ভৌগোলিক অভিযানগুলির কারণ বা পটভূমি বিশ্লেষণ করো

ভৌগোলিক অভিযানগুলির কারণ বা পটভূমি বিশ্লেষণ করো

ভৌগোলিক অভিযানগুলির কারণ বা পটভূমি বিশ্লেষণ করো
ভৌগোলিক অভিযানগুলির কারণ বা পটভূমি বিশ্লেষণ করো

ভূমিকা

মানুষের অজানাকে জানার আগ্রহ চিরন্তন। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকেই স্পেন, পোর্তুগাল, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশের নাবিকরা অজানা-অচেনা ভূখণ্ড আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। ফলে নতুন নতুন দেশ ও মহাদেশ ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিত হয়। এই ভৌগোলিক অভিযানগুলির পিছনে নানা কারণ বা উদ্দেশ্য ছিল। সেগুলি হল-

(1) বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার: দিনির্ণয়কারী কম্পাস, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ নির্দেশকারী অ্যাস্ট্রোলেব যন্ত্রের আবিষ্কার সমুদ্রযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে তোলে। এ ছাড়া, বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর তত্ত্ব (যে পৃথিবী গোলাকার) নাবিকদের মনে অসীম সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে মুক্ত করে। তাঁরা নিশ্চিত হন যে গোলাকার পৃথিবীতে তাঁরা অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে আসতে পারবেন।

(2) ভ্রমণবৃত্তান্ত : নবজাগরণের হাত ধরে ইউরোপে বিভিন্ন রকমের ভ্রমণকাহিনি বা ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়। এগুলি পাঠ করে ইউরোপের মানুষের মধ্যে অজানা-অচেনা দূরবর্তী দেশকে দেখা ও জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে মার্কোপোলো, জুরারা প্রমুখের ভ্রমণকাহিনি উল্লেখযোগ্য। মার্কোপোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত ইউরোপের নাবিকদের সামুদ্রিক অভিযানে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে।

(3) শাসকবর্গের উৎসাহ ও সাহায্যদান: এই সময়পর্বে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পোর্তুগাল ও স্পেনের শাসকবর্গ ভৌগোলিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এ বিষয়ে স্পেনের রানি ইসাবেলা, রাজা ফার্দিনান্দ, পোর্তুগালের প্রিন্স হেনরি প্রমুখের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

(4) বাণিজ্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দিতা: পঞ্চদশ শতক নাগাদ ইউরোপে কৃষিবিপ্লব ঘটলে রপ্তানি পণ্য ও বাণিজ্যিক ফসলের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ইউরোপের বাইরে রপ্তানি করায় নতুন বাজার খুঁজে কোন্ দেশ কত বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। নতুন অঞ্চলের নতুন পণ্য আমদানি করাও এই উদ্দেশ্যের মধ্যেই ছিল।

(5) বিকল্প বাণিজ্যপথের সন্ধান: ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের  হাতে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বাণিজ্যের ভূমধ্যসাগরীয় পথটি ইউরোপীয় বণিকদের কাছে রুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে বিকল্প বাণিজ্যপথের সন্ধানের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

(6) খ্রিস্টান চার্চের আগ্রহ: সেলজুক তুর্কিদের আক্রমণে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটে। ফলে ইউরোপে মুসলিমদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রবেশ খ্রিস্টান চার্চকে ভীতগ্রস্ত করে তোলে। ফলে ইসলামের প্রসারকে প্রতিহত করে খ্রিস্টান ধর্ম-কে’ শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে প্রমাণ করার  তাগিদে চার্চ নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারে উৎসাহ দেয়। অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার ও প্রসার ভৌগোলিক অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায় যে, উক্ত রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণে ইউরোপের দেশগুলি ভৌগোলিক অভিযানে লিপ্ত হয়েছিল। এ ছাড়াও নাবিক ও অভিযাত্রীদের বীরত্ব ও দুঃসাহসিকতার কাহিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ইচ্ছাও সামুদ্রিক অভিযানে প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment