ম্যানর ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান

ম্যানর ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান

অথবা, ম্যানর ব্যবস্থা সম্পর্কে টীকা লেখো

ম্যানর ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান
ম্যানর ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ম্যানর ব্যবস্থা। মার্ক ব্লখ ম্যানর ব্যবস্থাকে ‘সামন্ততন্ত্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

ম্যানর ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা জানা যায়। যথা-

(1) গঠন : সামন্তপ্রভুর অধীনস্ত গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠত ম্যানর ব্যবস্থা। প্রতিটি ম্যানরের মধ্যে থাকত কৃষি জমি, গোচারণভূমি, জঙ্গল, জলাভূমি এবং কৃষক, শ্রমিক, কারিগর ও ভূমিদাসদের ছোটো ছোটো বসতবাড়ি ইত্যাদি। এ ছাড়াও সামন্তপ্রভু ও তাঁর আত্মীয়পরিজন ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য থাকত দুর্গবেষ্টিত বিশাল ম্যানর হাউস।

(2) উৎপাদন: ম্যানর ছিল সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার মূলভিত্তি। ম্যানরে বসবাসকারী প্রজারা মূলত প্রভুদের উৎপাদনের কাজেই যুক্ত থাকতেন। ম্যানরের উৎপাদনের বেশিরভাগই আসত ভূমিদাস শ্রমের দ্বারা। প্রভুর জমির ওপর ভূমিদাসদের কোনোরূপ অধিকার ছিল না। প্রভুর জমিতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে বিনা পারিশ্রমিকে (বেগার শ্রম) চাষাবাদ করতে বাধ্য ছিল। দরিদ্র কৃষক ও ভূমিদাসদের কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও অংশগ্রহণ করতে হত।

(3) প্রশাসন: ম্যানরের প্রশাসনের সর্বেসর্বা ছিলেন ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভু। তবে ম্যানরের প্রশাসন পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি স্টুয়ার্ড, রিভি, বেইলিফ নামের কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ করতেন।

(4) সামন্তপ্রভুদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: ম্যানর ব্যবস্থার মাধ্যমে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুদের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ম্যানরের যাবতীয় উৎপাদন ভোগ করতেন ম্যানর প্রভুরা। ম্যানরগুলি ছিল প্রভুদের ভূমিদাস শোষণের মূলক্ষেত্র। ভূমিদাসরা ম্যানর ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করলে প্রভুরা তাদের ধরে এনে কঠোর শাস্তি দিতেন।

(5) স্বনির্ভরতা : ম্যানরগুলি ছিল স্বনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ ম্যানরের অধিবাসীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় সকল পণ্যসামগ্রী নিজেরাই উৎপাদন করত।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment