প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতি কৃষিক্ষেত্রে কীভাবে প্রযুক্ত হয়েছিল

ভূমিকা
আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে বিভিন্ন ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি ও কারিগরি ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি ঘটানো হয়। কৃষিক্ষেত্রেও এর সদর্থক প্রভাব পড়ে।
(1) নতুন কার্যকরী কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার: আগেকার লাঙল ও ফসল কাটার যন্ত্রনির্ভর কৃষিব্যবস্থা আমূল পরিবর্তিত হয় যখন, লোহা দিয়ে অনেক বেশি মজবুত কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করা শুরু হয়। ভারী লাঙল, ভারী কুঠার, ড্রিল লাঙল, ‘হ্যারো’ নামে লোহার ফ্রেমে কাঁটা লাগানো এক ধরনের মই-এর ব্যবহার কৃষির উন্নতির সহায়ক হয়।
(2) ঘোড়ার ব্যবহার: পূর্বেকার পদ্ধতিতে বলদ বা ষাঁড় ব্যবহার করা হত। নতুন প্রযুক্তি অনুযায়ী তৈরি যন্ত্রগুলিতে ঘোড়ার ব্যবহার শুরু হয়। হ্যারো ঘোড়ায় টানার ফলে অনেক দ্রুত জমি প্রস্তুত সম্ভব হয়। ঘোড়ার ক্ষুরে লোহার ব্যবহার জমি চাষে অনেক বেশি সহায়ক হয়।
(3) কৃষিজমির সম্প্রসারণ: আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বনভূমি, জলাভূমি, অনাবাদি জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। সমুদ্রের উপকূলবর্তী দেশগুলি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ দিয়ে নতুন কৃষিজমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ১৫৬৫-১৬১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৪৪,০০০ হেক্টর জমি সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার করে কৃষির উপযোগী করে তোলা হয়।
(4) সেচ ব্যবস্থার উন্নতি: পাম্পিং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে জমিতে জলসেচ অনেক সহজ ও উন্নত হয়ে ওঠে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সহজেই প্রচুর খাল ও নালার সাহায্যে অনেক বেশি পরিমাণ কৃষিজমিকে সেচের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়।
(5) কৃষিতে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ভাবনাচিন্তার ফলে পুরোনো গতানুগতিক চাষের পদ্ধতির বদলে নতুন নতুন পদ্ধতি কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যেমন: রোটেশন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে একই জমিতে একই ফসলের চাষ না করে বিভিন্ন মরশুমে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। নিবিড় প্রথায় চাষ করা শুরু হয় যা উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করে। কিছু কিছু সময় জমি চাষ না করে ফাঁকা রেখে তার উর্বরতা বৃদ্ধির সময় দেওয়া হয়।
মূল্যায়ন
নতুন প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিনির্ভর চিন্তার প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে সার্বিক জোয়ার আনে। ফলে কৃষিবিপ্লবের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর