ইটালীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

ইটালীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

ইটালীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
ইটালীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইটালি তথা ইউরোপে  প্রথম রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূচনা হয়। রেনেসাঁ মধ্যযুগের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তিবাদ ও আধুনিক চিন্তার বিকাশ ঘটায়। এই নবজাগরণ বা রেনেসাঁকে প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুনরুদ্ধারের সঙ্গে নতুন আবিষ্কারের যুগ হিসেবেও গণ্য করা হয়।

(1) যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠা: মধ্যযুগে ইউরোপের সব কিছুই ছিল ধর্মভিত্তিক। গির্জা, পোপ ও ধর্মযাজকরাই ছিলেন সমাজ ও সভ্যতার ভাগ্যনিয়ন্তা। রেনেসাঁসের ফলে এই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও আনুগত্য ক্রমশই অবলুপ্ত হতে থাকে। তার বদলে যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটে।

(2) মানবতাবাদের প্রসার: নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ (humanism)। মানবতাবাদের মূলকথা হল ঈশ্বরকেন্দ্রিক ভাবনার পরিবর্তে মানবকেন্দ্রিক ভাবনার বিকাশ। মানবকেন্দ্রিক এই মতবাদের ধারক ও বাহকগণ মধ্যযুগীয় পরকাল ও পাপপুণ্যের হিসাবের পরিবর্তে ইহজীবনে মানুষের পার্থিব সুখস্বাচ্ছন্দ্য প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। মানবতাবাদে মানুষের জয়গান করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ, তার কৃতিত্ব এবং ক্ষমতার সঠিক মূল্যায়ন এবং তার চাওয়াপাওয়ার মূল্য দেওয়ার মানসিকতা এ যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়।

(3) ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি: মধ্যযুগে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। পোপতন্ত্র যেভাবে মানুষের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, এ যুগে ধীরে ধীরে তার অবসান ঘটতে থাকে। যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ আত্মনিগ্রহের বদলে আত্মমর্যাদার গুরুত্ব বুঝতে শেখে। ফলে মানুষের মধ্যে ধর্ম ও ব্যক্তিস্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয়।

(4) অনুসন্ধিৎসা: রেনেসাঁ মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটায়। ফলে মানুষের মনে অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ধর্ম-সব বিষয়েই নতুন জ্ঞানলাভের প্রচেষ্টা শুরু হয়। এই প্রচেষ্টা সত্যকে উন্মুক্ত করে এবং চার্চ, পোপ ও যাজক সম্প্রদায়ের কর্তৃত্বের প্রতি মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে থাকে।

(5) বৈজ্ঞানিক চেতনার বিকাশ : রেনেসাঁ মানুষের যুক্তিবাদী মনকে ধর্মের কঠোর বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। মহাবিশ্ব ও ধর্ম সম্পর্কিত নানা প্রাচীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যানধারণার বদলে এসময় প্রমাণসাপেক্ষ বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এইসকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানবসভ্যতার অগ্রগতির সূচনা করে।

(6) দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি: অনেক ঐতিহাসিকের মতে, নবজাগরণ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি ছিল দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি। কনস্ট্যান্টিনোপলে পণ্ডিতগণ প্রাচীন গ্রিক-রোমান সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শনের চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। দ্বাদশ শতক থেকে ইউরোপের নানা স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ইটালি তথা ইউরোপে নবচেতনার সৃষ্টি করে। এসবেরই ধারাবাহিক ফলশ্রুতি হল নবজাগরণ।

(7) সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: মধ্যযুগের ধর্মনির্ভর সাহিত্য ও শিল্প চর্চার পরিবর্তে নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতিচর্চা রেনেসাঁ যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ যুগে ধর্মের প্রভাবমুক্ত মানবতাবাদী সাহিত্য ও শিল্পচর্চা সার্বিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পরিবর্তন ঘটায় যা, আধুনিকতার দিনির্দেশ করে।

মূল্যায়ন

এইভাবে নবজাগরণ মানুষের জীবনচর্চার ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগ থেকে নতুন যুগের সূচনা করে।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment