মুদ্রণবিপ্লব কী? ইউরোপে মুদ্রণবিপ্লবে আরবদের অবদান কী ছিল

মুদ্রণবিপ্লব কী? ইউরোপে মুদ্রণবিপ্লবে আরবদের অবদান কী ছিল

মুদ্রণবিপ্লব কী? ইউরোপে মুদ্রণবিপ্লবে আরবদের অবদান কী ছিল
মুদ্রণবিপ্লব কী? ইউরোপে মুদ্রণবিপ্লবে আরবদের অবদান কী ছিল

মুদ্রণবিপ্লব

ইউরোপে পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত মূলত হাতে লেখা পুথিরই প্রচলন ছিল। কিন্তু এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার হয়। এরই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় কাগজের প্রচলন, শিক্ষা প্রসারিত হয় ও নবজাগরণ-প্রসূত চেতনা। বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বই ছাপার পরিমাণও। এর ফলে মুদ্রণশিল্পে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে তাকেই সামগ্রিকভাবে ইউরোপের মুদ্রণবিপ্লব বলা হয়।

ইউরোপে মুদ্রণবিপ্লবে আরবদের অবদান

আরবে মুদ্রণশিল্প যথেষ্টই প্রসারিত হয়েছিল। তবে আরবরা এক্ষেত্রে নিজেরাই যে উদ্ভাবক ছিল তা নয়। বস্তুতপক্ষে তারা চিনের মুদ্রণ প্রযুক্তি ও কাগজ তৈরির কৌশলকে কাজে লাগিয়েই মুদ্রণশিল্পের অগ্রগতি ঘটিয়েছিল।

(1) কাগজ তৈরির পদ্ধতির অগ্রগতি: চিনের কাছ থেকে আরব দুনিয়া ৭৫১ খ্রিস্টাব্দে কাগজ তৈরির রহস্য উদ্ধার করে। এরপর কাগজ প্রস্তুতকারী প্রযুক্তিতে আরবরা নানান অগ্রগতি ঘটায়। কাগজ উৎপাদনে তারা লিনেন ও শণের ব্যবহার করতে শুরু করে। বর্তমান উজবেকিস্তানের শহরগুলি থেকে সেসময় প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের শণ ও লিনেন বাগদাদ, দামাস্কাস-সহ এশিয়ার অন্যান্য শহরে জোগান দেওয়া হত। উন্নতমানের কাগজ তৈরির জন্য এই কাঁচামাল খুবই উপযোগী ছিল। কাগজ তৈরি করার জন্য আরবে এক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল ট্রিপ হ্যামার (Trip Hammer)-এর ব্যবহার। চিনের কারিগররা হাত দিয়ে কাগজ প্রস্তুত করলেও, আরবে ট্রিপ হ্যামারের সাহায্যে কাগজ তৈরির বিভিন্ন উপাদানকে চূর্ণবিচূর্ণ করা হত। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কাগজের উৎপাদন দ্রুত ও কার্যকরী হয়।

(2)  কাগজ কলের বিস্তৃতি: আরবে প্রযুক্তির পাশাপাশি অগ্রগতি ঘটে কাগজ কল (Paper Mill) স্থাপনের ক্ষেত্রেও। শোনা যায়, বাগদাদের খলিফার সেনাপতি সমরখন্দ থেকে দুজন চৈনিক কাগজ প্রস্তুতকারককে বন্দি করে বাগদাদে আনেন। তাদের সাহায্যে উজবেক শহরে একটি কাগজ কল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্ভবত ৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ) বাগদাদে প্রথম কাগজ কল গড়ে ওঠে। খ্রিস্টীয় নবম শতক ও তার পরবর্তীকালে বাগদাদ, দামাস্কাসে অসংখ্য কাগজ কল স্থাপিত হয়। আরবের সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে আফ্রিকার মরক্কো (নবম শতক), স্পেন (১১৫০ খ্রিস্টাব্দ)-এ প্রথম কাগজ কল তৈরি হয়। আগামী দুই শতকের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে কাগজ কারখানা গড়ে উঠতে থাকে।

(3) বই বাঁধাই পদ্ধতি: আরবে কাগজে মুদ্রিত বই বাঁধাই-এর পদ্ধতি ছিল বিশেষ উন্নত। চামড়া, কাগজ এবং রেশম-এর ব্যবহার করে বইয়ের মলাট তৈরি করা হত, যা অনেক বেশি টেকসই ছিল। বইয়ের মলাটে রঙিন নকশা, ফুলের মোটিভ, বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা ব্যবহৃত হত। বাঁধাই করা বইগুলি ওজনে হালকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখতেও সুন্দর হত।

(4) উন্নত প্রযুক্তির প্রসার: জিওফ্রে রোপারের মতে, আরবের কিছু পুরোনো মুদ্রণ থেকে বোঝা যায় যে, সেগুলির লিপি, জ্যামিতিক মাপজোখ, নকশা, রঙের ব্যবহার প্রভৃতি যথেষ্ট উন্নতমানের ছিল।

মূল্যায়ন

ইউরোপের মুদ্রণ বিপ্লবে আরবদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরবরা সরাসরি মুদ্রণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন না করলেও তাদের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক বই বাঁধাই পদ্ধতি, কাগজ কলের স্থাপনা, ইউরোপের রেনেসাঁ এবং মুদ্রণবিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেছিল।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment