Baita MN High School (HS)
(i) ষোড়শ লুই ছিলেন পঞ্চদশ লুই-এর – (b) পৌত্র। –
(ii) ‘ঝড়ের পাখি’ নামে পরিচিত ছিলেন (c) রুশো।
(iii) ‘জাতীয় রক্ষী বাহিনী’ গড়ে উঠেছিল – (b) লাফায়েতের – নেতৃত্বে।
(iv) নেপোলিয়ন প্রবর্তিত ‘সিভিল কোড’ ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামে পরিচিতি লাভ করে (b) ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে। 1
(v) ‘জুন্টা’ ছিল – (b) স্পেনের বিদ্রোহী সংগঠন।
(vi) নেপোলিয়ন শেষবারের মতো পরাজিত হন। (c) ওয়াটারলুর যুদ্ধে।
(vii) ‘কার্লসবাড ডিক্রি (১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ) জারি করেন (a) মেটারনিখ।
(viii) ‘ক্যাসালরি’ ছিলেন – (c) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
(ix) ‘ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি’ দ্বারা (b) সেডানের যুদ্ধের অবসান ঘটে।
(x) “শিল্পবিপ্লব’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। (b) অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি।
(xi) ত্রিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল – (a) ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে।
(xii) সেরাজেভো হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের (c) ২৮ জুন।
(xiii) ‘আধুনিক রাশিয়ার জনক’ বলা হয় গ্রেটকে। (a) জার গিটার দ্য
(xiv) ‘আভান্তি’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন – (b) মুসোলিনি
(xv) ‘রাইখস্ট্যাগ’ ছিল – (a) জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ।
(xvi) ‘এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া’ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দেশ এই কথা ঘোষণা করেছিল, সেই দেশটি হল – (b) জাপান।
(xvii) জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন – (a) এরিক ট্রুমপ্ত। (xviii) ‘মেইন ক্যাম্ফ’ ছিল একটি – (b) আত্মজীবনী ।
(xix) জাতিপুঞ্জ তার উদ্দেশ্য রূপায়ণ ও কার্যাবলি পরিচালনার জন্য যে ছটি সংস্থার পত্তন ঘটিয়েছে তা সনদের যত নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে তা হল (a) ৭ নং।
(xx) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতির সংখ্যা হল – (a) ১৫ জন।
বিভাগ – খ
2
উপবিভাগ : A
(i) অ্যান্টোনিও গুটারেস বা অ্যান্তনিও গুতারেস ছিলেন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বর্তমান মহাসচিব।
(ii) প্রাক্ ফরাসি বিপ্লবকালীন সময়ে মদের ওপর ধার্য কর এডস্ নামে পরিচিত।
(iii) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের ঘটনা ‘অপারেশন বারবারোসা’ নামে পরিচিত।
(iv) ‘SAARC’-এর বাংলা অর্থটি হল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ।
উপবিভাগ : B
(i) ইঙ্গ-ফরাসি তোষণনীতি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। – সত্য ।
(ii) ১৮৭০-১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় ছিল ইউরোপে সশস্ত্র শান্তির যুগ। — সত্য।
(iii) জেমস ওয়াট বাষ্পচালিত রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : জর্জ স্টিফেনসন ]
(iv) ‘এপ্রিল থিসিস’ ঘোষণা করেন ট্রটস্কি। – মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : লেনিন ]
উপবিভাগ : C
বামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভের মিলকরণ :
বামস্তম্ভ
(i) মেটারনিখ → (c) অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী
(i) ভিট্টোরিও অর্ল্যান্ডো → (b) নীলনদের যুদ্ধ
(iii) জেনারেল ফ্রাঙ্কো → (a) স্পেন
(iv) নেলসন → (d) ইটালির প্রধানমন্ত্রী
উপবিভাগ : E
(i) ব্যাখ্যা (a) এখানে জনমতের কোনো মূল্য নেই। –
(ii) ব্যাখ্যা (c) জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা।
(iii) ব্যাখ্যা (c) মিত্রশক্তি জোটকে সাহায্য করার জন্য।
(iv) ব্যাখ্যা (c) ফরাসি পুরুষরাই ছিল ফরাসি বিপ্লবকালে আন্দোলনের পরিচালক।
বিভাগ-গ
3] (i) বাস্তিল দুর্গ ছিল ফ্রান্সের স্বৈরশাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে প্রচুর নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে বন্দি করে রাখা হত। প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এই দুর্গ দখল করে নেয়। ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এই দিনটির প্রতীকী মূল্য অসীম। এই কারণে এই দিনটি ‘জাতীয় দিবস’ রূপে পালিত হয়।
(ii) ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণা যে যে বিপ্লবী আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত ছিল সেগুলি হল ইংল্যান্ডের ‘ম্যাগনাকার্টা’, ‘বিল অফ রাইটস’ এবং আমেরিকার ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’।
(iii) রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার ফলে উজ্জীবিত নেপোলিয়নের শত্রুরা অর্থাৎ রাশিয়া, প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ইংল্যান্ড প্রভৃতি মোট তেরোটি দেশ জোটবদ্ধ হয়ে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিরুদ্ধে লিপজিগের যুদ্ধে অংশ নেয় বলে এই যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয়।
(iv) ভিয়েনা সম্মেলনের ‘চার প্রধান’ বা ‘বিগ ফোর’ (Big Four) হল – 0 অস্ট্রিয়া, ও রাশিয়া, ও প্রাশিয়া, ইংল্যান্ড। এর মধ্যে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিখ ছিলেন এই সম্মেলনের সভাপতি। এছাড়া ছিলেন রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার, প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডরিখ উইলিয়ম, ইংল্যান্ডের মন্ত্রী ক্যাসালরি, অস্ট্রিয়ার রাজা প্রথম ফ্রান্সিস প্রমুখ।
(v) ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়া যে বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল তা ‘পোড়ামাটি নীতি’ নামে পরিচিত। ফরাসি বাহিনী যত রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছিল রাশিয়াও তার এলাকা পরিত্যাগ করে ওই এলাকার খাদ্য, জল প্রভৃতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য নষ্ট করে বা পুড়িয়ে দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল। এর ফলে নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনী মনোবল হারিয়ে অগ্রসর হতে সাহস পায়নি।
(vi) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের ফলে বুরবোঁ বংশের শাসনের অবসান হয়। ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন অর্লিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপ। তিনি বিপ্লবী সংবিধান মেনে শাসন পরিচালনার শপথ গ্রহণ করেন। জুলাই বিপ্লবের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সম্রাট লুই ফিলিপের শাসনকালকে (১৮৩০-১৮৪৮ খ্রি) ‘জুলাই রাজতন্ত্র’ বলা হয়।
(vii) যে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক ধ্বংস করে জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ প্রভৃতি শোষণমূলক ধারণাকে সমর্থন করে, তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ’ বলে।
(viii) ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি জলপথে আফ্রিকার চারদিকের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পূর্বের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বজায় রাখত। ফলে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হত। তাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্য সুয়েজ খাল খনন করা হয়।
বর্তমানে সুয়েজ খাল মিশরে অবস্থিত।
(ix) হিটলার মনে করতেন। বিশ্বে একমাত্র জার্মানরাই বিশুদ্ধ আর্যরক্তের অধিকারী। তাই বিশ্বে জাতিগত দিক থেকে তারাই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ প্রভু জাতি। এই কারণে অন্যান্য জাতির ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করার অধিকার রয়েছে জার্মানদের। হিটলারের এই উন্নাসিক ভাবনা হল হেরেনভক তত্ত্ব।
(x) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অগণিত মানুষের প্রাণহানি, ভয়াবহ ধ্বংসকাণ্ড, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, মারণাস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি বিশ্বজনমানসে যে আতঙ্ক ও ব্যাকুলতার সৃষ্টি করে তার থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষ অগ্রণী হয়। এই শান্তি স্থাপনের প্রধান পদক্ষেপ স্বরূপ গড়ে ওঠে জাতিসংঘ।
(xi) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার এক দশকের মধ্যে, বিশেষ করে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট নেমে আসে। এই সংকট সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এটি বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট বা অর্থনৈতিক মহামন্দা নামে পরিচিত।
মহামন্দার সময়কালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন হুভার।
(xii) রুশ শব্দ ‘নারদ’ থেকেই ‘নারদনিক’ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। এর অর্থ জনগণ। রাশিয়ার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কৃষকদের অবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে তাদের বিপ্লবমুখী করার যে নীতি গ্রহণ করেন, তা ‘নারদনিক আন্দোলন’ নামে পরিচিত হয়।
(xiii) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ লন্ডনে এক ঘোষণাপত্রের দ্বারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ, এই ঘোষণাপত্রকেই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা যায়। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
(xiv) ‘পপুলার ফ্রন্ট’ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সমাজতন্ত্রী দলের লুই ব্লাম-এর নেতৃত্বে ফ্রান্সে সরকার গঠন করে।
বিভাগ-ঘ
উপবিভাগ : A
(i) ভূমিকা :
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী বা দার্শনিকদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
দার্শনিকদের সমালোচনার ধারা :
মন্তেস্ক (Montesquieu): মন্তেস্কু ছিলেন ‘নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের’ সমর্থক এবং ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ’ নীতির প্রবক্তা। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ (The Spirit of Laws)-এ রাজার দৈবস্বত্ব নীতির সমালোচনা করে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইন, শাসন ও বিচারবিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেন। মন্তেস্কু তাঁর ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ (The Persian Letters) গ্রন্থে বিপ্লব-পূর্ব ফরাসি সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন।
ভলতেয়ার (Voltaire ) : প্রখ্যাত দার্শনিক ভলতেয়ার চার্চের দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার সম্পর্কে উল্লেখ করে ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি ক্যাথলিক গির্জাকে বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত উৎপাত’ বলে অভিহিত করেন। ভলতেয়ারের দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল— ‘কাঁদিদ’ (Candide) ও ‘লেতর ফিলজফিক’ (Lettres Philosophiques)।
রুশো (Rousseau) : অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৈপ্লবিক ছিলেন রুশো। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল— ‘সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) এবং ‘অসাম্যের সূত্রপাত’ (Origin of Inequality)। সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে রুশো বলেন যে, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী চুক্তির মাধ্যমে রাজা শাসনক্ষমতা লাভ করেন। ‘অসাম্যের সূত্রপাত’ গ্রন্থে তিনি বলেন, মানুষ স্বাধীন হয়ে এবং সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা তাকে দরিদ্র ও পরাধীন করে।
দিদেরো ও এলেমবার্ট (Diderot & Alembert) : ফরাসি দার্শনিক দেনিস দিদেরো (Denis Diderot ) ও দ্য এলেমবার্ট (D’ Alembert) ৩৫ খণ্ডের একটি বিশ্বকোশ সংকলন করেন (১৭৫১–১৭৮০ খ্রি)। দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ এই বিশ্বকোশ পাঠ করে ফরাসিদের চিন্তাধারায় ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
ফিজিওক্র্যাটস (Physiocrats ) : ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফিজিওক্র্যাটস নামে একদল অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়। এঁরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অবাধ বাণিজ্য ও শিল্প বেসরকারিকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। এই গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন কুয়েসনে (Quesnay)।
(ii) বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসিদের কাছে অত্যাচারের প্রতীক। কেননা লেতর দ্য ক্যাশে আইনের দ্বারা অনেক নির্দোষ মানুষকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা হত এখানে। বিভিন্ন কারণে ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফরাসিরা ক্ষুব্ধ ছিল। সংস্কারপন্থী অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত করা হলে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়।
গুরুত্ব :
বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব অপরিসীম।
রাজার পরাজয় : বাস্তিল দুর্গ ছিল অত্যাচারের প্রধান স্তম্ভ বা প্রতীক। এই দুর্গের পতনের অর্থ রাজার পরাজয়। রাজা ষোড়শ লুই জনগণের কাছে পরাজয় স্বীকার করেন। ফ্রান্সে জনগণের শাসন চালু হয়। বিপ্লবের অগ্রগতি : ফ্রান্সে অত্যাচারী রাজাদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে ফরাসি বিপ্লব আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। প্রমাণিত হল – রাজার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ লড়াই করে জয়লাভ করতে পারে।
পুরাতনতন্ত্রের অবসান : বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে অভিজাতরা বিদেশে পালিয়ে যায়। সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে। ফ্রান্সে মধ্যযুগের অবসান ঘটে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে বিপ্লবের পূর্বেকার সমাজব্যবস্থা (পূর্বতন সমাজ)-এর অবসান ঘটে। © বিপ্লবীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি : বাস্তিল দুর্গের পতনের পর রাজধানী প্যারিস শহরের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে বিপ্লবীদের হাতে চলে যায়। বিপ্লবীরা প্যারিস কমিউন গঠন করে পৌরশাসন চালাতে থাকে। অন্যান্য শহরেও এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
বাস্তিল দুর্গের পতন শুধুমাত্র ফ্রান্স নয়, সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষকে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রেরণা জুগিয়েছিল। ফ্রান্সে প্রমাণিত হল – প্রশাসনের অস্ত্রের চেয়ে মানুষের একতার মূল্য অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই গুডউইন বলেছেন, ‘বাস্তিল দুর্গের পতন শুধু ফ্রান্স নয়, সমগ্র বিশ্বে নতুন স্বাধীনতার জন্ম দিয়েছিল।’
উপবিভাগ : B
(iii) শত দিবসের রাজত্ব : ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নেপোলিয়ন শত্রুপক্ষের হাতে পরাজিত হন এবং তাঁকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। এলবা দ্বীপে নির্বাসিত থেকেও তিনি ফ্রান্সের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্নকে সত্যি করে একদিন ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ ১০৫০ জন সৈন্য নিয়ে তিনি ফ্রান্সের মাটিতে পৌঁছোন। তিনি নিজেকে ‘সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন এবং ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ফ্রান্সে মোট ১০০ দিন রাজত্ব করেন। এই ঘটনা ‘শত দিবসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত। শত দিবসের রাজত্বে নেপোলিয়ন বুঝেছিলেন যে, একমাত্র উদারতান্ত্রিক সংস্কারই ফ্রান্সে তাঁর শাসন সুদৃঢ় করতে পারে। তাই তিনি উদারপন্থী রাজনৈতিক নেতা কার্নো ও বেঞ্জামিন কনস্ট্যান্ট প্রমুখের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাসন শুরু করেন।
নেপোলিয়নের এলবা দ্বীপ থেকে ফ্রান্সে আগমনের সংবাদ পাওয়া মাত্র মিত্রপক্ষের প্রতিনিধিরা নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হন। নেপোলিয়নকে পুনরায় পরাজিত করার জন্য তাঁরা ফ্রান্স আক্রমণ করেন। লিঞ্জি ও কোয়াটার ব্রাস-এর যুদ্ধে জয়লাভ করলেও আর্থার ওয়েলেসলি ও ব্লকারের হাতে ওয়াটারলুর (Waterloo) যুদ্ধে নেপোলিয়ন চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন (১৮১৫ খ্রি)। অতঃপর তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানেই ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে ৫২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
(iv) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পক্ষে শুভ হয়নি। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন, যা তাঁর পতনকে ত্বরান্বিত করে।
নেপোলিয়নের পতনে দায়িত্ব :
ফ্রান্সের আর্থিক সংকট : মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ফলাফল ফ্রান্সের পক্ষে অনুকূল ছিল না। কারণ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ফ্রান্সের সর্বস্তরের মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল।
উপকূল দখল : নেপোলিয়ন জোর করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে ইউরোপের বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ দখল করে নিলে বিভিন্ন দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়।
রোম ও হল্যান্ডে অসন্তোষ : রোম ও হল্যান্ড মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন পোপকে সিংহাসনচ্যুত করে বন্দি করার ফলে ক্যাথলিক সম্প্রদায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। এ ছাড়া হল্যান্ডের শাসককে সিংহাসনচ্যুত করে তিনি হল্যান্ড দখল করেন।
উপদ্বীপের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ : পোর্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন পোর্তুগালে সেনা পাঠিয়ে মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করেন। ফেরার পথে তিনি স্পেন দখল করেন। স্পেন ও পোর্তুগাল নেপোলিয়নকে উপদ্বীপের যুদ্ধে পরাজিত করে। এই পরাজয় নেপোলিয়নকে আরও বড়ো বিপদের সম্মুখীন করে।
রাশিয়া আক্রমণ : রাশিয়ার জার মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন। পরিণামে রাশিয়ায় তাঁর ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ ধ্বংস হয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বলপূর্বক মহাদেশীয় প্রথাকে কার্যকরী করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তার ফলে সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়ন বিরোধী শক্তি গড়ে উঠেছিল। তাই বলা যায় যে, নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ ছিল- মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা।
উপবিভাগ : C
(v) নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির পুনর্গঠন, সীমানার পুনর্বিন্যাস এবং শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা নগরীতে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ২০ নভেম্বর ভিয়েনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ভিয়েনা কংগ্রেসের সেক্রেটারি ফ্রেডারিক ভন জেনস- এর মতে রাষ্ট্রনৈতিক পুনরুজ্জীবন, ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থার পুনঃসংস্কার প্রভৃতি দ্বারা ভিয়েনার নেতৃবৃন্দ জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুনর্গঠনের নামে রাজ্যসীমা সম্প্রসারণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
ঐতিহাসিক কেটেলবি-এর মতে, ফরাসি বিপ্লব প্রসূত গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক চেতনার বিনাশ ঘটিয়ে স্বেচ্ছাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল ভিয়েনা কংগ্রেসের উদ্দেশ্য।
ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য :
ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্যগুলি হল –
ইউরোপের পুনর্গঠন : ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে নেপোলিয়ন ইউরোপের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক বিন্যাসকে প্রাধান্য দেন এবং জার্মানি, ইটালি, পোল্যান্ড, স্যাক্সনি ও রাইন অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠা : ফ্রান্সে যাতে ভবিষ্যতে নেপোলিয়নের মতো কোনো শক্তিশালী সম্রাটের আবির্ভাব না হয় কিংবা ফ্রান্স যাতে শক্তিশালী না হয়ে উঠতে পারে, তার ব্যবস্থা করা।
গোপন চুক্তির মর্যাদা দান : বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নেপোলিয়নের পতনের পূর্বে তাঁকে পরাজিত করার জন্য যেসব গোপন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ভিয়েনা সম্মেলনে সেইসব চুক্তিকে যথাযথ সম্মান প্রদান করা হবে বলে স্থির হয়।
ক্ষতিপূরণ প্রদান : নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেসব ইউরোপীয় দেশগুলি যুক্ত ছিল তাদের ক্ষতিপূরণ দানের ব্যবস্থা করা।
শান্তি প্রতিষ্ঠা : নেপোলিয়নীয় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ক্ষতবিক্ষত ইউরোপে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ছিল ভিয়েনা কংগ্রেসের প্রধান উদ্দেশ্য।
(vi) রাশিয়া ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘কুসুক কাইনার্ডজি’ (Treaty of Kuchuk-Kainardji)-র সন্ধি অনুসারে তুরস্কের গ্রিক খ্রিস্টান ধর্মপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মানুরাগীদের ওপর কর্তৃত্ব দাবি করে। তুরস্ক সেই দাবি অগ্রাহ্য করলে রাশিয়া তুরস্কের অধীনস্থ মোলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া প্রদেশ দুটি দখল করে নেয়। রাশিয়ার এইরূপ আগ্রাসী কার্যকলাপে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া বিব্রত বোধ করে এবং তারা সম্মিলিতভাবে রাশিয়াকে ওই দুটি স্থান ত্যাগ করতে অনুরোধ করে। রাশিয়া সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ।
গুরুত্ব : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। অনেকে এই যুদ্ধকে অনাবশ্যক ও অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ বলে মনে করেন।
এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফল বিচার করলে মনে হতেই পারে যে, এই যুদ্ধ ছিল নিষ্ফলা ও অবাঞ্ছিত, কারণ এই যুদ্ধের মাধ্যমে বলকান সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
কিন্তু পরোক্ষ ফলাফল বিচার করলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধকে আদপেও অপ্রয়োজনীয় বা নিষ্ফলা যুদ্ধ বলে মনে হয় না। ইটালি ও জার্মানির ঐক্যসাধন এবং বলকান জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি ক্রিমিয়ার যুদ্ধ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এছাড়া এই যুদ্ধের মাধ্যমে বলকান অঞ্চলে রুশ আগ্রাসন বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তুরস্কের আধুনিকীকরণ সম্ভব হয়।
উপবিভাগ : D
(vii) ইংল্যান্ডের পথ অনুসরণ করেই অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পায়নের জোয়ার আসে। শিল্পবিপ্লব সূত্রে শিল্পোন্নত দেশগুলি বিভিন্ন অনুন্নত দেশে উপনিবেশ স্থাপন করে।
শিল্পবিপ্লবের ফলে উপনিবেশবাদের প্রসার উপনিবেশের জন্মের কারণগুলি হল –
পণ্য বিক্রির বাজার দখল : শিল্পবিপ্লবের ফলে কারখানাগুলিতে অল্প সময়ে অধিক পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হতে থাকে। উৎপাদিত পণ্যে স্বদেশের চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রয়ের জন্য বিদেশে বাজার দখলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা : শিল্পপণ্য বিক্রয়, মূলধন বিনিয়োগ ও শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশেরই উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি, পোর্তুগাল প্রভৃতি উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।
মূলধনের প্রাচুর্য : শিল্পবিপ্লবের ফলে শিল্পপতি ও পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর অর্থ বা মূলধন সঞ্চিত হয়। শিল্পোন্নত দেশগুলির শিল্পপতি ও পুঁজিপতিরা মূলধন বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
ইউরোপীয় শিল্পোন্নত দেশগুলি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলে। এশিয়ার অন্তর্গত ভারত, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, চিন, ব্রহ্মদেশ এবং আফ্রিকার অধিকাংশ ভূখণ্ডে ইউরোপীয় দেশগুলি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে।
(viii) ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধ ও ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দুটি পরস্পরবিরোধী শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ত্রিশক্তি মৈত্রী’ গঠন : ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইটালির মধ্যে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ স্বাক্ষরিত হয়। ত্রিশক্তি মৈত্রী গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়গুলি হল –
তিন সম্রাটের চুক্তি : বিসমার্ক ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ‘তিন সম্রাটের চুক্তি’ বা ‘ড্রেইকাইজারবুন্ড’ গঠন করেন।
দ্বিশক্তি চুক্তি : ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া “তিন সম্রাটের চুক্তি” তথা ড্রেইকাইজারবুন্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ফলে ‘তিন সম্রাটের চুক্তি’ ভেঙে যায় এবং জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্বিশক্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।
তিন সম্রাটের লিগ : পুনরায় বিসমার্কের উদ্যোগে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ‘তিন সম্রাটের লিগ’ বা ‘ড্রেইকাইজারবুন্ডনিস’ গঠিত হয়।
ত্রিশক্তি মৈত্রী : বিসমার্কের উদ্যোগেই ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জার্মানি, ইটালি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ (Triple Alliance) স্বাক্ষরিত হয়। পরে রোমানিয়া এবং তুরস্ক এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ গঠন : ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার মধ্যে গঠিত হয় ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ (Triple Entente)। ত্রিশক্তি আঁতাত গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়গুলি হল –
রি-ইনস্যুরেন্স চুক্তি বাতিল : জার্মানির প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণমূলক রি-ইনস্যুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু বিসমার্কের পতনের পর কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইনস্যুরেন্স চুক্তি বাতিল করেন।
ফ্রান্স-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি : জার্মানির বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ রাশিয়া এবং ফ্রান্স-এর মধ্যে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে গোপন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও রাশিয়া পরস্পর মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
ফ্রান্স ও রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের চুক্তি : এই পরিস্থিতিতে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে ইঙ্গ-ফরাসি মৈত্রী চুক্তি এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ত্রিশক্তি আঁতাত : ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তি এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে। এমতাবস্থায় এই তিনটি দেশের মধ্যে ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ (Triple Entente) গঠিত হয়।
‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ এবং ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ গঠনের ফলে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপ প্রকৃতপক্ষে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই দুই বিরোধী শিবিরের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।
উপবিভাগ : E
(ix) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বা বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্য শুধুমাত্র রাশিয়াতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল।
রুশ বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রভাব :
ঔপনিবেশিক আন্দোলনে প্রভাব : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবে বলশেভিক দলের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশবিরোধী মুক্তি আন্দোলন শুরু হয় এবং চিন ও ভারত-সহ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশবিরোধী জাতীয় মুক্তি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা : রুশ বিপ্লবের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা হয়। বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের মধ্যে সংহতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে লেনিনের উদ্যোগে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মস্কোতে তৃতীয় আন্তর্জাতিক (Third International) বা কমিন্টার্ন (Comintern) প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আবির্ভাব: রুশ বিপ্লবের প্রভাবে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র চ্যালেঞ্জ জানায়। এর ফলে বিশ্ব রাজনীতি পুঁজিপতি ও সমাজতান্ত্রিক এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন রাজবংশের পতন : রুশ বিপ্লবের প্রভাবে রাশিয়ায় রোমানভ রাজবংশ, জার্মানিতে হোহেনজোলার্ন রাজবংশ, অস্ট্রিয়ায় হ্যাপসবার্গ রাজবংশের পতন ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
শ্রমিক শোষণে অব্যাহতি : ইউরোপে সাম্যবাদী ভাবধারার গতিরোধ করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি শ্রমিক কল্যাণমূলক আইন প্রবর্তন করে শ্রমিক শোষণ বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়।
(x) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম হল্যান্ডে পলায়ন করলে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দল জার্মানিতে একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং এই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হন ফ্রেডরিখ ইবার্ট। এই সময় বার্লিনে নানা গোলযোগ চলতে থাকায় নিকটবর্তী ভাইমার শহরে এই প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রজাতান্ত্রিক সরকার ভাইমার প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত।
ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণ :
জন্মলগ্ন থেকেই ভাইমার প্রজাতন্ত্র নানান জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে @ এই সরকার অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষর করায় সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়। ও ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মহামন্দার প্রভাবে দেশে খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি সমস্যা চরম আকার ধারণ করে যা সমাধান করার ক্ষমতা এই সরকারের ছিল না। ও ভাইমার সরকারের চ্যান্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুস্টাভ স্ট্রেসম্যান জার্মানির অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু ছিল ভাইমার সরকারের কাছে এক বড়ো ধাক্কা।
এই সমস্ত কারণে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রতি হতাশ জনগণ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের উত্থান ঘটায়।
উপবিভাগ : F
(xi) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মানির প্রতি তোষণনীতি গ্রহণ করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করেছিল। এই তোষণনীতির প্রবক্তা ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তোষণনীতির দায়িত্ব :
হিটলারের নৌশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাল্ডউইনের সঙ্গে হিটলারের ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে একটি নৌ-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে হিটলারকে ব্রিটিশ নৌশক্তির ৩৫% পর্যন্ত বৃদ্ধির অধিকার দেওয়া হয়।
চেকোশ্লোভাকিয়া দখল : মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়ার অবশিষ্ট অংশে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই তিনি সমগ্র চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করে তোষণনীতির অসারতা প্রমাণ করে দেন।
রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি : হিটলারের সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কে স্ট্যালিন অবহিত ছিলেন। তাই স্ট্যালিন চেয়েছিলেন জার্মান আগ্রাসনকে কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে দিতে, আর সেই ফাঁকে রাশিয়ার শক্তিবৃদ্ধি করে নিতে। এদিকে তোষণনীতিতে আচ্ছন্ন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ভয় ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হলে জার্মানি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে। এই পরিস্থিতিতে সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানির সঙ্গে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও হিটলার এই চুক্তি অমান্য করে রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন।
যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমাধি : তোষণনীতির সুযোগ নিয়ে মুসোলিনির আবিসিনিয়া আক্রমণের সময় পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলি নীরব ছিল। হিটলার এতে আরও উৎসাহিত হয়ে রাইন অঞ্চলে সেনা সমাবেশ করলেন। এতে জাতিসংঘ নীরব থাকার ফলে জাতিসংঘের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমাধি ঘটল।
এভাবে ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের জার্মান তোষণনীতি জার্মানিকে আরও শক্তি জোগায় এবং অপ্রতিরোধ্য গতিতে তার সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটতে থাকে। এই ঘটনাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল।
(xi) উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে জাপানের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা কমে এলে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভাবধারার সংস্পর্শে জাপানে আধুনিকতার প্রসার ঘটে। ফলে ধীরে ধীরে জাপান ইউরোপীয় শক্তিগুলির সমকক্ষ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান পাশ্চাত্যের মিত্রশক্তির ওপর বিশাল সামরিক বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে। ইতিপূর্বে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর জাপান, ইটালি ও জার্মানির সঙ্গে রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি বা অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করে যার ফলস্বরূপ জাপানে সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে।
পার্ল হারবার ঘটনা : জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো আমেরিকার কাছে চুক্তির প্রস্তাব দিলে আমেরিকা চিন এবং ভিয়েতনাম থেকে জাপানের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার দাবি জানায়। কিন্তু জাপান এই প্রস্তাবে রাজি না হলে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ওয়াশিংটনে দুপক্ষের মধ্যে সমাধানসূত্র বের করার উদ্দেশ্যে বৈঠক বসে। কিন্তু সেই বৈঠক চলাকালীন ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবারে মার্কিন ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই ঘটনায় মার্কিন বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই ঘটনার পরদিন ৮ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে প্রাচ্যের ভূখণ্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
জাপানের বিপর্যয় : ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতি জাপানের প্রতিকূলে যেতে থাকে। ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে প্রাচ্যের বিভিন্ন রণভূমিতে জাপান পরাজিত হতে থাকে। ১৮ ডিসেম্বর বার্মা জাপানের হাতছাড়া হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে মিত্রশক্তি রেঙ্গুন দখল করে নেয়। জাপানকে আত্মসমর্পণের জন্য চরমপত্র পাঠালেও জাপান তা অস্বীকার করে।
পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ : ইউরোপে যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরেও প্রাচ্য ভূখণ্ডে মিত্রশক্তি ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। অতঃপর দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে আত্মসমর্পণ করা ব্যতীত জাপানের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। ২ সেপ্টেম্বর জাপান আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে।
এইভাবে জাপানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে প্রাচ্যের ভূখণ্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
সীমাবদ্ধতা : ফরাসি বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সের রাজনীতিতে নারীদের বিশেষ কোনো অধিকার ছিল না। সমাজে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আইনগত প্রাধান্য ছিল অনেক বেশি। তাদের কোনোরূপ রাজনৈতিক ক্লাব গঠনের অধিকার ছিল না। ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের নারী সমাজের মনোজগতে চরম আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে তারা রক্ষণশীলতার বন্ধন ছিন্ন করে পুরুষদের সঙ্গে বিদ্রোে শামিল হয়।
কিন্তু ফরাসি বিপ্লবে যোগদান করলেও নারীরা যে তাদের প্রতি পদক্ষেপেই সফলতা অর্জন করেছিল তা নয়। তৃতীয় এস্টেটের অধীনস্থ নারীরা পরোক্ষভাবেও এস্টেট জেনারেলে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারত না। তবে এসময় তারা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার লাভ করেছিল। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নারী সংঘ গঠিত হলেও মেরি আঁতোয়ানেত-এর দুর্ব্যবহারের কারণে পুরুষ সমাজ নারী আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। এছাড়া আইন প্রণয়নে নারীদের সমানাধিকার ছিল না। তারা পুরুষদের সঙ্গে সংঘ গঠনের দিক দিয়েও যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল। নারীদের অধিকার ও দাবিদাওয়া বাস্তবায়িত না হওয়ায় নারীরা প্যারিসে বিপ্লবী প্রজাতন্ত্রী নারী সমিতি গঠন করেন।
এছাড়া ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে নারীরা স্বাধীন ব্যাবসা ও চলাফেরা, রাজনৈতিক ক্লাব গঠন, পিতামাতার অনুমতি ছাড়া বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করা প্রভৃতি অধিকার লাভ করলেও তা শুধুমাত্র অভিজাত সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
(ii) ঊনবিংশ শতকের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ঐক্যবদ্ধ জার্মানির আত্মপ্রকাশ। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে জার্মানি ৩০০টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে ৩৯টি রাজ্যে পরিণত করে ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন’ (১৮০৬ খ্রিস্টাব্দ) গঠন করেন। এর দ্বারা জার্মানবাসীর মনে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং তারা ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যায়।
জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন অটো ভন বিসমার্ক। তিনি ছিলেন প্রখর বুদ্ধিমান, একরোখা ও চরমপন্থী। তিনি প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ।
বিসমার্কের কূটনীতি : জার্মানির ঐক্যসাধন বিষয়ে বিসমার্কের কূটনীতির দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখযোগ্য o তিনি কেন্দ্রীয় – আইনসভায় অস্ট্রিয়ার মর্যাদা নষ্ট করে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির সংগঠনে সচেষ্ট হন, ও তিনি ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদন করে ফ্রান্সের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন, ও পোলদের বিদ্রোহ দমনে রাশিয়াকে সাহায্য করে বিসমার্ক রাশিয়ার আস্থা অর্জন করেন।
রক্ত ও লৌহ নীতি (Blood and Iron Policy) : রক্ষণশীল রাজতন্ত্রের ঘোর সমর্থক বিসমার্ক মনে করতেন, প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনেই জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর তাঁর আস্থা ছিল না। তিনি বলেন যে, বক্তৃতা দিয়ে বা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রস্তাব পাস করিয়ে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না, এর জন্য গ্রহণ করতে হবে রক্ত ও লৌহ নীতি (Blood and Iron Policy)। রক্ত ও লৌহ নীতি হল সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা। সামরিক শক্তির দ্বারাই জার্মানির ঐক্যলাভ সম্ভব এ কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। শেষ পর্যন্ত সামরিক শক্তির সাহায্যে তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনটি যুদ্ধ হল – @ ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ, ও অস্ট্রো-প্রাশিয় যুদ্ধ, ও ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় যুদ্ধ।
ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ : জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি প্রথমে ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। স্লেজউইগ ও হলস্টাইন প্রদেশ দুটি ছিল জার্মানির সীমানার মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু ডেনমার্কের রাজা এই দুটি প্রদেশ ভোগ করত। তিনি এই দুটি প্রদেশ দখলের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য আন্দোলন শুরু করেন। অস্ট্রিয়ার রাজাকে বুঝিয়ে উভয়ে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্ক আক্রমণ করেন। ডেনমার্ক এই যুদ্ধে পরাজিত হয়। গ্যাস্টিনের সন্ধির (১৮৬৫) মাধ্যমে প্রাশিয়া পায় স্লেজউইগ এবং অস্ট্রিয়া হলস্টাইন-এর অধিকার। এভাবে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের প্রথম ধাপে বিসমার্ক জয়লাভ করেন।
স্যাডোয়ার যুদ্ধ : বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইউরোপীয় রাজনীতিতে তাকে মিত্রহীন করার প্রস্তুতি শুরু করেন। পোল বিদ্রোহে (১৮৬৬) প্রাশিয়া রাশিয়াকে সাহায্য করেছিল। ইটালিকে অস্ট্রিয়ার নিকট থেকে ভেনেসিয়া দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিজের পক্ষে টানেন। ফ্রান্স জার্মানির কিছু ভূখণ্ড লাভ করতে পারে এই আশায় নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর ইটালি, ফ্রান্স, রাশিয়া, প্রাশিয়া একতাবদ্ধ হয়ে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধ স্যাডোয়ার যুদ্ধ (১৮৬৬) নামে পরিচিত। সাত সপ্তাহের এই যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হয়। প্রাগের সন্ধি দ্বারা এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এইভাবে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে বিসমার্ক সফল হন। তিনি জার্মান রাষ্ট্রসংঘ গঠন করেন।
সেডানের যুদ্ধ : দক্ষিণ জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে এবার ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য ছিল। অস্ট্রিয়া, ইটালি ও রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে তিনি যুদ্ধের অজুহাত খুঁজছিলেন। স্পেনের সিংহাসনের দাবিদার নিয়ে সেই সুযোগও এসে গেল। স্পেনের সিংহাসনে যাতে হোহেনজোলান বংশের কেউ না বসে – এই প্রতিশ্রুতি লাভের জন্য ফ্রান্সের রাজা তৃতীয় নেপোলিয়ন তাঁর দূত বেনিদিতিকে প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়মের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এই সংবাদ তিনি তার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে এমস্ শহর থেকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। বিসমার্ক পরের দিন সংবাদপত্রে টেলিগ্রামের কয়েকটি ভাষা বাদ দিয়ে এমনভাবে প্রকাশ করেন যার অর্থ ছিল যে ‘প্রাশিয়ার রাজা ফ্রান্সের দূত বেনিদিতিকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এর ফলে ফ্রান্সের সঙ্গে প্রাশিয়ার (জার্মানির) যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধ ‘সেডানের যুদ্ধ’ (১৮৭০) নামে পরিচিত। সেডানের যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয়। ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধির দ্বারা এই যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটে।
এইভাবে দীর্ঘকাল ধরে শতবিভক্ত জার্মানজাতিকে ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’ প্রয়োগ করে ঐক্যবদ্ধ করেন বিসমার্ক। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জার্মানির সুবৃহৎ শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় তাঁরই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুবাদে।
বিসমার্কের রাজনৈতিক কৌশল রক্ত ও লৌহ নীতি নামে পরিচিত।
(iii) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কায় বিধ্বস্ত ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের কাছে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অর্থনৈতিক মহামন্দা এক অশনি সংকেত বহন করে আনে। এই মহামন্দার ফলে সমগ্র ইউরোপ অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই ভয়ানক আর্থিক সংকটের ফলে সমগ্র ইউরোপে সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় অনেকদিন পর্যন্ত ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অজানাই ছিল।
গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতা : এইরূপ সংকটময় পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় জনগণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে চরমপন্থামূলক রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় পুঁজিবাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে সমাজতন্ত্রের পথ অবলম্বন করে।
আর্থিক অবনমন : ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে একমাত্র রাশিয়া ব্যতীত প্রায় সমস্ত দেশই মহামন্দার কবলে পড়েছিল। বিভিন্ন দেশের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সরকারের আর্থিক পরিকাঠামো ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।
বাণিজ্যের ধ্বংসসাধন : বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি তুলে নিতে থাকে। সরকার বাধ্য হয় তার ব্যয় সংকোচন করতে এবং কর বৃদ্ধি করতে। মহামন্দার ফলে ইটালি শুল্ক সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করে দেশের আর্থিক কাঠামোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আন্তর্জাতিক ব্যাবসাবাণিজ্য হ্রাসের ফলে কারখানা বন্ধ হতে থাকে।
দ্রব্যমূল্য হ্রাস : কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায় যার ফলস্বরূপ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
বেকারত্ব বৃদ্ধি : মহামন্দার প্রভাবে ইউরোপের দেশগুলিতে বেকারের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইটালি, জার্মানি প্রভৃতি দেশে এই বেকারত্ব এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এই অন্ধকারময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতির প্রাঙ্গণে আবির্ভূত হয়েছিলেন হিটলার, মুসোলিনির মতো একনায়কতান্ত্রিক নেতারা।
ফ্যাসিবাদের উত্থান : মহামন্দার যুগে শ্রমিক আন্দোলন ধ্বংস হওয়ার জন্য ইটালিতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেয়। রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয় মনে করেন, একচেটিয়া পুঁজিবাদের সংকট থেকেই ফ্যাসিবাদের জয়। আবার পণ্ডিত অটো বয়ার-এর মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে বুর্জোয়াদের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটায় তারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করতে শুরু করে। বহু হতাশাগ্রস্ত মানুষ উগ্র জাতীয়তাবাদী মতবাদ প্রচার করেন। মধ্যবিত্ত ও কৃষক শ্রেণির মানুষরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্র ত্যাগ করে ফ্যাসিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। পুঁজিপতিরা মুনাফা হ্রাস পাওয়ার আন্দোলনকে দমন করে শোষণের দ্বারা আরো বেশি মুনাফা লাভের জন্য – ফ্যাসিবাদের সমর্থক হয়ে ওঠেন। রজনীপাম দত্ত তাঁর ‘ফ্যাসিজম . . . অ্যান্ড গ্রন্থে বলেন স্পেশ্যাল ফলে শ্রমিক সর্বহারা বিপ্লবকে পরাজিত করার এক হিংস্র রেভোলিউশন’ প্রয়াস হল ফ্যাসিবাদ। ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট ইটালিকে যে সংকটের মধ্যে ফেলেছিল, তার বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে।
নাৎসিবাদের উত্থান : জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দলের উত্থানের ক্ষেত্রে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার যথেষ্ট প্রভাব ছিল
ঋণ পাওয়া বন্ধ হওয়া : মহামন্দার ফলে মার্কিনি ঋণ পাওয়া থেকে জার্মানি বঞ্চিত হলে সারা দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। অর্থাভাবে জার্মানি ক্ষতিপূরণের কিস্তি শোধ এবং অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের কাজে ব্যর্থ হয়।
শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষতি : মহামন্দার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জার্মানি থেকে বিদায় নিলে জার্মানির শিল্পোৎপাদন এবং বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জার্মানির বহু কলকারখানার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
বেকারত্ব : শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে জার্মানির বেকার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট হয়ে ওঠে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল ৩০ লক্ষ।
দুর্দশাগ্রস্ত জীবন : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, অনাহার প্রভৃতি কারণে জার্মানির সাধারণ নাগরিকদের জীবন দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
হিটলারের নেতৃত্ব : এইরূপ চরম অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জার্মানবাসীরা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ওপর প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগেরই সদব্যবহার করে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দল জার্মানির ক্ষমতা লাভ করে।