নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করো

নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করো

নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করো
নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করো

নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা

কল্যাণকর আদর্শের নিরিখে আচরণ সুনিয়ন্ত্রিত করতে হলে নীতিবিদ্যা পাঠ একান্ত প্রয়োজনীয়। মানুষের নৈতিক চেতনাই পারে তার নিজের, সমাজের তথা বিশ্বের প্রকৃত অর্থে কল্যাণ সাধন করতে।

জার্মান দার্শনিক কান্ট, তাঁর ‘Groundwork of the Metaphysics of Morals’ গ্রন্থে বিশুদ্ধ নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নীতিবিদ্যা পাঠের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই এ কথা মনে করে কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন।

  • প্রথমত :  অনেকের মতে, আমাদের ব্যাবহারিক জ্ঞান বা প্রজ্ঞা আমাদের নৈতিকতার পথে চালিত করে। এইজন্য নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা নেই। এর উত্তরে কান্ট বলেন, আমরা সবসময় ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা দ্বারা চালিত হই না। কিছু কিছু সময় আবেগ ও অনুভূতি আমাদের চালিত করে। আমরা স্বার্থপর হয়ে যাই। এক্ষেত্রে নৈতিক বিধিগুলি আমাদের সঠিক পথ দেখায়। নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমেই আমরা নৈতিক বিধিগুলি সম্বন্ধে অবগত হই।
  • দ্বিতীয়ত:  আবার কেউ কেউ বলেন যে, নীতিবিদ্যা সম্বন্ধে আমরা আমাদের গুরুজন, পিতামাতা, পরিবার, পরিবেশ থেকে শিখতে পারি। এই কারণে নীতিবিদ্যার গ্রন্থ পাঠের প্রয়োজনীয়তা নেই। এই আপত্তির উত্তরে কান্ট বলেন, মানুষ মাত্রই সসীম এবং স্বভাবত ত্রুটিপূর্ণ। তা ছাড়া পরিবেশ বা পরিস্থিতিও সবসময় নৈতিকতার অনুকূলে থাকে না। তাই নীতিবিদ্যা পাঠ অবশ্য প্রয়োজন।
  • তৃতীয়ত:  অনেকের মতে, বাস্তব দৃষ্টান্ত যেভাবে আমাদের নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, সেইরকম শিক্ষা আমরা নীতিবিদ্যার গ্রন্থ পাঠ করে পাই না। এর উত্তরে কান্ট বলেন নৈতিক বিধির জ্ঞান না থাকলে আমরা দৃষ্টান্তগুলিকে বিশ্লেষণ করতে পারবো না।
  • চতুর্থত:  অনেকের মতে, নীতিবিদ্যা পাঠ করলে শিক্ষার্থীরা সমাজে প্রচলিত নৈতিক নিয়ম ভঙ্গ করে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। কিন্তু এ অভিযোগটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন-না নীতিবিদ্যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রচলিত নৈতিক নিয়মগুলির দোষ-ত্রুটি নির্ণয় করে তাদের পরিমার্জিত ও পরিশুদ্ধ করে। সাধারণ লোকের যে নৈতিকতার জ্ঞান তা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস প্রসূত। নীতিবিদ্যা এইসব কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে বাদ দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক নৈতিকতার জ্ঞানকে উন্নত, পরিশীলিত ও পরিবর্ধিত করে। নীতিবিদ্যা এইভাবে সমাজকে কলুসতামুক্ত করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। সুতরাং নীতিবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার্য।
  • পঞ্চমত:  সমালোচকদের মতে, নীতিবিদ্যা পাঠ করে কেউ নীতিপরায়ণ হয় না, কেন-না এর কোনো প্রায়োগিক বা ব্যাবহারিক মূল্য নেই। এই অভিযোগটিও সমর্থনযোগ্য নয়। নীতিবিদ্যা তাত্ত্বিক এবং তা আমাদের আদর্শের জ্ঞান প্রদান করে। এ কথা মেনে নিয়েও বলা যায় যে, তত্ত্বগত জ্ঞান না থাকলে তার প্রয়োগ করাও সম্ভব নয়। জ্ঞান আত্মার প্রদীপস্বরূপ। নীতিবিদ্যার জ্ঞান আমাদের অনুভূতিকে, আচার-আচরণকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে এবং আমাদের আলোকিত ও সমৃদ্ধ করে আমাদের অন্তরস্থলে পৌঁছায়। তার ফলে আমরা কোন্টি ঠিক, কোন্টি ভুল, কোন্টি ন্যায় অথবা কোন্টিই বা অন্যায় তা নির্ধারণ করতে সমর্থ হই। নীতিবিদ্যার জ্ঞান না থাকলে সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়, সেখানে স্বেচ্ছাচার দেখা যায়। জীবনকে সঠিক পথে চালনা করতে হলে, সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত জীবনযাপন করতে হলে নীতিবিদ্যার জ্ঞান একান্ত প্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যক। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, নীতিবিদ্যা পাঠের ফলে মানুষ বাস্তবের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে সংযত রেখে কোথায় কেমন ব্যবহার করা উচিত, সেই অনুযায়ী চারিত্রিক দৃঢ়তাকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়াস করে। সুতরাং নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তাকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায় না।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment