শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো (Class 11 Exclusive )

শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণাকে মনোবিজ্ঞানসম্মত করার জন্য মনোবিজ্ঞানের এই শাখাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সূত্র, নীতি, তত্ত্ব, পরীক্ষা ইত্যাদি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নীতি ও তত্ত্বকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা যায়।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ

শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণাকে মনোবিজ্ঞানসম্মত করার জন্য মনোবিজ্ঞানের এই শাখাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সূত্র, নীতি, তত্ত্ব, পরীক্ষা ইত্যাদি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নীতি ও তত্ত্বকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা যায়।

মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতিগুলি কার্যকরী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিশেষ পদ্ধতি।

পর্যবেক্ষণ: কোনো অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীর শিক্ষা চলাকালীন আচরণ প্রত্যক্ষ করে, তার উপর ভিত্তি করে যে সিদ্ধান্তে আসেন তাই হল পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি দুধরনের হতে পারে ব্যক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বা অন্তর্দর্শন, নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি।

  1. ব্যক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বা অন্তর্দর্শন: যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তি তার নিজস্ব অনুভূতি, চিন্তা, প্রেষণা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে নিজেই বলতে পারে তাই হল অন্তর্দর্শন অর্থাৎ ব্যক্তির নিজস্বতা প্রকাশের পদ্ধতিই হল অন্তর্দর্শন পদ্ধতি।
  2. নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ: অন্য ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন বাইরে থেকে লক্ষ করে অনুশীলন করার পদ্ধতিই হল নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ। এই পদ্ধতির উন্নতি সাধনের জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে যেমন-রেটিং স্কেল, ইন্টারভিউ, অ্যানাকডোটাল রেকর্ড, প্রশ্নগুচ্ছ, অভীক্ষা ইত্যাদি। এই পদ্ধতি অনেক নির্ভরযোগ্য।

পরীক্ষণ: প্রয়োজন মতো কতকগুলি অবস্থা বা চলকে নিয়ন্ত্রণ করে যে কোনো একটিকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করার পদ্ধতিকে পরীক্ষণ বলে। পরীক্ষণ পদ্ধতি নিখুঁত, পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক হয়। পরীক্ষণের জন্য প্রয়োজন নকশাকরণের অর্থাৎ পরীক্ষাটি কীভাবে করা হয়েছে তাকে বোঝায়। নকশার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে কাজের উৎকর্ষতা। নকশাকরণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- একদল নকশা, সমদল নকশা।

  1. একদল নকশা: একটি দলের সাপেক্ষে যখন পরীক্ষণ নকশা তৈরি করা হয় তখন তাকে বলে একদল নকশা। যেমন একজন শিক্ষক একাদশ শ্রেণির শিক্ষাবিজ্ঞানের 10 জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি দল তৈরি করলেন। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিফিনের পর স্কুল ত্যাগ করার প্রবণতা রয়েছে। শিক্ষক প্রশ্নগুচ্ছের মাধ্যমে তাদের এই আচরণের কারণ অনুসন্ধান করেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন। এইভাবে যথাযথ পরামর্শ দেওয়ার কিছুদিন পর দেখা গেল চারজনের টিফিনের পর স্কুল ত্যাগের প্রবণতা কমেছে। এইভাবে কিছুদিন অন্তর অন্তর পরামর্শদানের মাধ্যমে দেখা যায় 10 জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেকটা কমেছে।
  2. সমদল নকশা: এক্ষেত্রে দুটি একরকম দল বাছাই করা হল। এক্ষেত্রে যে দলের উপর পূর্ব নির্দিষ্ট অভীক্ষা প্রয়োগ করা হয় তাকে পরীক্ষণমূলক দল অপরপক্ষে দ্বিতীয় দল যার উপর অভীক্ষা প্রয়োগ করা হবে না তাকে বলে নিয়ন্ত্রিত দল। দল গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এলোমেলো নমুনা (Random sampling), উদ্দেশ্যমূলক নমুনা (Purposive sampling) ইত্যাদি। যেমন 10 জন প্রায় সমমেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের দুটি দলে ভাগ করা হল। প্রতি দলে দুজন করে শিক্ষার্থী নেওয়া হল। 10 জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ইংরেজিতে ভীতি রয়েছে। প্রত্যেকে ইংরেজিতে 50 শতাংশের কাছাকাছি নম্বর পায়। পরীক্ষণীয় দলকে ইংরেজি বিষয়ের ব্যাকরণ অংশতে 10 দিন ধরে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল আর অপর দলটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল না। উভয় দলকে একই পারদর্শিতার অভীক্ষা প্রয়োগ করা হল। দেখা গেল পরীক্ষণীয় দলটি নিয়ন্ত্রিত দলের তুলনায় ভালো ফল করল। এ থেকে প্রমাণিত হল পরীক্ষণীয় দলের প্রশিক্ষণের প্রভাবে মানের উন্নয়ন ঘটেছে এবং তাদের ইংরেজি বিষয়ে ভীতি কিছুটা কমেছে। এই পদ্ধতি শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। 

এইরকম বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। পরীক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয় সাপেক্ষও বটে। এছাড়াও এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন। পরীক্ষণ পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও বলে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে যেমন- পারদর্শিতা, আগ্রহ, মনোভাব, ব্যক্তিত্ব, সৃজনশীলতা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তথ্যগুলির পর্যালোচনা করে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া যায়, যা শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ পদ্ধতি: শিক্ষা মনোবৈজ্ঞানিক আরও কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলিকে বিশেষ পদ্ধতি বলা হয়। সেই পদ্ধতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- চিকিৎসামূলক, মিথস্ক্রিয়ামূলক, কেস স্টাডি, সমাজমিতি, রেটিংস্কেল ইত্যাদি।

  1. চিকিৎসামূলক পদ্ধতি: এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা হয় এবং সমস্যার কারণ নির্ণয় করা হয়। এরপর সমস্যা সমাধানের দিক নির্ণয় করে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগে অপসংগতিমূলক ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের আচরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অপসংগতির কারণ অনুসন্ধান করা হয়। এই কারণ অনুসন্ধান করে সেই সমস্যা সমূহের সমাধানের চেষ্টা করা হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যাপারে অভিভাবকদের জানানো হয়। এই পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ, প্রশ্নগুচ্ছ, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করা হয় এবং এ ছাড়াও বুদ্ধি, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি পরিমাপক অভীক্ষাকে কাজে লাগানো হয়।
  2. মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ পদ্ধতি: বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে ফলে শিক্ষালয়গুলিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেই কারণে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে (সাক্ষাৎকার, প্রশ্নগুচ্ছ, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে) শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের, শিক্ষক-শিক্ষক, শিক্ষার্থী-পরিবেশ, শিক্ষক-পরিবেশ এর মধ্যে মিথস্ক্রিয়াজনিত সমস্যা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
  3. কেস স্টাডি: বিশেষ সমস্যাযুক্ত শিক্ষার্থীর পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, সাংস্কৃতিক দিক ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হয় সাক্ষাৎকার, প্রশ্নগুচ্ছ ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিকে বলে কেস স্টাডি। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির সমস্যার কারণ ও তার সমাধানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  4. পরিসংখ্যান পদ্ধতি বা রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার: মনোবিজ্ঞান সম্মত পরিমাণগত গবেষণার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- সার্ভে পদ্ধতি ব্যবহার করে দুটি দলের কোনো বিষয়ের মনোভাব সম্পর্কে জানা যায়, সেগুলিকে গাণিতিক রাশি দ্বারা প্রকাশ করার পর দুই দলের মনোভাবের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা বা মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য কি রকম আছে ইত্যাদি জানতে রাশিবিজ্ঞানের কৌশলকে ব্যবহার করা হয়।
  5. সমাজমিতি পদ্ধতি: সমাজে কোনো ব্যক্তির অবস্থান বা বিদ্যালয়ে কোনো ব্যক্তির অবস্থান (অবস্থান বলতে তাকে একদল ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর মধ্যে কতজন পছন্দ করে বা করে না) বোঝানোর ক্ষেত্রে সমাজমিতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি মনোবৈজ্ঞানিক বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।
  6. ক্রম বিকাশমূলক পদ্ধতি: শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক ইত্যাদির ধারাবাহিক বিকাশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীর লম্বালম্বিভাবে (longitudinally) ও আড়াআড়িভাবে (Cross sectionally) পর্যবেক্ষণ করে জানা সম্ভব হয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে।
  7. তুলনামূলক পদ্ধতি: একই শ্রেণির একাধিক বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার তুলনা বা একই স্তরের (মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক) বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার তুলনা করা যায় যে পদ্ধতির মাধ্যমে সেই পদ্ধতিকেই তুলনামূলক পদ্ধতি বলে। এইভাবে একাধিক শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা যায়। এ ছাড়াও মানব আচরণের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন সেক্ষেত্রে মানব আচরণের প্রকৃত রূপের বিচার করতে নিম্নতর প্রাণীর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মানুষের উপর তার প্রয়োগ করে যোগ্যতা বিচার করা হয়। বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক, চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষণা করা হয়।
  8. আন্তঃ বিশ্লেষণ পদ্ধতি: শ্রেণিশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণে সব শিক্ষার্থী সমভাবে অংশগ্রহণ করে না। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের বিষয় গ্রহণ করার ক্ষমতা, শিক্ষকদের বোঝানোর ক্ষমতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। যেহেতু একই দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্লেষণ করে উপরোক্ত তথ্য পাওয়া যায় তাই এই পদ্ধতিকে আন্তঃ বিশ্লেষণ পদ্ধতি বলে।

এ ছাড়াও রেটিংস্কেল, আত্মবিবৃতিমূলক কৌশল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা, মনোভাব, সম্ভাবনা ইত্যাদি জানার জন্য। এই কারণে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্বন্ধে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনLink
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তরClick Here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তরClick Here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তরClick Here

Leave a Comment