টীকা লেখো: কোপারনিকাস

ভূমিকা
রেনেসাঁ কালপর্বে ইউরোপে জোতির্বিদ্যা চর্চার অগ্রদূত ছিলেন নিকোলাস কোপারনিকাস। ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পোল্যান্ডের টোরান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মান্ডের ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে প্রথম মতামত প্রকাশ করেন বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস। নিজের জীবদ্দশায় তাঁর তত্ত্ব ব্যাপকভাবে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে না পারলেও পরিবর্তনের সূত্রপাতটা তিনি করতে পেরেছিলেন।
(1) সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মান্ডের ধারণা দান: প্লেটোর প্রাচীন ভ্রান্ত ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কোপারনিকাস বলেন যে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে অবস্থান করছে সূর্য এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহগুলি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে সর্বদা ঘুরে চলেছে। শুক্র ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে যে পৃথিবীর অবস্থান তাও কোপারনিকাস নির্দিষ্ট করে বলেন। সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘোরা ছাড়াও পৃথিবীর অপর একটি গতি রয়েছে, যে কারণে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়-এ ধারণাও তিনি ব্যক্ত করেন।
(2) গ্রন্থরচনা: কোপারনিকাস রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ‘ডি রেভলিউশনিবাস অরবিয়াম সেলেসটিয়াম’ (‘De Revolutionibus Orbium Caelestium’) ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর কয়েকমাস আগে প্রকাশিত এই গ্রন্থেই তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন সম্পর্কে বৈপ্লবিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। যদিও বহু আগে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তাঁর ‘কমেন্টারিওলাস’ গ্রন্থে তিনি – একই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছিলেন-তা ততটা প্রচারিত হয়নি।
(3) নতুন পঞ্জিকা রচনা: কোপারনিকাসের মতবাদের ভিত্তিতে ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার নতুন পঞ্জিকা রচিত হয়েছিল।
(4) উত্তরসূরিদের প্রেরণা: কোপারনিকাসের জীবিত থাকাকালীন সময়ে তাঁর সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব মানুষকে বিশ্বাস করানো কঠিন ছিল কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর পরবর্তীকালে ব্রুনো, টাইকো ব্রাহে, কেপলার প্রমুখ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই জ্যোতির্বিদ্যা চর্চাকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যান।
মূল্যায়ন
কোপারনিকাসের মাধ্যমেই আধুনিক ইউরোপে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ও প্রসার ঘটে। এ কারণে তাঁকে ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর