প্রযুক্তিবিদ্যায় অগ্রগতির ফলাফলগুলি আলোচনা করো
প্রযুক্তিবিদ্যায় অগ্রগতির ফলাফল
ইউরোপে প্রযুক্তিবিদ্যায় অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটলে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রভাব যথেষ্ট অনুভূত হয়।
(1) কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি: প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদিত হলে, উদবৃত্ত শস্য বিক্রির মধ্য দিয়ে কৃষকদের জীবন সুখস্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ফসলের উৎপাদন বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটায়।
(2) সামরিক ক্ষেত্রে উন্নতি: প্রযুক্তিগত উন্নতি সামরিক ক্ষেত্রে ধ্বংসের মাত্রাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের এসময় ব্যাপক উন্নতি ঘটে ও নতুন নতুন মারণাস্ত্র তৈরি হয়। আবার এই সকল অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
(3) জাহাজ নির্মাণে অগ্রগতি: জাহাজ নির্মাণে প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। উন্নত জাহাজের সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে পৌঁছোনোর নতুন নতুন জলপথ, নতুন দেশ আবিষ্কার করা সম্ভবপর হয়। তাছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধি, ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা, ক্রীতদাস ব্যাবসার প্রসার প্রভৃতি সম্ভব হয়েছিল উন্নত নৌযান ব্যবহারের মাধ্যমেই।
(4) মুদ্রণে অগ্রগতি ও জ্ঞানের বিস্তার: প্রযুক্তির সাহায্যে বিকশিত হয় মুদ্রণশিল্প। এতে কম সময়ে বেশি সংখ্যক বই ছাপা সম্ভব হলে, তা স্বল্প মূল্যে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে থাকে। বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস-সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই তৈরি করা হলে, তা মানুষের মধ্যে জ্ঞানের প্রসার ঘটায়।
(5) শহরের বিকাশ: কৃষি-সহ বিভিন্ন উৎপাদনমূলক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটলে, কর্মক্ষেত্রে কর্মীর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। এর দরুন গ্রামের বহু মানুষ চলে আসে শহরে। ফলস্বরূপ একদিকে যেমন শহরের বিকাশ ঘটে, তেমনই শহরগুলিতে শিল্পের ক্ষেত্রে সুলভ শ্রমিকের জোগান বৃদ্ধি পায়।
(6) কায়িক শ্রম লাঘব: প্রযুক্তির দরুন বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে থাকে। এতে পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলিতে মানুষের কায়িক শ্রম অনেকটাই হ্রাস পেয়েছিল। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি, আতস কাচ, ঘড়ি-সহ প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় নানান যন্ত্রাংশের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর