পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানে প্রিন্স হেনরির ভূমিকা আলোচনা করো

পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানে প্রিন্স হেনরির ভূমিকা আলোচনা করো

পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানে প্রিন্স হেনরির ভূমিকা আলোচনা করো
পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানে প্রিন্স হেনরির ভূমিকা আলোচনা করো

পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানে প্রিন্স হেনরির ভূমিকা

পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযান এবং ভৌগোলিক অন্বেষণের কাজে প্রাথমিক পর্বে নেতৃত্ব দেন রাজা প্রথম জনের চতুর্থ পুত্র যুবরাজ ও নাবিক হেনরি (Prince Henry, ১৩৯৪-১৪৬০ খ্রিস্টাব্দ)। যুবরাজ হেনরি ছিলেন অভিজ্ঞ ও দুঃসাহসী নাবিক, তাই হেনরি দ্য নেভিগেটর (Henry the Navigator) নামে তিনি অভিহিত হতেন। সামুদ্রিক অভিযানে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বহুমুখী। মূল্যবান মশলা বাণিজ্যের উপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা, খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার, ইসলামের বিরুদ্ধে এক নতুন ধর্মযুদ্ধ, প্রেস্টার জনের অজানা রাজ্য উদ্ধার করে সেখানকার খ্রিস্টানদের মিত্রতালাভ করা ইত্যাদি একাধিক লক্ষ্যে প্রিন্স হেনরি সামুদ্রিক অভিযানে ব্রতী হন।

(1) কিউটা দখল : উত্তর মরক্কো উপকূলে কিউটা দখলের (১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ) কাজে প্রিন্স হেনরি পোর্তুগিজদের নেতৃত্ব দেন। কিউটা দখলের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী- মুর অধ্যুষিত এলাকায় ক্ষমতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটিই ছিল ইউরোপের প্রথম সফল পদক্ষেপ। এখান থেকেই তিনি সাহারা অতিক্রম করে স্বর্ণপথের বিষয়ে অবগত হন। জে এইচ প্যারির মতে, কিউটা দখলের ফলে মধ্যযুগের ধর্মযুদ্ধ (ক্রুসেড) তার আধুনিক পর্বে প্রবেশ করে। এখান থেকেই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধ পরিবর্তিত হয়ে বৃহত্তর বিশ্বে খ্রিস্টান ধর্ম ও তাদের বাণিজ্যিক আধিপত্য সম্প্রসারণের অভিযানের সূচনা ঘটে।

(2) নৌ-গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা: কিউটা দখলের পরবর্তীতে প্রিন্স হেনরি ব্যক্তিগতভাবে অন্য কোনও অভিযানে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ড সামুদ্রিক অভিযানের গতিময় প্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হয়। পোর্তুগালের উপকূলবর্তী সাগ্রেস (Sagres)-এ ভৌগোলিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন হেনরি। এই কেন্দ্রে নৌবিদ্যা, সমুদ্র অভিযান, জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কাজ চালানো হত। নানান দেশ থেকে আগত আরব, ইহুদি, ইতালীয়, জার্মান বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদগণ সাগ্রেস কেন্দ্রে ভাবী সমুদ্র অভিযাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিতেন। এখানেই অতি উচ্চমানের সামুদ্রিক কম্পাস (মেরিনারস কম্পাস) আবিষ্কৃত হয়। প্রিন্স হেনরির মৃত্যুর (১৪৬০ খ্রিস্টাব্দ) পরেও সাগ্রেস সামুদ্রিক গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

(3) হেনরির উদ্যোগে নৌ-অভিযান: ১৪২৪ থেকে ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রিন্স হেনরির উদ্যোগে পোর্তুগাল পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে পনেরোটি নৌ-অভিযান পাঠিয়েছিল। এদের সবকটিই ছিল সফল। এই সকল অভিযানের সূত্রে পোর্তুগাল অসংখ্য ব্যক্তিকে বন্দি করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে এবং প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। বলাবাহুল্য, উপকূলীয় বাণিজ্য থেকে প্রিন্স হেনরি বিশেষভাবে লাভবান হন। গিনিতে তাঁর একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার স্বীকৃত হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment