Bantra MSPC High School
১.১ ‘হিমালয় দর্শন’ ভ্রমণ বৃত্তান্তটি মূল যে রচনার অন্তর্গত, তা হল – (ঘ) কূপমণ্ডুকের হিমালয় দর্শন। ১.২ …যেন বলে, আমায় দেখ, আমায় দেখ।” – বক্তা হল – (গ) প্রতিটি পাহাড়ের ঝরনা।
১.৩ ‘হলাহল’ শব্দের অর্থ হল – (ক) বিষ। ১.৪ “ওরে ও তরুণ ঈশান!” ‘ঈশান’ শব্দের অর্থ হল – (গ) মহেশ্বর।
১.৫ “বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া” ‘বাঙালি সাধক’ হলেন – (খ) জগদীশ চন্দ্র বসু।
১.৬ অন্ধকার কর্দমময়, পিচ্ছিল পথ দিয়ে আসার সময় রাধারাণীর ঘাড়ের উপর যিনি পড়েছিলেন, তার নাম – (ঘ) রুক্মিণীকুমার রায়।
১.৭ ‘কাগজটায় চোখ বুলাইতে ছিলাম।’ — কাগজটি হল – (গ) পরীক্ষার সম্ভাব্য রেজাল্ট।
১.৮ প্রোফেসর শঙ্কুর সর্বপ্রথম আবিষ্কার হল – (ক) মিরাকিউরল।
১.৯ প্রোফেসর শঙ্কুর বাবার নাম – (খ) ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু।
১.১০ স্বর্ণপর্ণীর গুণাগুণ যার ওপর প্রথম প্রয়োগ হয় – (ক) জয়গোপাল মিত্র।
১.১১ একটি শব্দের যতটুকু অংশ এক ঝোঁকে উচ্চারিত হয় তাকে
বলে – (ক) অক্ষর। ১.১২ বর্গের পঞ্চম বর্ণগুলি হল – (গ) নাসিক্য ব্যঞ্জন।
১.১৩ ‘বাঙ্ময়’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হবে – (খ) বাক্ + ময়।
১.১৪ ধাতুর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যয়কে বলে – (খ) কৃৎ প্রত্যয়।
১.১৫ ‘পিতা’ ও ‘মাতা’ শব্দদুটি – (খ) তৎসম শব্দ।
১.১৬ একটি বিদেশি শব্দের উদাহরণ – (ঘ) জরিমানা।
১.১৭ ‘একটা পাখির ঝাক মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল।’ – (খ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য।
১.১৮ ‘সে রোজ ফুল তুলত এটি – (গ) নিত্যবৃত্ত অতীত কাল।
২.১ নিম্ন উপত্যকায় নির্মল শ্বেত কুজ্ঝটিকা দেখে হঠাৎই লেখিকার নদী বলে ভ্রম হয়।
২.২ পার্বত্য প্রদেশে কূপ, পুকুর বা নদী না থাকায় জলপ্রাপ্তির একমাত্র উৎস ছিল ঝরনা বা জলপ্রপাত, তাই নির্ঝরের জলকে সবে ধন’ বলা হয়েছে।
২.৩ ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাড়ির কর্তা নিজের ঘরটিকে ‘বিনি পয়সার হোটেল’ বলে উল্লেখ করেন।
২.৪ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পে হেডমাস্টারমহাশয় তাঁর কথা না শোনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
২.৫ সংসার পৃথক হওয়ার সময় চন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন বাড়ির অর্ধেক, কয়েক বিঘা জমি ও কিছু বাসন।
২.৬ ‘খেয়া’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া চিরদিন চলে’ এই উদ্ধৃতাংশটির মাধ্যমে জীবনের চিরন্তন চলনকেই ইঙ্গিত করেছেন।
২.৭ ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের শেষাংশ থেকে অনুমান করা যায় ট্রাজিক চরিত্র শোভন আসলে সোমেশ নিজেই। তার নিজের জীবনেই নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত এক বেদনাদায়ক ভয়ংকর ঘটনা থাকায় সে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে মনোযোগ দেয়নি।
২.৮ টিক্ড়ীবাবা হলেন একজন সাধু। তিনি উশ্রী নদীর ওপারে একটা গ্রামে গাছতলায় বসে ধ্যান করেন। সেখানে বহুলোক তাঁর দর্শন করতে যায়।
২.৯ টিড়ীবাবার কথানুযায়ী কসৌলি থেকে তিন কোশ উত্তরে ভগ্ন চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে অবস্থিত ঝরনার পাশে পাওয়া যায় স্বর্ণপর্ণী গাছ।
২.১০ সাপার হল রাতে শোওয়ার আগে হালকা ভোজন ।
২.১১ যৌগিক স্বর-এর উদাহরণ হল ওই > ঐ, ওউ > ঔ।
২.১২ সমুদ্র > সমুদ্দুর – এটি মধ্যব্যঞ্জনাগম-এর দৃষ্টান্ত।
২.১৩ বাংলায় ব্যবহৃত কয়েকটি সংস্কৃত উপসর্গের উদাহরণ হল – প্র, পরা, সম্, অতি, উপ, অনু ইত্যাদি।
২.১৪ তৎসম, তদ্ভব, দেশি বা বিদেশি যে-কোনো একটি শব্দের সঙ্গে অপর শব্দ, উপসর্গ কিংবা প্রত্যয় যোগ হয়ে যেসব নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে বলে সংকর শব্দ। যেমন— তৎসম ও তদ্ভব : মায়াকান্না, বিদেশি ও তৎসম : হেডপণ্ডিত।
২.১৫ দুটি পারস্পরিক সর্বনাম পদের উদাহরণ হল – (ক) আপনাআপনিই ঝগড়া মিটে গেছে। (খ) পরস্পর সদ্ভাব বজায় রেখে চলাই ভালো।
২.১৬ প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া অন্যকে দিয়ে করানো বা সংঘটন বোঝায় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বা প্রেষণাত্মক বা নিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন— শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
২.১৭ প্রশ্নবাচক বাক্য তৈরির জন্য প্রশ্নবাচক বিশেষণ পদের প্রয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন— কেউ কি নরেনকে চেনো? কেমন করে এ কথা বলছ তুমি?
২.১৮ শব্দ ও পদের পার্থক্য :
(ক) একাধিক ধ্বনি মিলিত হয়ে ধ্বনির চেয়ে বৃহত্তর অর্থপূর্ণ একক গড়ে তুললে তাকে শব্দ বলে। শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহারের যোগ্যতা লাভ করলে, তাকে পদ বলে।
(খ) শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়।, উপসর্গ পদের সাথে শুধু নির্দেশক ও বিভক্তি যুক্ত হয়।
৩.১ গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে উদ্ধৃত উক্তির বক্তা হলেন নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা।
নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটিকে তার বাবা প্রায়শই রাত করে বাড়ি ফেরার জন্য একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেন এবং ছেলেটিও তৎক্ষণাৎ গৃহত্যাগ করে। এই ঘটনার জন্য ছেলেটির মা রাত থেকে কান্নাকাটি শুরু করেন ও খাওয়া দাওয়া ত্যাগ করেন। এমনকি ছেলেটির বাবা পরদিন সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরেও দেখেন সেই একই দৃশ্য, মায়ের অবস্থা গুরুতর অথচ গুণধর পুত্র তখনও বাড়ি ফেরেনি। তখন ছেলেটির বাবা সিদ্ধান্ত নেন খবরের কাগজের অফিসে গিয়ে ছেলের নিরুদ্দেশ-এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার। এই ঘটনাটিকেই আলোচ্য গল্পে অশান্তি বলা হয়েছে।
৩.২ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হল কাহিনির মূল চরিত্র রাধারাণী।
মাহেশের রথ দেখে ফেরার সময় রাধারাণীর মুখে তার দুঃখ ও দারিদ্র্যের কথা শুনে রুক্মিণীকুমার রায়, রাধারাণীর থেকে তার বিক্রি না হওয়া মালাগুলো কিনে নেন এবং চারিপয়সা বলে তাকে টাকা দিয়ে দেন সাহায্য করার জন্য। তখন সেখানে অন্ধকার থাকায় রাধারাণী সেটা টাকা না পয়সা বুঝতে পারেনি। ঘরে গিয়ে প্রদীপের আলোয় যখন সে দেখল সেটা আসলে টাকা যা তার মালার দামের চেয়ে অনেকটা বেশি তখন সেটা ফেরত দিতে গিয়ে দেখে সেই ব্যক্তি সেই স্থান ত্যাগ করে চলে গেছেন। তখন সে তার মাকে এই কথাগুলো বলেছিল।
৩.৩ সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হল পদ্মলোচন, যাকে রাধারাণীরা তার পিতার সময় থেকে চিনত।
দোকানে নগদ পয়সা দিয়ে রাধারাণীর জন্য আগন্তুকের কেনা শাড়িটি যখন পদ্মলোচন সাহা রাধারাণীকে পৌঁছে দিতে এসেছিল তখনই সে জানতে পেরেছিল এই বিষয়টি রাধারাণীদের অজানা, তখন সে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল। কারণ সে অনুমান করেছিল আগন্তুক ব্যক্তি হয়তো রাধারাণীদের কুটুম্ব।
৩.৪ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির অতীত থেকে প্রবাহিত জীবন ইতিহাস বর্ণনাসূত্রে উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন সময়ে মহামারি এবং দুর্ভিক্ষে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। বিজ্ঞান বা সমাজের কোনো ক্ষমতা ছিল না তা প্রতিরোধ করার। কিন্তু বাঙালি তার আত্মবলে মন্বন্তর ও মহামারির প্রকোপ জয় করে সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছিল। সমাজকে নতুন প্রাণশক্তি দান করেছিল।
৩.৫ প্রশ্নে প্রদত্ত অংশটি ‘ছন্দের জাদুকর’ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা বাঙালির মহিমা প্রচারক ‘আমরা’ কবিতা থেকে সংগৃহীত হয়েছে। সন্ন্যাসী নরেন্দ্রনাথ দত্ত বিবেকানন্দ নাম নিয়ে আমেরিকার শিকাগো শহরে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর Parliament of Religions-এ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। শিকাগো বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে জগৎকে চমৎকৃত করেন। তাঁর বেদান্ত সম্বন্ধীয় বক্তৃতায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বহু নরনারী তাঁর বক্তব্য ও ধর্মমতে আকৃষ্ট হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর এই বিশ্বখ্যাতিকে কবি বলেছেন— ‘বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়’।
৩.৬ বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম তাঁর ভাঙার গান’ কবিতায় উদ্ধৃত প্রশ্নটি রেখেছেন অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বীর ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে।
যেখানে ‘কাল-বোশেখি তার ভয়ংকর প্রলয়লীলা শুরু করেছে, সেখানে চুপচাপ বসে সময় না কাটিয়ে বন্দি বিপ্লবীদের প্রতি কবি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের ভয়ংকর শক্তির সাহায্যে অত্যাচারী ইংরেজদের ভীম কারাগারের ভিত নাড়িয়ে দেয়।
৩.৭ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা গল্পের প্রধান চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কু।
“প্রোফেসর শঙ্কু উক্তিটি করেছিলেন গেস্টাপো-এর সৃষ্টিকর্তা হেরমান গোয়রিং-এর উদ্দেশে, নাৎসি পার্টিতে হিটলারের পরেই যার স্থান। নাৎসিরা ইহুদিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছিল। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাননি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক, ভারততাত্ত্বিক হাইনরিখ স্টাইনারও। তাই প্রোফেসর শঙ্কু শর্ত দিয়েছিলেন যে, ওষুধ তিনি তখনই দেবেন যদি হের্ গোয়রিং হাইনরিখ স্টাইনার ও তার ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্যারিস যাওয়ার সময় কোনোরকম বাধা না দেয়।
৪.১ উদ্ধৃতাংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় খেয়া নৌকায় যাত্রীদের গমনাগমনের প্রসঙ্গে ‘ঘর’ শব্দটি এনেছেন। আলোচ্য কবিতায় উল্লিখিত নদী তীরবর্তী দুটি গ্রাম পরস্পর নিবিড় সম্পর্কে অন্বিত। খেয়া তরির যাত্রীদলের কেউ কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যত্র ঠিকানা খোঁজে, আবার অন্য দল আপন ঘরে ফেরে। ‘ঘর’ বলতে এখানে একইসঙ্গে জগৎসংসারকেও বোঝায়।
আলোচ্য কবিতায় জীবননদীর দুই কূলে গ্রাম দুইখানি দাঁড়িয়ে আছে জীবন-মরণের প্রতীক হয়ে। মানসচক্ষে কবি দেখেছেন এই খেয়া নৌকার যাত্রীদলই মানবের চিরন্তন বহমানতাকে নিশ্চিত করে চিরন্তনত্ব লাভ করেছে। মানুষের জীবনপ্রবাহ নদীর স্রোতের মতো ৷ যাত্রী সকলের পারাপারের সদৃশ খেয়া নৌকায় জীবনযাত্রীবৃন্দও ভেসে চলেছে জন্ম থেকে মৃত্যুর পানে। উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে জীবনের এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা দান করতে চেয়েছেন কবি।
৪.২ বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ভাঙার গান’ গীতিকায় ‘পাগলা ভোলা’ বলে বাহ্যিকভাবে মহাদেবকে সম্বোধন করলেও প্রকৃতপক্ষে ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বিপ্লবীদেরই এই আখ্যায়
ভূষিত করেছেন। ” আলোচ্য কবিতায় ‘পাগলা ভোলা’ অর্থাৎ বিদ্রোহীদের কবি “তরুণ ঈশান’ বলেও উল্লেখ করেছেন। ‘ঈশান’ কথাটির অর্থ মহেশ্বর বা শিব।
‘পথের দিশা’ কবিতায় কবি যেমন ‘ভাঙনদেব’-এর মতো কোনো ধ্বংসাত্মক শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন, একইরকমভাবে ‘ভাঙার গান’ কবিতাতেও দেবাদিদেব মহাদেবকে ‘পাগলা ভোলা’ সম্বোধনের অন্তরালে কবি অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি ভারতীয় বিপ্লবীদের মহাদেবের মতো প্রবল শক্তিধর হয়ে আবির্ভূত হতে বলেছেন। কবি সুন্দরের পূজারি। তিনি জানেন ধ্বংস না হলে কখনও নবসৃষ্টি হবে না। তাই কবি ভারতবর্ষের পরাধীনতার ধ্বংস চান। তাই গীতিকার প্রথমাংশে কবি ‘তরুণ ঈশান’-কে তার প্রলয়-বিষাণ বাজিয়ে এবং ধ্বংস নিশান উড়িয়ে প্রাচ্যের পরাধীনতার প্রাচীরকে ভেদ করতে বলেছেন—
“ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ ধ্বংস-নিশান, উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।”
পরবর্তী অংশে তিনি বিদ্রোহী মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে ‘পাগলা ভোলা’-র উদ্দেশে জানিয়েছেন, ‘পাগলা ভোলা’ যেন প্রলয় দোলা দিয়ে গারদগুলোকে জোরসে ধরে হ্যাঁচকা টানে বিনষ্ট করে। এইভাবে কবি ভারতবর্ষের অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সুন্দর সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ‘পাগলা ভোলা’-কে আহ্বান জানিয়েছেন।
৪.৩ দ্বাদশ শতকে কেন্দুবিল্বনিবাসী ভোজদের ও রামাদেবীর সন্তান হলেন জয়দেব। তাঁর পত্নী পদ্মাবতী। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম ছিলেন তিনি। ১১৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্য রচনা করেন। কৃষ্ণকথা নিয়ে রচিত এই কাব্য শুধুমাত্র পাঠক ও ভক্তদের গ্রহণযোগ্য তা নয়, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম চর্চার বিষয় এই ‘গীতগোবিন্দম্’।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় অগ্রজ কবির যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। কবি জয়দেব বাঙালি কবি না, ওড়িয়া কবি সেই বিষয় নিয়ে গবেষকদের মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো গবেষকদের মতে, তিনি গৌড়ের কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া, তাঁর কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্য বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট মিল রয়েছে। মনে করা হয় গৌড়ে মুসলিম অভিযানের পর তিনি সপত্নী উড়িষ্যায় প্রস্থান করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে বাঙালি কবি বলেছেন। ‘রবি’ যেমন তারাদলে প্রধান, কবি জয়দেবও তেমন সমকালীন কবিকুলে শ্রেষ্ঠত্বের আসন-অধিকারী। রবিতেজে বিশ্ব আলোকিত, জয়দেবের কাব্যে বাঙালিসহ সমগ্র ভারতীয় পাঠক ও ভক্তও বিমোহিত; রবি যেমন অবিনশ্বর, জয়দেবও তেমনই শাশ্বত। এ কথাগুলি বোঝাতেই কবি তাঁকে ‘বাংলার রবি’ আখ্যা দিয়েছেন।
কান্ত কোমল পদ’বলতে কবি জয়দেব রচিত ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যটিকে বুঝিয়েছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ। একে স্বয়ং জয়দেব ‘মধুর কোমল কান্ত পদাবলি’ বলে আখ্যাত করেছেন। ভারতবর্ষের কাব্যধারায় এই একটি কাব্যগুণেই জয়দেব চিরস্মরণীয়। এ কাব্য বৈয়বদের নিত্য আরাধ্য, সংগীতরূপে গেয়, পরম আকর গ্রন্থের মতো পূজিত। এই মধুর-কোমল-পদাবলির আদর্শে বাংলাদেশে, মিথিলায় ও অন্যত্র রাধাকৃষ্ণ পদাবলি ও অনুরূপ গীতিকবিতার ধারা প্রবাহিত হয়েছিল।
৫.২ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা গল্পের প্রধান চরিত্র রাধারাণী।
রাধারাণী মায়ের পথ্য কেনবার জন্য বনফুলের মালা গেঁথে মাহেশের রথের মেলায় বিক্রয় করতে গিয়েছিল। হঠাৎই প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যায়। ফলে মালা বিক্রয়ে ব্যর্থ হয়ে রাধারাণী বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকার রাতে যখন বাড়ি ফিরছিল, তখন অকস্মাৎ এক অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে সংঘর্ষে রাধারাণী উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে থাকে। সেই অচেনা ব্যক্তি যখন তাকে প্রশ্ন করে ‘কে গা তুমি কাঁদ?’ তখন তার উত্তরে রাধারাণী একথা বলেছিল।
মেয়েটির দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল কারণ আগন্তুক ব্যক্তি রাধারাণীর সঙ্গে কথোপকথনকালে তার অসহায়তার কথা জেনে তার মালাগুলি কিনে নেন এবং নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করেন। রাধারাণীর জন্য শাড়ি কিনে পাঠান এমনকি একটা নোটও ফেলে যান তাদের বাড়িতে। এই সমস্তই তিনি সচেতনভাবে করেন যাতে রাধারাণীর উপকার হয়। তাঁর দেওয়া দানে যথার্থই রাধারাণীর উপকার হয়। রাধারাণী অসুস্থ মায়ের জন্য পথ্য জোগাড় করতে পারে, প্রদীপ জ্বালার জন্য তেলও কিনতে পারে।
৫.৩ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পে সোমেশের গল্পানুযায়ী শোভন নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়ার পর নিজ বাড়িতে ফিরে এসে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। দীর্ঘ দু-বছরের অদর্শনে এবং বিজ্ঞাপন হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় সে বিচলিত ছিল। তার ওপর সেরেস্তার কর্মচারীরা কেউই তাকে চিনতে পারেননি। অস্তিত্বহীনতা থেকেই এমন কাতর আবেদন করেছিল সে।
শোভন নিরুদ্দেশ হওয়ার পর প্রায় দু-বছর কেটে গেছে। কিন্তু বাড়ি ফিরেই সে ভয়ংকর জটিলতার মধ্যে পড়ে, এমনকি বাবা-মায়ের সঙ্গেও দেখা করার অনুমতি পায় না। সেরেস্তার কর্মচারীরা তাকে বাধা দিয়েছিল, কারণ—
দৈহিক পরিবর্তন : দীর্ঘ দু-বছর ধরে শোভন নিরুদ্দেশ। ফলস্বরূপ দু-বছরের নানা ঝড়ঝাপটা তার দৈহিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল অনেকটাই। তাই নায়েবমশাই, খাজাঞি মশাই, অন্যান্য কর্মচারী তাকে চিনতে পারেননি, এমনকি তার বাবাও তাকে চিনতে পারেন না।
সংশয় : শোভন বাড়ি ফেরার আগে দুজন শোভনের নাম নিয়ে তার বাড়িতে আসে সম্পত্তির লোভে। এমনকি তাদের একজনের সঙ্গে শোভনের ডান কানের কাছে থাকা জঙুলেরও পর্যন্ত মিল ছিল। কিন্তু তারা সবাই ছিল মিথ্যেবাদী। তাই সত্যকারের শোভনকে সবাই মিথ্যেবাদী সন্দেহ করে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেয়।
শোভনের মৃত্যুসংবাদ : শোভন বাড়ি ফেরার সাতদিন আগে তারই মৃত্যুসংবাদ বাড়িতে আসে। খবর আসে শোভন মারা গিয়েছে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে অপঘাতে। এমনকি হাসপাতালের ডাক্তারের বর্ণনার সঙ্গেও সবকিছু মিলে যায়।
৬. বাংলা কিশোর সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে কল্পচরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর সর্বরোগনাশক ‘মিরাকিউরল’ ওষুধ আবিষ্কারের আশ্চর্য সুন্দর বর্ণনা করেছেন।
প্রোফেসর শঙ্কু পেশায় ছিলেন অধ্যাপক এবং তাঁর নেশা ছিল গবেষণা। বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি তাঁর কাছ থেকে টিকড়ীবাবার এক আশ্চর্য কাহিনি শোনেন। তাঁর বাবার কাছে টিক্ডীবাবা শ্বাসকষ্টের ওষুধ নিতে এসে তাঁর বাবার কঠিন অসুখের চিকিৎসার কথা জানাতে গিয়ে এক কাহিনি বলেন। তিনি যখন কাশীতে ছিলেন, তখন তাঁর কঠিন পাণ্ডুরোগ হয়। কিন্তু তাঁর গুরুদেব সোনেপত্তীর দুটো শুকনো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে রাতে তাঁকে খাইয়ে দিতে তিনি উপশম পান। এই পাতা পেতে হলে যেতে হবে কসৌলি। সেখান থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে এক চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনে জঙ্গলের পাশের এক ঝরনার ধারেই জন্মায় সোনেপত্তী।
বাবার মুখে এ কাহিনি শুনে শঙ্কু সোনেপত্তী আনতে চাইলে মৃত্যু পথযাত্রী বাবা বারণ করেন। এর ঠিক দু-দিন পরেই তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তিনি কসৌলির উদ্দেশে রওনা দেন। আড়াই দিন লাগে গিরিডি থেকে কালকা পৌঁছোতে। সেখানে গিয়ে এক হোটেলের ম্যানেজার নন্দকিশোর রাওয়ালকে জিজ্ঞাসা করে শঙ্কু চামুণ্ডার মন্দিরের ঠিকানা নেন। নন্দকিশোরই তাঁকে ঘোড়ার ব্যবস্থা করে দেন। ঘোড়ার মালিক ছোটেলাল সঙ্গে থাকেন। দু-জন মিলে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেন এবং শঙ্কু স্বর্ণপর্ণী দেখতে পান। ছোটেলাল গাছড়াটিকে শিকড়সুদ্ধ তুলে শঙ্কুর হাতে দেন।
তিনদিন পরে বাড়ি ফিরে শঙ্কু মালি হরকিষণকে গাছটি পরিচর্যার দায়িত্ব দেন। তাঁর ওষুধটা প্রয়োগ করার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই আজন্ম গিরিডিবাসী উকিল জয়গোপাল মিত্রের গুরুতর অসুস্থতায় সেই ওষুধ প্রথম প্রয়োগ করেন। জয়গোপাল মিত্র পরের দিনই সুস্থ হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে বাগানের দক্ষিণদিকে আরও এগারোটি স্বর্ণপর্ণীর গাছ গজায়। শঙ্কু ঠিক করেন শুকনো পাতা গুঁড়িয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার চেয়ে বড়ি তৈরি করে নেওয়া শ্রেয়। সেই অনুযায়ী তিনি বড়ি তৈরি করেন, নাম দেন ‘মিরাকিউরল’ অর্থাৎ ‘মিরাল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস’।