শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো | Relationship between Education and Psychology ( Exclusive ) Class 11

এককথায় বলা যায়, ‘শিক্ষা’ বলতে আমরা সেইসব আচরণ আয়ত্ত করা বুঝি, যেগুলি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েরই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন এবং আচরণগুলি সমাজ অনুমোদিত কতকগুলি বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে অপরিণত ব্যক্তিকে আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া, গতি, প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণ করে মনোবিজ্ঞান। আর সেই আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষার বিষয়বস্তু।

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক
শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক | Relationship between Education and Psychology

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার অর্থ। মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এখন শিক্ষার সংজ্ঞা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এককথায় বলা যায়, ‘শিক্ষা’ বলতে আমরা সেইসব আচরণ আয়ত্ত করা বুঝি, যেগুলি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েরই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন এবং আচরণগুলি সমাজ অনুমোদিত কতকগুলি বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে অপরিণত ব্যক্তিকে আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া, গতি, প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণ করে মনোবিজ্ঞান। আর সেই আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষার বিষয়বস্তু।

(1) শিক্ষার লক্ষ্য ও মনোবিজ্ঞান: 

অ্যাডাম (Adams)-এর কথায়, “The teacher teaches John Latin”-

এই বাক্যটি থেকে শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক ভালোভাবে বোঝা যায়। শিক্ষককে যেমন শিক্ষার বিষয়টি জানতে হবে তেমনই যাকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে অর্থাৎ শিক্ষার্থীকেও জানতে হবে। শিক্ষার্থীকে জানতে হলে প্রয়োজন মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান। শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করাই শিক্ষাতত্ত্বের একমাত্র কাজ নয়; এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(2) শিক্ষার পাঠক্রম ও মনোবিজ্ঞান: 

শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়ার পরবর্তী স্তর হল পাঠক্রম নির্ধারণ করা। পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে লক্ষ্যের দিকে নজর রেখে। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য শুধু বৌদ্ধিক বিকাশ নয়, শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন। সুতরাং পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশসাধনের উপযোগী। শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠক্রমের এই বহুমুখিতা মনোবিজ্ঞানের ধারণার ওপর নির্ভর করে। সামগ্রিক বিকাশ বলতে কী বোঝায়, বিভিন্ন দিকের বিকাশের নীতিগুলি কী, বিকাশের প্রতিকূল এবং অনুকূল পরিবেশ কীভাবে গড়ে তোলা যায়, এককথায় শিক্ষার্থীর বিকাশের বিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়গুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য শিক্ষার্থীর বহুমুখী বিকাশ-শিক্ষার এই লক্ষ্য পূরণের জন্য যে পাঠক্রম রচনা করতে হবে তার জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।

(3) শিক্ষার পদ্ধতি, মূল্যায়ন ও মনোবিজ্ঞান: 

পাঠক্রম রচনার পরেই আসে শিক্ষাপদ্ধতি। আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থী হবে শ্রোতা আর শিক্ষক হবেন পরিচালক-বর্তমানে এই তত্ত্বের অসাড়তা প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তার ভিত্তি হল মনোবিজ্ঞান। আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতিগুলি যেমন- [1] প্রোজেক্ট পদ্ধতি; [ii] সমস্যা-সমাধান পদ্ধতি; [iii] প্রোগ্রাম শিখন পদ্ধতি; [iv] আবিষ্কার পদ্ধতি এবং [v] আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষণ (Technology based Teaching) পদ্ধতি ইত্যাদির ভিত্তি হল মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান। এই পদ্ধতিগুলিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও সক্রিয়তার নীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার সর্বশেষ স্তর মূল্যায়নের আধুনিক ধারণা, কৌশল স্থিরীকরণ এবং প্রয়োগ, তার তাৎপর্য নির্ণয় ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(4) শিক্ষক, শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোবিজ্ঞান: 

সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষেই প্রয়োজন; অন্যথায় শিক্ষণ এবং শিখন কোনোটিই সার্থকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে, মানসিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণগুলি কী, কীভাবে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় ইত্যাদি সবই মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়; যা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বা বাইরে ছোটো- খাটো অপরাধ করে থাকে। এই অপরাধগুলি তারা কেন করে, কীভাবে তা দূর করা যায় সবই মনোবিজ্ঞানে আলোচিত হয়।

(5) মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা নির্দেশনা এবং পরামর্শদান: 

শিক্ষা নির্দেশনা এবং পরামর্শদানের মাধ্যমেই হয় আধুনিক শিক্ষা বিস্তার। শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা-পরিকল্পনা রচনা, শিক্ষা সংক্রান্ত নানা তথ্য পরিবেশন করা, শিক্ষা- সমস্যা সমাধান করা, বয়ঃসন্ধিক্ষণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরামর্শদান, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-পছন্দ বিকাশে সাহায্য করা ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানেরই অংশ-বিশেষ।

(6) ব্যতিক্রমী শিশুদের শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞান: 

ব্যতিক্রমী অর্থাৎ প্রতিভাসম্পন্ন, পিছিয়ে পড়া এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন। মনোবিজ্ঞানে এই সব শিশুদের কীভাবে চিহ্নিত করা যায়, এদের আচরণের বিভিন্ন দিকগুলি বিশদভাবে আলোচিত হয়, যা এদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পনার জন্য বিশেষ প্রয়োজন।

(7) শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের গবেষণা: 

শিক্ষার বিকাশে মনোবিজ্ঞানের গবেষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গবেষণার বিশেষ অবদান দেখা যায়। মনোযোগ, স্মৃতি, শিখন, প্রেষণা, সাধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গবেষণালক্ষ ফল শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে এবং করছে। বিভিন্ন শিক্ষণ মডেলের ভিত্তি হল মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা।

(8) বিদ্যালয় পরিচালনা এবং মনোবিজ্ঞান: 

শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সুষ্ঠুভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা। বর্তমানে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যবস্থাপনার মনস্তত্ব (Management Psychology) প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও উৎকর্ষতা আনা যায়। বিদ্যালয়ের মানবসম্পদ, যেমন-শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাকর্মী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে এবং বিদ্যালয়ের কার্যাবলি যেমন সময়তালিকা প্রস্তুত, শৃঙ্খলা, বিদ্যালয়ের লক্ষ্যের প্রতি ছাত্র ও শিক্ষকদের নিষ্ঠা গড়ে তোলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার মনস্তত্বর নীতি প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনা উন্নত করা যায়।

(9) শ্রেণি ব্যবস্থাপনা এবং মনোবিজ্ঞান: 

কীভাবে শ্রেণির কাজ শুরু হবে, শিক্ষার্থীদের প্রেষণা এবং মনোযোগ কীভাবে ধরে রাখা যায়, কীভাবে শ্রেণিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, শ্রেণিকক্ষে কীভাবে ব্যক্তিগত ও দলগত শিখনের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা যায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষসাধন করা যায়।

আরও পড়ুনLink
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তরClick Here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তরClick Here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তরClick Here

Leave a Comment