাশিত ‘ইসক্রা’ পত্রিকায় ইসক্রা’ শব্দের অর্থ – (b) স্ফুলিঙ্গ ।
(xvii) হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের (a) ১ সেপ্টেম্বর।
(xviii)  যে জার্মান সেনাপতি রুশ অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিনি হলেন – (a) ভন পাউলাস ।
(xix) বর্তমানে জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা (b) ১৯৩ টি।
(xx) জাতিসংঘের সদর দপ্তর স্থাপিত হয় যে শহরে – (d) জেনেভাতে।
বিভাগ-খ

উপবিভাগ : A
(i) বিশ্বকোশ গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন দেনিস দিদেরো এবং দ্য এলেমবার্ট। 
(ii) নেপোলিয়ন ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রান্সে। 
(iii) প্রথম জাতি-রাষ্ট্র গঠিত হয় স্পেনে।
(iv) চিনে ‘মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণা করেন আমেরিকার পররাষ্ট্রসচিব জন হে ।
উপবিভাগ : B
(i) জোলভেরাইন ছিল একটি জার্মান শুল্কসংঘ।
(ii) প্যারিসের সন্ধির দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান হয়। 
(iii) ‘লুফওয়াফ’ ছিল হিটলারের নেতৃত্বাধীন বায়ুসেনা-এর নাম। 
(iv) ‘রুশ-জার্মান অনাক্রমণ’ চুক্তির মেয়াদ ছিল ১০ বছর।
উপবিভাগ : C
(i) আন্তর্জাতিক আদালত সুইটজারল্যান্ডে অবস্থিত। মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : নেদারল্যান্ডের হেগ-এ ]
(ii) হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ ‘শ্বেত অভিযান’ নামে পরিচিত।- – সত্য।
(iii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দেয়। – মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : মিত্রশক্তির পক্ষে ] 
(iv) ইংল্যান্ড ও রাশিয়া হিটলারের প্রতি ‘তোষণনীতি’ গ্রহণ করে। – মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ]
উপবিভাগ : D
বামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভের মিলকরণ :
(i) ব্লাস্ট ফার্নেস → (c) জন স্মিটন
(ii) স্পিনিং জেনি → (a) হারগ্রিভস
(iii) ওয়াটার ফ্রেম → (d) রিচার্ড আর্করাইট
(iv) পাওয়ার লুম → (b) এডমন্ড কার্টরাইট
উপবিভাগ : E
(i) ব্যাখ্যা (b) খাদ্যশস্যের দাম শ্রমিক ও নিম্নবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
(ii) ব্যাখ্যা (a) নেপোলিয়ন ফরাসি জাতির জাতীয়তাবাদের প্রতিভূ হয়ে ওঠেন।
(iii) ব্যাখ্যা – (b) সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রনায়কগণ নিজ নিজ স্বার্থপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
(iv) ব্যাখ্যা (c) আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি উভয় দিক থেকেই জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের সাদৃশ্য রয়েছে।
বিভাগ-গ
3 (i) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর প্যারিসের কয়েক হাজার মহিলার দাবি অনুসারে রাজা ষোড়শ লুই সপরিবারে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভার্সাই থেকে প্যারিসে আসতে বাধ্য হন। মহিলাদের শোভাযাত্রার সূত্রে রাজার প্যারিসে আসার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক রাইকার রাজতন্ত্রের অন্তিম যাত্রার সূচক তথা ‘রাজতন্ত্রের শবযাত্রা’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
(ii) সন্ত্রাসের রাজত্বের সংগঠনগুলি ছিল – 0 জননিরাপত্তা কমিটি, ও সাধারণ নিরাপত্তা কমিটি, ও সন্দেহের আইন, বিপ্লবী আদালত এবং © গিলোটিন যন্ত্র।
(iii) Balurghat High School -এর 6. (xiii) -এর উত্তরটি দেখুন।
(iv) নেপোলিয়নের মস্কো অভিযানের ব্যর্থতার কারণ :
(১) নেপোলিয়নের বাহিনী মস্কো অভিমুখে রওনা হলে রুশবাহিনী ক্রমশ পিছু হটতে থাকে এবং পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে খাদ্য, পানীয় জল, শস্যখেত, বাসস্থান এমনভাবে নষ্ট করতে থাকে যাতে নেপোলিয়নের বাহিনী সেগুলি ব্যবহারের সুযোগ না পায়। ফলে খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় জলের অভাবে তারা বিপাকে পড়ে।
(২) রাশিয়ায় জুলাই মাসের প্রবল বর্ষণ, আগস্টের প্রচণ্ড দাবদাহ, অক্টোবরের তীব্র শীতের কামড় এবং টাইফাস নামক জ্বরের প্রকোপ মস্কো অভিযানের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। এই দুটি কারণে নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মি অনেকাংশে ধ্বংস হয়।
(v) নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপের বিজয়ী শক্তিগুলি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা নগরীতে মিলিত হয়। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপকে প্রাক্-ফরাসি বিপ্লব অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ইউরোপের রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠন ও পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, ফ্রান্সের শক্তি নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায় করা ও ইউরোপের শান্তি বজায় রাখা ।
(vi) বলকান অঞ্চলের প্রজারা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তুরস্কের সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে রাশিয়া সেই সুযোগে বলকান জাতিগোষ্ঠীগুলিকে সাহায্যের নাম করে কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে দার্দানেলিস প্রণালী হয়ে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছানোর যে পরিকল্পনাটি করে সেটি ‘উয় জলনীতি’ নামে পরিচিত।
(vii) Bankura Zilla School-এর 3. (vii)-এর উত্তরটি দেখুন।
(viii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে এর 3. (viii)-এর উত্তরটি দেখুন।
(ix) গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের দুটি পার্থক্য হল– (১) গণতন্ত্র জনপ্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় ব্যবস্থা, আর ফ্যাসিবাদ হল একনায়কতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। (২) গণতন্ত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমগুলির স্বাধীনতা স্বীকৃত কিন্তু ফ্যাসিবাদ এসবের ঘোর বিরোধী।
(x) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গের প্রতিনিধিগণ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে একত্রিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গ এখানে সমবেত হলেও মূল ক্ষমতা ছিল চারটি বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গের হাতে। এরা ‘Big Four’ নামে পরিচিত। এরা হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী অর্ল্যান্ডো ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী- ক্লেমেনশোঁ।
(xi) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করে চললেও যুদ্ধরত গণতান্ত্রিক দেশগুলির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতি ছিল। তাই ওই সমস্ত গণতান্ত্রিক মিত্রপক্ষীয় দেশের কাছে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধ উপকরণ বিক্রির যে নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করে, তাই ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ নীতি নামে পরিচিত।
(xii) অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগে যাতে পশ্চিম ইউরোপে সাম্যবাদের প্রভাব বিস্তৃত না হয়, সে কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জর্জ সি মার্শাল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন মার্কিন সাহায্যের এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাঁর এই প্রস্তাব ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত। 
(xiii) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের আর্থ-সামাজিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি কল্যাণমুখী সংস্থা হল –
(১) আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা বা International Labour Organisation (ILO) ।
(২) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা World Health Organisation (WHO)।
(xiv) Balurghat High School-এর 6. (viii) -এর উত্তরটি দেখুন।
বিভাগ-ঘ
4 উপবিভাগ : A
(1) Baita MN High School (HS) -এর 4. (II) -এর উত্তরটি দেখুন।
(ii) নেপোলিয়নের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও কুটনীতির ফলে ইউরোপের যেসকল অঞ্চল পুনর্গঠিত হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জার্মানি।
• জার্মানির পুনর্গঠন :
(১) জার্মানিতে নেপোলিয়নের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ছিল চমকপ্রদ। তিনি অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়াকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাস্ত করে যথাক্রমে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যসলের সন্ধি, ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যাম্পো ফোর্মিওর সন্ধি এবং ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে লুনিভিলের সন্ধির দ্বারা রাইন নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত জার্মান ভূখণ্ডে ফ্রান্সের আধিপত্য স্থাপন করেন।
(২) নেপোলিয়ন রাইন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে অবস্থিত বিশপের রাজ্য বা স্বশাসিত অঞ্চলগুলি বিলোপ করে সেই জমিগুলি রাজাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেন। এর ফলে ৩০০টি রাজ্যে বিভক্ত জার্মানি ৩৯টি রাজ্যে পরিণত হয়।
(৩) জার্মানির ব্যাভেরিয়া, ব্যাডেন, স্যাক্সনি, উইটেনবার্গ সহ আরও বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাজ্যের দ্বারা তিনি ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন'(Confederation of the Rhine) গঠন করেন। এর ফলে জার্মানি থেকে অস্ট্রিয়ার প্রভাব লোপ পায়।
ও জার্মানি থেকে প্রাশিয়ার প্রভাব দূর করার জন্য নেপোলিয়ন পোল্যান্ডের কিছু অংশ এবং পশ্চিম প্রাশিয়া নিয়ে যথাক্রমে ‘কিংডম অফ ওয়েস্টফেলিয়া’ (Kingdom of Westphalia) এবং ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’ (Grand Duchy of Warsaw) নামে দুটি রাজ্য গঠন করেন। প্রথম রাজ্যটি নেপোলিয়নের ভ্রাতা জেরোমের এবং দ্বিতীয় রাজ্যটি স্যাক্সনির রাজার অধীনে রাখা হয়। অতঃপর জার্মানিতে রাস্তাঘাট নির্মাণ, কলকারখানা স্থাপন, কোড নেপোলিয়ন প্রণয়ন-সহ বহু সংস্কারকার্য করে নেপোলিয়ন জার্মানিকে পুনর্গঠিত করেন।
(iii) ইটালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির অবদান : 
নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ভিয়েনা সম্মেলনের ন্যায্য অধিকার নীতির ভিত্তিতে ইটালির সম্পর্কে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাতে ইটালির বিভিন্ন অংশ বিদেশিদের দিয়ে দেওয়া হয়। এই বিদেশিদের হটিয়ে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ইটালি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জোসেফ গ্যারিবল্ডি।
ম্যাৎসিনির শিষ্য গ্যারিবল্ডি ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন। এই বাহিনীর সদস্যরা লাল রঙের পোশাক পরতেন বলে এদের ‘লালকোর্তা’ বলা হত। এই বাহিনীর সাহায্যে তিনি সিসিলি ও নেপলস জয় করে রোম আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু ক্যাভুর এতে বিব্রত বোধ করেন। তাই গ্যারিবল্ডি তাঁর একনায়কত্ব ত্যাগ করে রাজা ভিক্টর ইমান্যুয়েলের আনুগত্য স্বীকার করে নিলে দক্ষিণ ইটালি ও উত্তর ইটালি সংযুক্ত হয়। এই কারণে ক্যাভুরকে ইটালির ঐক্য আন্দোলনের মস্তিষ্ক’ বলা হয়। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ক্যাভুরের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট ইটালি (ভেনিস) ইটালির সঙ্গে যুক্ত হলে ইটালির ঐক্য সম্পূর্ণ হয়।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের পাশাপাশি তিনিও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন।
(iv) ইউরোপীয় মহাদেশের দেশগুলির মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু হয়। ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সর্বোপরি শিল্পসহায়ক বিভিন্ন যন্ত্রের আবিষ্কার ইংল্যান্ডের শিল্পক্ষেত্রে বিশেষত বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : ইংল্যান্ডের স্যাঁৎসেঁতে আবহাওয়া বস্ত্রশিল্পের সহায়ক ছিল। এই প্রকার আবহাওয়ায় সুতো ভঙ্গুর হত না। এছাড়া ইংল্যান্ডের নদী ও জলপ্রপাতগুলি জলশক্তিচালিত যন্ত্রচালনার সহায়ক ছিল। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া বায়ুশক্তির সাহায্যে বায়ুকলগুলি চালাতে সুবিধা হত।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : এইরূপ অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যা বস্ত্রশিল্পের বিকাশকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। বস্ত্রশিল্পের প্রথম যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদন ইংল্যান্ডেই শুরু হয়। ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে জন কে ‘ফ্লাইং শাটল’ বা ‘উড়ন্ত মাকু’ নামক কাপড় বোনার এক উন্নতমানের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে জেমস হারগ্রিভস আবিষ্কার করেন সুতো কাটার উন্নত যন্ত্র ‘স্পিনিং জেনি’। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে রিচার্ড আর্করাইট জলশক্তির সাহায্যে কাপড় বোনার যন্ত্র ‘ওয়াটার ফ্রেম’ আবিষ্কার করেন। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ক্রম্পটন মসৃণ সুতো তৈরির উন্নতমানের যন্ত্র ‘মিউল’ আবিষ্কার করেন। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে এডমন্ড কার্টরাইট আবিষ্কার করেন যন্ত্রচালিত তাঁত বা ‘পাওয়ার লুম’। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে এলি হুইটনি আবিষ্কার করেন তুলো বীজ থেকে তত্ত্ব পৃথক করার যন্ত্র ‘কটন জিন’। এই সমস্ত আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডের বস্ত্রশিল্পে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে এবং অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে বস্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
উপবিভাগ : B
(v) লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সাম্যবাদী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও কিছুদিনের মধ্যে রুশ জনগণ সোভিয়েত সরকারের বিরোধিতা করতে শুরু করে। দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। উৎপাদন হ্রাস পায়, জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে। এমনকি কৃষক বিদ্রোহ, নৌবিদ্রোহ ও শিল্পসংকটও পরিলক্ষিত হয়। এই অবস্থায় লেনিন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে দশম পার্টি কংগ্রেসে ‘নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ (NEP) ঘোষণা করেন।
NEP-র গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ :
(১) কৃষিক্ষেত্রে : (ক) আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়। (খ) কৃষকদের উদ্‌বৃত্ত শস্য বাজারে বিক্রি করার অধিকার দেওয়া হয়। (গ) কৃষি ব্যাংক তৈরি করে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
(২) শিল্পক্ষেত্রে : (ক) যেসব শিল্পকারখানায় ২০ জনের কম শ্রমিক কাজ করে তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (খ) শ্রমিকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। (গ) শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিদেশি মূলধনকে স্বাগত জানানো হয়েছিল।
(৩) ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে : (ক) ব্যাংক ব্যবস্থা, বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিবহণ ব্যবস্থা, বৃহৎ শিল্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। (খ) দেশে ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে গিয়েছিল। (গ) সরকারি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে মূল্যবৃদ্ধি রদ করা হয়।
NEP-র প্রকৃতি : অনেক ঐতিহাসিক বলেন, লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি ছিল সাম্যবাদ থেকে বিচ্যুত হয়ে ধনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রথম ধাপ। আবার অনেকে বলেন, লেনিনের নতুন অর্থনীতি ছিল প্রয়োজনভিত্তিক মিশ্র অর্থনীতি। আসলে লেনিন পুথিগত কমিউনিজম থেকে বাস্তব প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে NEP গ্রহণ করেছিলেন।
(vi) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে ইউরোপে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থান ও দূরপ্রাচ্যে জাপানের শক্তি বৃদ্ধি মার্কিন সরকার ও জনগণকে শঙ্কিত করে তোলে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখতে পারেনি। যে-সমস্ত ঘটনাবলির মধ্যে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে, তা নিম্নরূপ –
Cash and Carry’ নীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে আমেরিকার আইন সংশোধন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমি গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সহ নানা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার নীতি নেয়, যা ‘cash and carry নীতি নামে পরিচিত। এর ফলে জার্মানি, জাপান ও অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
সামরিক তৎপরতা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে জার্মানি সহ অক্ষশক্তির শক্তি বৃদ্ধিতে আশঙ্কিত হয়ে মার্কিন সরকার বিভিন্ন সামরিক তৎপরতা দেখাতে শুরু করে। যেমন—বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা শুরু করা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলি, কানাডা ও ব্রিটেনের সঙ্গে সামরিক চুক্তির মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা ইত্যাদি।
জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি : দূরপ্রাচ্য ও জাপানের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল সে সময় জাপান, জার্মানি ও ইটালির মধ্যে ‘ত্রিশক্তি চুক্তি’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছিল। এমতাবস্থায় জাপানি প্রধানমন্ত্রী তোজো আমেরিকাকে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় এবং আমেরিকা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দুজনের মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
গণতন্ত্রের সামরিক কারখানা ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘Lend-Lease Act’ কার্যকরী করার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের সামরিক কারখানায় পরিণত হয়। এর ফলে আমেরিকার সঙ্গে অক্ষশক্তির সম্পর্কের অবনতি হয় ও মার্কিন বাণিজ্য জাহাজ অক্ষশক্তি বিশেষ করে জার্মান সাবমেরিনের নিশানা হয়ে ওঠে। এতে ক্ষুব্ধ মার্কিন সরকার জার্মান সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজকে দেখামাত্র ধ্বংসের নির্দেশ দিলে আমেরিকা পরোক্ষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
