পলিবিয়াস কে ছিলেন? তাঁর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে লেখো

ভূমিকা
গ্রিক বুদ্ধিজীবী পলিবিয়াস (খ্রিস্টপূর্ব ২০৪-১২২ অব্দ) সর্বপ্রথম রোমের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারের কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা করেন।
(1) রাষ্ট্রদর্শন: পলিবিয়াস ‘হিস্ট্রি অফ রোম’ (History of Rome) গ্রন্থে তাঁর রাজনৈতিক তত্ত্ব উপস্থাপিত করেন। তাঁর বক্তব্যে গ্রিক ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট। প্লেটো, অ্যারিস্টট্ল প্রমুখের রাষ্ট্রদর্শন মাথায় রেখেই তিনি রোমান রাষ্ট্রদর্শনের রূপরেখা এঁকেছেন।
(2) ত্রিবিধ রাষ্ট্রব্যবস্থা: পলিবিয়াস মনে করতেন যে সরকার তিন ধরনের হতে পারে-রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র।
(i) রাজতন্ত্রে স্বৈরাচারিতা শেষপর্যন্ত রাজার স্বেচ্ছাচারিতায় রূপান্তরিত হয়। তাই এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সামাজিক জাগরণ ও প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়। পরিণামে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং অভিজাততন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটে।
(ii) অভিজাততন্ত্র হল মুষ্টিমেয় মানুষের শাসন। তাই এঁরাও কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের ওপর শোষণ-পীড়ন চালান। তাই কালক্রমে এই শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটার সম্ভাবনা দৃঢ় হয়। এই গণপ্রতিবাদের সূত্রে আসে গণতন্ত্র।
(iii) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাতেও বিকৃতি আসা সম্ভব। এই কারণে জনগণের শাসন শেষপর্যন্ত উন্মত্ত জনতার অরাজকতায় পরিণত হয়।
(3) মিশ্র রাষ্ট্রব্যবস্থা: পলিবিয়াস উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী শাসনব্যবস্থার জন্য মিশ্র রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলেন। অর্থাৎ রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের ভালো দিকগুলির সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তাঁর মতে রোমে ধীরগতিতে হলেও এই ধরনের একটি মিশ্রিত রাষ্ট্রব্যবস্থার দিয়ে এগিয়ে গেছে। রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রকাশ ছিলেন কনসাল। সেনেট-এর সদস্যরা ছিলেন অভিজাততান্ত্রিক ধারার সৃষ্টি। অন্যদিকে রোমের গণসভা (Assembly)-গুলি ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। এইভাবে কনসাল, সেনেটর ও গণসভাগুলির মধ্যে একপ্রকার ভারসাম্যের নীতি কার্যকর হয়, যা স্থায়ী ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর