অপরসায়নের সঙ্গে যুক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও

অপরসায়নের সঙ্গে যুক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও

অপরসায়নের সঙ্গে যুক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও
অপরসায়নের সঙ্গে যুক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও

ভূমিকা

প্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত যে যুক্তিহীন ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাহীন রসায়নবিদ্যার চর্চা ইউরোপে জনপ্রিয় ছিল, তাকে অপরসায়নবিদ্যা বা অ্যালকেমি বলে। এর সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি হল-

(1) জ্যোতিষচর্চা: জ্যোতিষ চর্চায় ব্যাবহারিক ধাতুগুলিকে পৃথক পৃথক গ্রহের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হত। পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত ইউরোপে অপরসায়ন ও জ্যোতিষচর্চা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ছিল। অপরসায়নবিদরা বিশ্বাস করতেন, জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন বিক্রিয়ার জন্য গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; নচেৎ তাঁরা সাফল্য পাবেন না।

(2) রহস্যবাদ: এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের গুপ্তশক্তি রয়েছে, যে শক্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানবসমাজ উপকৃত হবে তাঁরা মানুষের জীবনকে অমর করার গুপ্তসাধনায় মগ্ন থাকতেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। প্রকৃতির অজানা বিষয়গুলির মধ্যেকার রহস্যকে তাঁরা ধরতে চাইতেন।

(3) সর্বপ্রাণবাদ: পৃথিবীতে সকল বস্তুরই প্রাণ আছে-এই কাল্পনিক ধারণাই সর্বপ্রাণবাদীদের মূল প্রতিপাদ্য ছিল। অপরসায়নবিদরা মনে করতেন পৃথিবীর সব বস্তুর মধ্যেই মহাজাগতিক আধ্যাত্মিক শক্তির অংশ রয়েছে। তারা বিশ্বাস করতেন বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধাতুগুলিও আধ্যাত্মিকতার চরম সীমায় পৌঁছোয় এবং আরও মূল্যবান ধাতুতে পরিণত হয়।

(4) মূল্যবান ধাতু তৈরির চেষ্টা: সিসা বা অন্য কোনো সাধারণ ধাতুকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দ্বারা বহুমূল্য ধাতু বিশেষ করে সোনায় রূপান্তরিত করার নিরলস চেষ্টা করেছিলেন অপরসায়নবিদরা। এভাবেই বিভিন্ন অপরসায়নবিদ বিভিন্ন ধাতু আবিষ্কার করেন।

মূল্যায়ন 

সবশেষে বলা যায় যে, যুক্তি বা আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া না-থাকলেও আল আমিনি, অ্যালবার্ট ম্যাগনাস প্রমুখ অপরসায়নবিদদের চর্চার ফলেই পরবর্তীকালে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। অপরসায়নবিদরা নিম্নমানের ধাতুকে উচ্চমানের ধাতুতে পরিণত করতেন। নানা রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে রোগ নিরাময়ও করতেন। যদিও তাঁরা এগুলির কার্যকারণ ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। তথাপি এগুলি আধুনিক রসায়নবিদ্যার চর্চার অগ্রগতিতে সাহায্য করেছিল বলা যায়। তা ছাড়া মানুষের অমরত্ব লাভের জন্য অপরসায়নবিদদের নিরলস প্রচেষ্টা আসলে প্রাকৃতিক বস্তুগুলির ক্রিয়া-বিক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনাকেই তুলে ধরেছিল।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment