প্রাচীন কালে গ্রিক ও রোমান জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি কেমন ছিল

প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জাহাজ নির্মাণ
প্রাচীন যুগে নৌচালনার ক্ষেত্রে গ্রিক ও রোমান জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জাহাজগুলি মূলত বাণিজ্য, সামরিক প্রয়োজন ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত।
(1) নির্মাণ কৌশল: ওক, সিডার, পাইন ইত্যাদি গাছের কাঠ দ্বারা এই জাহাজগুলি নির্মিত হত। বর্গাকৃতির পাল এবং মজবুত দাঁড়ের ব্যবহার জাহাজের গতিবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
(2) সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত জাহাজ: প্রাচীন গ্রিক, রোমান ও ফোয়েনিশীয়গণ ট্রিরেম (Trireme) নামক এক ধরনের জাহাজ তৈরি করত, যা পরবর্তীকালে যুদ্ধজাহাজ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তিনটি স্তরে দাঁড় সাজানো এই জাহাজে দাঁড় পরিচালনার কাজে নিযুক্ত থাকত ক্রীতদাসরা। সরু ও দীর্ঘ কাঠামোযুক্ত জাহাজটি দ্রুত চলাচল এবং শত্রু জাহাজকে আঘাতে পটু ছিল। এ ছাড়া কুইঙ্কুয়েরিম (Quinquereme) নামক একটি জাহাজের কথাও জানা যায়, যা নৌবাহিনীর প্রধান সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হত।
(3) বাণিজ্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত জাহাজ: গ্রিক ও রোমানদের বাণিজ্য জাহাজগুলি ছিল প্রশস্ত ও ভারী ওজন বহন করার ক্ষমতাসম্পন্ন। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার ক্ষেত্রে এই জাহাজগুলি ছিল উপযুক্ত। শোনা যায়, গ্রিক ও রোমানরা করবিটা (Corbita) নামক একপ্রকার বাণিজ্যিক জাহাজ ব্যবহার করত। রোমের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এই জাহাজের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
(4) অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জাহাজের পরিচয়: গ্রিক ও রোমান জাহাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নিদর্শন ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার সাইরাকিউসিয়া (Syracusia) জাহাজ। এর প্রকৃত আয়তন জানা না গেলেও অনুমান করা হয় যে, এটি ছিল ৫৫ মিটার লম্বা, ১৪ মিটার চওড়া ও ১৩ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট। প্রায় ১৬০০-১৮০০ টন মাল এই জাহাজ বহন করতে পারত বলে গবেষকগণ মনে করেন। পাশাপাশি রোমানদের আমলে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় ল্যাটিন-রিগ (Latin-rig) নামক তিনকোণা পালযুক্ত এক ধরনের জাহাজের আবির্ভাব ঘটে, যার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পঞ্চম শতক নাগাদ। ছোটো ও তিনকোণা এই জাহাজগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন ছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর