প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতি কীভাবে ঘটে

প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতি
প্রযুক্তির প্রভাবে চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এইক্ষেত্রে চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে, যা চিকিৎসাশাস্ত্রকে আরও আধুনিক রূপ প্রদান করে।
(1) অ্যালার্টমি: আলোচ্য পর্বে অ্যানাটমি (Anatomy) বা শবব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এক্ষেত্রে ইটালির লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির গবেষণা ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। আবার বেলজিয়ামের আন্দ্রেয়াস ভেসালিয়াস (Andreas Vesalius)-এর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ De Humani Corporis Fabrica Libri Septem-ও এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এই গ্রন্থে তিনি মানবদেহের অস্থি, পেশি, হৃৎপিন্ডের গঠন ও কার্যপ্রণালী-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অনেকে তাঁকে আধুনিক অ্যানাটমির জনক বলেও অভিহিত করেন।
(2) শোণিত সংবহন: ইংরেজ চিকিৎসাবিদ উইলিয়ম হার্ভে (William Harvey) মানবদেহে শোণিত সংবহন বা রক্তসঞ্চালন পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। সপ্তদশ শতকে রক্তসৃষ্টির কারণ (জাঁ পেকে, রুডবেক), যকৃৎ, পাকস্থলী ও অস্ত্রের অ্যানাটমির বর্ণনা (গ্লিসেন), অগ্ন্যাশয়, বৃক্ক, থাইরয়েড ও অন্যান্য গ্রন্থি (টমাস হোয়ার্টন) সম্পর্কে বহু নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হয়, যার মূলে ছিল হার্ভের যুগান্তকারী শোণিত সংবহনের আবিষ্কার।
(3) লিগেচার পদ্ধতি: দেহে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আবিষ্কৃত হয় লিগেচার (Ligature) পদ্ধতি। পূর্বে ক্লডিয়াস গ্যালেনাস বা গ্যালেন, হিপোক্রেটিস (Hippocrates) এবং অল-জহরয়ি (al-Zahrawi) এই পদ্ধতির কথা বললেও তাকে পুনঃপ্রবর্তিত করেন ফরাসি চিকিৎসাবিদ আমব্রোয়াজ পারে (Ambroise Pare)।
(4) উল্লেখযোগ্য যন্ত্রসমূহ: প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চিকিৎসাবিদ্যায় নানা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা হয়েছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট (Daniel Gabriel Fahrenheit) কর্তৃক আবিষ্কৃত পারদ থার্মোমিটার, অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহক (Antonie Van Leeuwenhoek)-এর অনুবীক্ষণ যন্ত্র, রেনে লেনেক (Rene Laennec) কর্তৃক আবিষ্কৃত স্টেথোস্কোপ প্রভৃতি।
(5) ফার্মাকোলজির ভিত্তি স্থাপন: আলোচ্য পর্বে প্যারাসেলসাস (Paracelsus)-এর মতো চিকিৎসাবিদরা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে কিছু রাসায়নিক ও খনিজ পদার্থের ব্যবহার শুরু করেন। যা পরবর্তীকালে আধুনিক ঔষধসংক্রান্ত বিজ্ঞান বা ফার্মাকোলজি (Pharmacology)-র ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল
(6) মুদ্রণ প্রযুক্তির প্রভাব: পঞ্চদশ শতাব্দীতে গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেসের আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞান প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দ্রুত ও স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত বই ও পান্ডুলিপি ছাপানো হলে, তা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়কে ত্বরান্বিত করে। পরিশেষে বলা যায়, পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি এবং রোগ নির্ণয়ের এক শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে প্রযুক্তির অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর