প্রাবন্ধিক যা বলেছেন
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী-ই প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বলেছেন।
শেলি-কীট্স, গ্যোটে-হাইনে, হাফিজ-আত্তার, কালিদাস-জয়দেব, গালীব-জওক প্রমুখ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সাহিত্যিকগণের কবিতা ও গানের রসাস্বাদন করে সৈয়দ মুজতবা আলী ধন্য হয়েছেন এ কথা সত্য। কিন্তু তদুপরি, রবীন্দ্রপ্রতিভা ও গীতিরস তাঁর মনোজগতে এনে দিয়েছে এক অন্য মাত্রার মুগ্ধতা।
সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের আস্বাদ গ্রহণের পরেও, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসৃষ্টির কাছেই পরমতৃপ্তি অনুভব করে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী বারবার স্মরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথেরই ‘পুরস্কার’ কবিতার লাইন-
"এমনটি আর পড়িল না চোখে আমার যেমন আছে।"
তাৎপর্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের ‘পুরস্কার’ কবিতায় কবি-রমণীর বয়ানে এই পঙ্ক্তিটি শোনা যায়।
কবিকে রাজদরবারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে, তাকে পথমাঝে সকলের মধ্যে দেখে মনে মনে গর্বিত কবি-স্ত্রী এই মন্তব্যটি করেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলীও সমগ্র বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের তুলনা খুঁজে পাননি, বিশ্বসাহিত্যের রস গ্রহণ করে তিনি ধন্য হয়েছেন বটে কিন্তু তৃপ্ত হয়েছেন কেবল রবীন্দ্র-গীতিরস আস্বাদন করেই। রবীন্দ্র-গুণমুগ্ধ প্রবন্ধকার তাই এই পঙ্ক্তিটি স্মরণ করেছেন।
বলার কারণ
বহু ভাষায় দক্ষ মুজতবা আলী বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। শেলি, কীট্সের ইংরেজি কবিতা; গ্যোটে, হাইনের জার্মান কবিতা; হাফিজ, আত্তারের ফারসি গজল; কালিদাস, জয়দেবের সংস্কৃত কাব্য; গালিব, জওকের ফারসি-উর্দু গজলের রসাস্বাদ করে লেখকের জীবন ধন্য হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের অখন্ড ও সম্পূর্ণ রূপ আর অভূতপূর্ব ব্যঞ্জনা অন্যত্র কোথাও বক্তার চোখে পড়েনি। তাই প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথের আলোচ্য পঙ্ক্তিটি বার বার স্মরণ করেছেন আর বক্তা এখানে ‘আমার’ বলতে কেবল নিজেকে নির্দেশ করেননি। তাঁর মতে, ‘আমার’ অর্থাৎ আমাদের বাঙালিদের আছে বাংলা ভাষায় লেখা রবীন্দ্রসংগীতের অতুলনীয়, অমূল্য সম্ভার।