মুদ্রণশিল্পে জাপানের অবদান কী ছিল

মুদ্রণশিল্পে জাপানের অবদান কী ছিল

মুদ্রণশিল্পে জাপানের অবদান কী ছিল
মুদ্রণশিল্পে জাপানের অবদান কী ছিল

আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মুদ্রণ প্রযুক্তির শিক্ষা জাপান গ্রহণ করেছিল চিন দেশের কাছ থেকে। চিনের বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকগণ আনুমানিক ৭৬৮ থেকে ৭৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাপানে ব্লক প্রিন্টিং প্রযুক্তি চালু করেন। জাপানের সম্রাজ্ঞী সোটোকু বা সম্রাজ্ঞী কোকেনের (Shotoku or Koken) আদেশে বৌদ্ধ সম্মোহনীবিদ্যার একটি গ্রন্থ (Hyakumanto Darani বা One Million Pagodas and Dharani Prayers) ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রিত হয়। সম্ভবত এটিই ছিল জাপানের প্রাচীনতম মুদ্রিত গ্রন্থ।

মুদ্রণশিল্পে জাপানের অবদান 

(1) ব্লক প্রিন্টিং প্রযুক্তি: প্রাথমিক পর্বে, জাপানে মুদ্রিত গ্রন্থের অধিকাংশই ছিল বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক। ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রজ্ঞাপারমিতাসূত্র বা বৌদ্ধ হীরক সূত্র জাপানি ভাষায় মুদ্রিত হয়। সেসময় পার্চমেন্টের উপর অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি মুদ্রণ করে সারা দেশের বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে স্থাপন করা হয়েছিল। দশটি বুদ্ধের সারি একটি আনুভূমিক ব্লকে খোদাই করে এবং পরে কালি দিয়ে তা ছাপানো হয়েছিল কাগজের পাতায়। পরবর্তীতে দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে কাঠের ব্লক প্রিন্টিং-এর সাহায্যে বৌদ্ধমঠ কিয়োটো (Kyoto) এবং কামাকুরা (Kamakura)-তে বহু গ্রন্থ ছাপানো ও প্রকাশ করা হয়।

(2) সচল মুদ্রণের প্রচলন: আনুমানিক ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে জাপানে সচল মুদ্রাক্ষরের (Movable Type Printing Technology) প্রচলন হয়। এক্ষেত্রে কোরিয়ার প্রভাবও ছিল যথেষ্ট। জানা যায় যে, ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে জাপানের জনৈক ব্যক্তি টয়োটোমি হিদেয়োশি (Toyotomi Hideyoshi)-এর সেনারা কোরিয়া থেকে একটি মুদ্রণ যন্ত্র দখল করেছিল, যা জাপানে ব্যবহার করা হত। 

(3) রঙিন মুদ্রণ পদ্ধতি: টোকুগাওয়া (Tokugawa) বা এডো পর্বে (Edo Period) জাপানে মুদ্রণ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে চালু হয় রঙিন মুদ্রণ পদ্ধতি। এই সময় ব্লক মুদ্রণের ইতিহাসে জাপানের জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ছিল ইউকিও-ই (Ukiyo-e)। এই পদ্ধতিতে কাঠের ব্লক প্রিন্ট ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্য বা লোককাহিনির মতো দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হত।

(4) পাশ্চাত্য রীতির প্রবেশ: উনিশ শতকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে ইউকিও-ই পদ্ধতির ব্যবহার কমতে থাকে। বিংশ শতকে, বিশেষত মেইজি পর্বে জাপানে মুদ্রণ পদ্ধতি আরও আধুনিক হয়ে উঠতে থাকে। জাপানে প্রচলিত হয় পাশ্চাত্য রীতিতে তৈরি মুদ্রণযন্ত্র, যা আরও দ্রুত এবং ভালোমানের উৎপাদনে সহায়ক হয়েছিল। 

মূল্যায়ন

মুদ্রণ ব্যবস্থার দরুন জাপানে উকিয়ো-জোশি (Ukiyo- zoshi) ও কিব্যশি (Kibyoshi) নামক দুই ধরনের গ্রন্থের উদ্ভব ঘটে। পাশাপাশি ভ্রমণ, রান্না, বাগান পরিচর্যা, শহুরে সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক উপন্যাস, ভূবৈচিত্র্য প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন রকমের বইও প্রকাশিত হয়। তাছাড়া মুদ্রিত গ্রন্থ জাপানে সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষার প্রসারে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment