ভারতে সুলতানি আমলে ইক্তা প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো

ভূমিকা
ইসলামের আবির্ভাবের প্রায় সূচনাকাল থেকেই ইসলামীয় জগতে ইক্তা প্রথার প্রচলন ছিল। ভারতে এই প্রথা প্রবর্তন করেন সুলতান ইলতুৎমিস। এই ব্যবস্থা প্রায় সমগ্র সুলতানি যুগেই প্রচলিত ছিল। ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পিছনে দিল্লির সুলতানদের কতকগুলি উদ্দেশ্য ছিল। যথা-
(1) রাজকোশে আয় বৃদ্ধি: ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পিছনে সুলতানদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নতুন বিজিত অঞ্চলগুলি থেকে রাজস্ব আদায় করে রাজকোশের আয় বৃদ্ধি করা। এই রাজস্ব আদায় করত মাক্তি বা ইস্তাদাররা। ঐতিহাসিক মোেরল্যান্ড বলেছেন, “সুলতানি আমলে ছোটো ও বড়ো সকল ইক্তা থেকেই ভূমিরাজস্ব আদায় করা হত।”
(2) কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা: ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে সুলতানরা দূরবর্তী প্রদেশ বা এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন।
(3) আইন-শৃঙ্খলা ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা: ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে সুলতানরা দূরবর্তী প্রদেশ বা এলাকাগুলিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ছিল ইক্তাদারদের।
(4) অভিজাতদের সন্তুষ্টি বিধান: দিল্লির প্রথমদিকের সুলতানরা মুসলমান অভিজাতদের বিদ্রোহের আশঙ্কা করতেন। তাই ইক্তা বিলিবণ্টন করে তাঁদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতেন।
(5) সামরিক শক্তি বৃদ্ধি: প্রত্যেক ইক্তাদারকে রাজস্ব ভোগের বিনিময়ে সৈন্যবাহিনী পোষণ করতে হত। বিদ্রোহ কিংবা যুদ্ধের সময় তাঁকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সুলতানকে সাহায্য করতে হত। এইভাবে সুলতানরা তাঁদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন।
মূল্যায়ন
সবশেষে বলা যায় যে, রাজকোশের আয় বৃদ্ধি, দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অভিজাত শ্রেণির বিদ্রোহের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই দিল্লির প্রথমদিকের সুলতানরা এদেশে ইস্তা প্রথার প্রচলন করেছিলেন।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর