![]() |
“আগুন জ্বলল আবার”-‘আবার’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? আবার আগুন জ্বলল কেন? এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত দেয়? |
‘আবার’ শব্দটির তাৎপর্য
কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় আগুন জ্বলার প্রসঙ্গ দু-বার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম বার শীতের রাতে উন্নতার জন্য দেশোয়ালিরা শুকনো পাতায় আগুন জ্বেলেছিল। কিন্তু কবিতার পরবর্তী পর্যায়ে শিকারিরা আগুন জ্বালিয়েছিল। এই ‘আবার’ শব্দটির মধ্য দিয়ে দুই ঘটনার বিভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আগুন জ্বালানোর কারণ
আলোচ্য কবিতার শেষ অংশে জানা যায়, কয়েকজন নাগরিক, সভ্য মানুষ অরণ্যে গিয়েছিল শিকারের আশায়। অন্যদিকে দিনের আলোয় মৃত্যুভয় কাটিয়ে বাদামি হরিণ বন থেকে বেরিয়ে ঘাস খেয়েছিল, নদীর জলে নেমে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্নে বিভোর হরিণটি নিজের রূপে হরিণীর পর হরিণীকে চমক লাগানোর নেশায় চঞ্চল হয়েছিল। এই অবস্থায় শিকারিদের ছোঁড়া গুলিতে হরিণটির মৃত্যু হয়। শিকারিদল মাংস খাওয়ার সাধ পূরণ করতে ‘উম্ন লাল হরিণের মাংস’ রান্না করার উদ্দেশ্যে আগুন জ্বালিয়েছিল। উদ্ধৃতাংশে দ্বিতীয় বার এই কারণেই ‘আগুন’ জ্বালানোর কথাই বলা হয়েছে।
ইঙ্গিত
বন্য পরিবেশে অভ্যস্ত বাদামি হরিণটি চিতাবাঘিনির আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচালেও, উন্নত প্রাণী মানুষের ক্ষমতা তাকে হত্যা করেছিল। আসলে এই ঘটনার দ্বারা কবি বোঝাতে চেয়েছেন, যন্ত্রশক্তিতে শক্তিমান মানুষের হাত থেকে অসহায় জীবজগতের এমনকি দুর্বল মানুষেরও মুক্তি নেই। এই ক্ষমতালোভী মানুষ লোভ-লালসা পূরণ করতে অন্যকে মেরে ফেলতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না। তাদের লোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কত নিষ্পাপ প্রাণ, কত স্বপ্ন। কবি উক্ত ঘটনার মাধ্যমে এই চরম সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।