ক্রুসেডের পশ্চাতে রাজনৈতিক কারণ উল্লেখ করো

ভূমিকা
খ্রিস্টানরা তাদের পুণ্যভূমি জেরুজালেম তুর্কি মুসলমানদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়। মূলত ধর্মীয় কারণে ক্রুসেড সংগঠিত হলেও একাদশ শতকের নানা রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ক্রুসেডকে ত্বরান্বিত করেছিল।
(1) সেলজুক তুর্কিদের আক্রমণ: খলিফা ওমরের সময়ে প্রথম জেরুজালেমের ওপর আরবীয় মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় মুসলমানরা খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখেই চলত। কিন্তু একাদশ শতকে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের ফলে পরিস্থিতি পালটে যায়। ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক তুর্কিরা মেনজিকার্টের যুদ্ধে জয়লাভ করে জেরুজালেম দখল করে। তুর্কি মুসলমানরা খ্রিস্টানদের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। এরপর পরাজিত সম্রাট প্রথম আলেক্সিয়াস আরও ভয়ানক তুর্কি আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে পোপ দ্বিতীয় আরবানের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। পোপ তাঁর আবেদনে সাড়া দিলে ধর্মযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
(2) খ্রিস্টান রাজন্যবর্গের ব্যর্থতা: ইসলামের উত্থান ও দ্রুত প্রসার রাজনৈতিকভাবে খ্রিস্টানদের আধিপত্যকে ক্ষুণ্ণ করেছিল। একাদশ শতকে বিভিন্ন খ্রিস্টান রাজ্য মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল। খ্রিস্টান রাজন্যবর্গ রাজনৈতিকভাবে মুসলমানদের অগ্রগতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এমতাবস্থায় পোপ ধর্মযুদ্ধের ডাক দিলে এইসকল রাজন্যবর্গ তাঁর আহ্বানে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসেন।
(3) সামন্তব্যবস্থার ভূমিকা: মধ্যযুগে ইউরোপে সামন্তপ্রভুদের শোষণ ও অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এমনকি সম্পত্তির অধিকারকে কেন্দ্র করে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যেও প্রায়শই নানা যুদ্ধ-বিবাদ লেগে থাকত। ফলে পশ্চিম ইউরোপে এক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। পোপ এই রাজনৈতিক অস্থিরতাকে এড়াতে এবং তাদের সম্মিলিত শক্তিকে বিধর্মী মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে ধর্মযুদ্ধে শামিল করেছিলেন। তাই অধ্যাপক আরনেস্ট বার্কার বলেছেন, “ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল ইউরোপের সামন্তব্যবস্থা।”
(4) শাসকশ্রেণির আকাঙ্ক্ষা: ইউরোপের খ্রিস্টান রাজা ও সামন্তপ্রভুদের আকাঙ্ক্ষা ছিল ক্রুসেডের মধ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ও সম্পদ বৃদ্ধি করা।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায়, পোপ দ্বিতীয় আরবান রোমান সম্রাটের ওপর প্রভাব বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আবার সম্রাটও ভেবেছিলেন জেরুজালেম পুনরুদ্ধার হলে তাঁর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। রাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পেতে ফ্রান্সের বহু সামন্ত অভিজাতরাও দলে দলে ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এইভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর