ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব কী ছিল

ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব কী ছিল

অথবা, ইউরোপে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারে মুদ্রণবিপ্লবের ভূমিকা কী ছিল

ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব কী ছিল
ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব কী ছিল

ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব

ইউরোপে শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বস্তুতপক্ষে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের দরুন স্বল্প সময়ে বেশি সংখ্যক বই ছাপানো সম্ভব হয়। ফলস্বরূপ জনসাধারণের কাছে বই এর মাধ্যমে জ্ঞানের প্রসার ঘটতে থাকে।

(1) ছাপা বই প্রকাশ: মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের দরুন পূর্বের হাতে লেখা বইয়ের দিন ফুরিয়ে আসে, কারণ যন্ত্রের সাহায্যে ছাপানো বই অল্পমূল্যে বিক্রি করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। তাছাড়া এই বইগুলিতে ভুলের পরিমাণও অনেক কম হত।

(2) আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ: মুদ্রণশিল্পের বিকাশের দরুন আঞ্চলিক ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পায়। ইটালিতে দান্তে, পেত্রার্ক, বোকাচ্চিও যেমন স্থানীয় ভাষায় সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন, তেমনই ইংল্যান্ডে চসার ইংরেজি ভাষাকে সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলেন। আবার ডন কুইকজোট উপন্যাসটি রচনার মাধ্যমে সারভেনটিস স্প্যানিশ ভাষাকে শক্তিশালী করতে উদ্যত হন।

(3) অনুবাদের প্রসার: মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন ভাষায় একাধিক অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ফলস্বরূপ নানান দেশের মানুষ নিজেদের মাতৃভাষার পাশাপাশি, অন্যান্য ভাষায় তৈরি গ্রন্থসমূহেও আস্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ পায়।

(4) ধ্রুপদি জ্ঞানের প্রত্যাবর্তন: ধ্রুপদি জ্ঞানের প্রত্যাবর্তন ও প্রসারে ছাপাখানার প্রভাব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এসময় ধ্রুপদি যুগের নানা বইপত্র পাঠকরা পড়ার সুযোগ পায়। অ্যারিস্টটল, প্লেটোর মতো ব্যক্তিত্বদের রচনা, মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল সাধারণ মানুষের কাছে।

(5) বিজ্ঞানচর্চা: বিজ্ঞানের এনসাইক্লোপিডিয়া, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা-সহ বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারগুলি গ্রন্থ বা পুস্তিকার আকারে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। মুদ্রণযন্ত্রের দৌলতে কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, টাইকো ব্রাহে, কেপলার প্রমুখের রচনাসমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ফলস্বরূপ, গতানুগতিক ধর্মীয় চিন্তাভাবনার বদলে মানুষ হয়ে ওঠে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী। এর পাশাপাশি জীববিদ্যাকে চিত্রশোভিত করে তোলার কাজেও মুদ্রণযন্ত্র সহায়ক হয়েছিল।

(6) ভৌগোলিক জ্ঞান অর্জন: মুদ্রণযন্ত্রের প্রভাবে পূর্বে হাতে আঁকা মানচিত্রের পরিবর্তে ইউরোপের মানুষ মুদ্রিত নিখুঁত মানচিত্র ব্যবহার করতে শেখে। আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশ আবিষ্কার, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি বিষয়ে একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা তৈরি হয় ভৌগোলিক আবিষ্কারের কাহিনি সমৃদ্ধ পুস্তকাদির মাধ্যমে।

মন্তব্য

সবশেষে বলা যায়, মুদ্রণ ও ছাপাখানার একটি কালজয়ী অবদান ছিল শিক্ষার বিস্তার। এর সাহায্যেই সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন-সহ আধুনিক সমাজজীবনের অগ্রগতির শিক্ষা সাধারণের মধ্যে প্রসারিত হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment