নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা উল্লেখ করো

নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা উল্লেখ করো – আজকের পর্বে নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা আলোচনা করা হল।

নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা উল্লেখ করো

নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা উল্লেখ করো
নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য কী তা উল্লেখ করো

নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পার্থক্য

নীতিবিদ্যা এবং সমাজবিদ্যার মধ্যে যে একপ্রকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তা অস্বীকার করা যায় না। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, এই দুই প্রকার বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যও আছে। এদের পার্থক্যগুলি নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা যায়-

বিজ্ঞানের প্রকারে পার্থক্য

নীতিবিদ্যা ও সমাজবিদ্যা উভয়েই বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য হলেও এদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রকারগত পার্থক্য দেখা যায়। কারণ, নীতিবিজ্ঞানকে যেখানে একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানরূপে গণ্য করা হয়, সেখানে সমাজবিজ্ঞানকে একটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানরূপে গণ্য করা হয়। কারণ, বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের কাজ হল বস্তু বা ঘটনার যথাযথ বর্ণনা করা, তাদের কোনো মূল্যায়ন করা নয়। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান সমাজের উৎপত্তিস্বরূপ, সমাজের বিকাশের ধারা, সামাজিক গোষ্ঠী, সংঘ-প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করে। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে নীতিবিজ্ঞান সামাজিক ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকার আচার-আচরণের আদর্শগত মূল্যায়ন করে এবং সেগুলিকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিতের মাপকাঠিতে বিচার করে।

আচরণের প্রকারে পার্থক্য

নীতিবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান উভয়েই সামাজিক মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা করলেও, আচরণের প্রকারে বা প্রকৃতিতে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। কারণ, নীতিবিজ্ঞান সামাজিক মানুষের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে এবং সেগুলিকে ন্যায়- অন্যায়, ভালো-মন্দ প্রভৃতি নৈতিকতার মাপকাঠিতে বিচার করে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান গোষ্ঠী বা সমাজের সামগ্রিক আচার-আচরণ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে এবং সেগুলিকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করে ও তাদের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ করে। সুতরাং দেখা যায় যে, আচরণের প্রকৃতি বা প্রকারে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

জ্ঞানের প্রকৃতিতে পার্থক্য

নীতিবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান উভয়েরই কাজ হল সমাজ ও সমাজস্থ মানুষ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, জ্ঞানের প্রকৃতিতে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। কারণ সমাজবিজ্ঞান যে ধরনের জ্ঞানলাভ করে তা শুধু তত্ত্বমূলক বা তথ্যমূলক। কিন্তু নীতিবিজ্ঞান যে ধরনের জ্ঞানের কথা বলে, তা একদিকে তত্ত্বমূলকরূপে গণ্য এবং অপরদিকে সেগুলির ব্যাবহারিক প্রয়োগের কথাও বলে। অর্থাৎ নীতিবিজ্ঞান একদিকে যেমন তত্ত্বগত, অপরদিকে তেমনই ব্যাবহারিকরূপেও গণ্য। সুতরাং দেখা যায় যে, জ্ঞানের প্রকৃতিতেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

দৃষ্টিভঙ্গির প্রকৃতিতে পার্থক্য

নীতিবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য দেখা যায়। কারণ, নীতিবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি হল উদ্দেশ্যমূলক, কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি হল তথ্যমূলক। সত্য, শিব ও সুন্দর-এই তিনটি চরম ও পরম আদর্শকে সামনে রেখে নীতিবিজ্ঞান সামাজিক মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে এবং মানুষ যাতে এই আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত হয়, তার চেষ্টা করে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান শুধুমাত্র আদিকাল থেকে আরম্ভ করে বর্তমানকাল পর্যন্ত সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য হাজির করার চেষ্টা করে এবং সেগুলিকে ব্যাখ্যা করে।

পরিবর্তনের রীতিতে পার্থক্য

সবশেষে উল্লেখ করা যায় যে, পরিবর্তনের রীতিতেও নীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। কারণ সমাজবিজ্ঞানের ঘটনাগুলি যে-সমস্ত সামাজিক ঘটনার বর্ণনা দেয়, সেগুলি প্রায়ই পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোনো ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু নীতিবিজ্ঞান যে-সমস্ত নিয়ম বা আদর্শের কথা বলে, সেগুলি কিন্তু পরিবর্তনশীল নয়। কারণ, ভালো সবসময় ভালোই থাকে, আর মন্দ সবসময় মন্দই থাকে। আবার, সত্য, শিব ও সুন্দর রূপ আদর্শগুলি সবসময়ই আমাদের কাছে নমনীয় ও উজ্জ্বলভাবে বর্তমান।

Leave a Comment