পার্ল হারবার ঘটনা : অক্ষশক্তির এশীয় সদস্য জাপান ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার হাওয়াই স্থিত পার্ল হারবার ঘাঁটি আচমকা আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট একে ‘একটি কলঙ্কিত দিন’ বলে উল্লেখ করেন। পরদিন (৮ ডিসেম্বর) আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়।
(vii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি) হয়েছিল দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটের মধ্যে। এই দুই গোষ্ঠীর একদিকে ছিল— মিত্রশক্তি জোট এবং অপরদিকে ছিল জার্মানি, ইটালি ও জাপানের অক্ষশক্তি জোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল—
দুই শিবিরের লক্ষ্যগত পার্থক্য : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তি ছিল আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন এবং গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের বিরোধী। অন্যদিকে মিত্রশক্তি ছিল শান্তি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের পক্ষে। এই লক্ষ্যগত পার্থক্যই অক্ষশক্তিকে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত করেছিল।
সম্পদগত পার্থক্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির প্রচুর শক্তিসম্পদ অক্ষশক্তির পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। বহু উপনিবেশের অধিকারী ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পক্ষে দীর্ঘকাল যুদ্ধ চালানো সম্ভব হলেও জার্মানি, ইটালি ও জাপানের সেই সুযোগ ছিল না।
ভৌগোলিক অবস্থানগত দুর্বলতা : কোনো যুদ্ধে একবার পরাজিত হয়ে পিছিয়ে এসে পুনরায় আক্রমণ করা জার্মানির পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ রাশিয়ার মতো জার্মানির বিস্তৃত ভূভাগ ছিল না। সেজন্য জার্মানি সর্বদা আক্রমণাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তা ছাড়া জার্মানির দুই সীমান্তে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়েছিল ফ্রান্স ও রাশিয়া। তাই জার্মানিকে সর্বদা এই দ্বিমুখী আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে যুদ্ধ করতে হত।
হিটলারের আচরণ : হিটলারের উদ্ধত, খামখেয়ালি, সন্দেহপ্রবণ, আগ্রাসী মনোভাব অক্ষশক্তির পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। যুদ্ধে নাৎসিবাহিনী পরাজিত হতে থাকলে দেশের অভ্যন্তরে নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
ব্রিটিশ যুদ্ধে ব্যর্থতা : হিটলার ফ্রান্স জয়ের পর ব্রিটেনের ওপর তীব্র আক্রমণ চালান। কিন্তু ব্রিটেনকে তিনি পরাজিত করতে পারেননি। বহু ক্ষতি স্বীকার করেও ব্রিটেন পালটা আক্রমণ করে জার্মানির ক্ষতি করে।
রাশিয়া আক্রমণে ব্যর্থতা : হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করে প্রাথমিক সাফল্য লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। রাশিয়া ‘পোড়ামাটির নীতি’ অনুসরণ করে প্রবল প্রতিরোধ দ্বারা জার্মান আক্রমণের মোকাবিলা করে।
যুদ্ধাস্ত্র : অস্ত্রের গুণমান বিচারে জার্মানি খুব উন্নত ছিল। কিন্তু পরিমাণের দিক থেকে ইঙ্গ-মার্কিন অস্ত্রসম্ভার বিপুল ছিল। আণবিক বোমা তৈরিতে জার্মানির অসম্পূর্ণতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য, জার্মানির জেট রকেট-এর বদলে ভি রকেট তৈরিতে গুরুত্ব দান এবং Naval Airforce-এর অভাব অক্ষশক্তির সামরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
আমেরিকার যোগদান : আমেরিকা যুদ্ধের প্রথম থেকেই মিত্রশক্তিকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। পরে জাপানের আক্রমণে মার্কিন নৌ-ঘাঁটি পার্ল হারবার ধ্বংস হলে আমেরিকা বিপুল শক্তি নিয়ে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যোগ দেয়। ফলে অক্ষশক্তির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়ে।
অক্ষশক্তির পরাজয়ের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্বে মিত্রপক্ষের দেশগুলির প্রভাব ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়।
(viii) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে সম্মিলিত প্রতিনিধিবর্গ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্যগুলির বাস্তব রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিল নিরাপত্তা পরিষদের ওপর। নিরাপত্তা পরিষদের মূল দায়িত্ব ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা বিধান।
গঠন : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ২৩-৩২ নং ধারায় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী সংস্থা। ৫টি স্থায়ী এবং ৬টি অস্থায়ী অর্থাৎ মোট ১১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ৬ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হয়। সুতরাং বর্তমানে ৫টি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র মিলিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫। অস্থায়ী সদস্যরা সাধারণ সভা কর্তৃক পর্যায়ক্রমে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল – (১) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, (২) রাশিয়া, (৩) ইংল্যান্ড, (৪) ফ্রান্স, ও (৫) চিন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র অনধিক একজন করে প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে।
কার্যাবলি : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ওপর বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার অর্পণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ হল – (১) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। (২) আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার জন্য যে-কোনো বিষয়ে তদন্ত, সালিশি ও শাস্তি প্রদান করা। (৩) আন্তর্জাতিক শান্তি ভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বয়কট ও সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। (৪) নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতেই সাধারণ সভা নতুন সদস্যদের গ্রহণ করতে পারে। (৫) কোনো সদস্য রাষ্ট্র যদি বারবার সনদ বর্ণিত নীতি অমান্য করে তবে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাধারণ সভা সেই সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিপুঞ্জ থেকে বহিষ্কার করতে পারে।
বিভাগ-ঙ
5 (i) ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ : Bantra MSPC High School-এর 4. (i) -এর উত্তরটি দেখুন।
সামাজিক কারণ : ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শোষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয় শ্রেণি – (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল ‘বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল ‘অধিকারহীন শ্রেণি’।
প্রথম শ্রেণি (First Estate ) : ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এঁরা ছিলেন সুবিধাভোগী এবং ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ১%-এরও কম। এঁদের মোট সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। অথচ এঁদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির ১০%। এই জমির জন্য এঁরা রাজাকে কোনো প্রকার করও দিতেন না। যাজকরা ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে স্বেচ্ছাকর ছাড়া অন্য কোনো কর দিতে রাজি ছিলেন না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযোগসুবিধা এঁরা ভোগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।
দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate ) : ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এঁরা ছিলেন ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ ফ্রান্সের মোট জমির ২০% ছিল এঁদের দখলে। এঁরা জমির জন্য সরকারকে কোনো প্রত্যক্ষ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।
তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate ) : ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৯৭%-এর বেশি। সমাজে এদের বংশকৌলীন্য ছিল না। ফ্রান্সের করের বোঝার বেশিরভাগটাই এদের বহন করতে হত। ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এঁরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। তাই তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা তাদের প্রতি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়নের প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
(ii) ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। তুরস্ক সাম্রাজ্যের অন্তর্গত জেরুজালেমের গ্রোটোর গির্জার কর্তৃত্ব নিয়ে লাতিন ও গ্রিক খ্রিস্টানদের বিরোধকে কেন্দ্র করে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়। একটি গির্জার কর্তৃত্ব নিয়ে ধর্মীয় কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হলেও এর পিছনে আরও অনেক কারণ বিদ্যমান ছিল।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ :

প্রত্যক্ষ কারণ : তুরস্ক সাম্রাজ্যের অন্তর্গত জিশুখ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র জেরুজালেমের গ্রোটোর গির্জার কর্তৃত্ব নিয়ে লাতিন ও গ্রিক খ্রিস্টানদের মধ্যে বিরোধ ছিল। লাতিন খ্রিস্টানদের সমর্থক ছিল ফ্রান্স ও গ্রিক খ্রিস্টানদের সমর্থক ছিল রাশিয়া।
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন তুরস্কের সুলতানের কাছে জেরুজালেমের অধিকার দাবি করেন। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার জার তুরস্কে অবস্থিত গ্রিক ধর্মপ্রতিষ্ঠান ও তুরস্কনিবাসী গ্রিক প্রজাদের ওপর অধিকার দাবি করেন। তুরস্কের সুলতান ফ্রান্সের দাবি মানলেও রাশিয়ার দাবি মানতে অস্বীকার করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়া তুরস্কের মোলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া দখল করে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া তুরস্কের পক্ষে যোগ দিলে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়।
পরোক্ষ কারণ :  খ্রিস্টানদের তীর্থস্থানের অধিকার নিয়ে বিরোধ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ হলেও এই যুদ্ধের পিছনে প্রকৃত কারণ ছিল তুরস্ক সাম্রাজ্যে রাশিয়ার দখলদারি এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির স্বার্থপ্রণোদিত আচরণ।
তুরস্ক সাম্রাজ্যে রাশিয়ার দখলদারি : তুরস্ক সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে রাশিয়া চেয়েছিল কৃষ্ণসাগর দিয়ে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছোনোর জন্য প্রয়োজনীয় এলাকা দখল করতে। এজন্য রাশিয়া বারবার ইংল্যান্ডের কাছে তুরস্ক বিভাজনের প্রস্তাব দেয়। ইংল্যান্ড সরাসরি এই প্রস্তাবে রাজি না হলে রাশিয়া তুরস্কের অন্তর্ভুক্ত মোলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া দখল করে নেয়।
ইংল্যান্ডের স্বার্থ : ইংল্যান্ড বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার সম্প্রসারণের বিরোধী ছিল। কারণ এর ফলে ইংল্যান্ডের ভারত ও আফ্রিকায় যাওয়ার পথে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই ইংল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে ও তুরস্কের পক্ষে যোগদান করে ।
ফ্রান্সের স্বার্থ : ফ্রান্সও বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারকে ভালো চোখে দেখেনি। কারণ এই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ফ্রান্সের ব্যাবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হত। তা ছাড়া ফ্রান্স চেয়েছিল রাশিয়াকে পরাজিত করে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মস্কো অভিযানের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে।
অস্ট্রিয়ার স্বার্থ : অস্ট্রিয়া তার বাণিজ্যিক স্বার্থ ও সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার সম্প্রসারণের বিরোধী ছিল।
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার স্বার্থ : পিডমন্ট ও সার্ডিনিয়ার স্বার্থ ছিল যে, ইটালির ঐক্য আন্দোলনে তারা প্রয়োজনে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাহায্য পাবে।
ফলাফল : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফলকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রত্যক্ষ ফলাফল : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফলগুলি হল- 
(১) এই যুদ্ধের দ্বারা বলকান অঞ্চল ও কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া তুরস্কের যেসব অঞ্চল দখল করেছিল, তুরস্ক সেগুলি ফেরত পায়।
(২) তুরস্ক ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের সদস্যপদ লাভ করে। শক্তি সমবায় তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। শক্তি সমবায়ভুক্ত ইউরোপীয় আধুনিক রাষ্ট্রগুলির সংস্পর্শে এসে তুরস্ক আধুনিক সংস্কারের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবনের সুযোগ পায়।
পরোক্ষ ফলাফল : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পরোক্ষ ফলাফল ছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। লর্ড ক্রোমার এই যুদ্ধকে ‘Watershed of European History’ অর্থাৎ ইউরোপীয় ইতিহাসের জলবিভাজিকা’ আখ্যা দিয়েছেন।
(১) ইউরোপে সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি প্রতিহত হওয়ায় রাশিয়া মধ্য এশিয়ায় সেই নীতি অনুসরণ করে। এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
(২) ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে জারতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকট হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধের পর থেকেই রুশ জনগণ জারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে।
(৩) ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর বলকান জাতিগুলির মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দেখা দেয়।
(iii) Balurghat High School এর ৪. (i)-এর উত্তরটি দেখুন।

এগুলিও পড়তে পারেন

সেট ১ ➤ Baita MN High School (HS)

সেট ২ ➤ Balurghat High School

সেট ৩ ➤ Bankura Zilla School

সেট ৩ ➤ Bantra MSPC High School

Leave a Comment