মুদ্রণশিল্পের আদিপর্বে কাগজের আবিষ্কার ও ব্যবহার সম্পর্কে লেখো

মুদ্রণশিল্পের আদিপর্বে কাগজের আবিষ্কার ও ব্যবহার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুতপক্ষে পূর্বেকার পার্চমেন্টের পরিবর্তে কাগজের আবিষ্কার এবং ব্যাপক ব্যবহার মুদ্রণ শিল্পে উন্নয়ন ঘটিয়েছিল।
মুদ্রণশিল্পের আদিপর্বে কাগজের আবিষ্কার ও ব্যবহার
(1) কাগজের আবিষ্কার: কাগজ হল মুদ্রণশিল্পের একটি অতি আবশ্যিক অনুষঙ্গ। বস্তুত ছাপাখানা আবিষ্কারের বহু পূর্বেই চিন দেশে কাগজ আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও রসায়নবিদ জর্জ সার্টন (George Sarton) তাঁর Introduction to the History of Science, Vol-1 গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, সম্ভবত খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে (১০৫ খ্রিস্টাব্দ) চিনের সাইলুন বা সানলুই (Cai Lun) সর্বপ্রথম কাগজ প্রস্তুত প্রণালী আবিষ্কার করেন। তুঁত গাছের ছাল, শণ, ছেঁড়া কাপড় ইত্যাদির মন্ড থেকে তিনি কাগজ তৈরি করেন। যদিও প্রথমে এই কাগজ ছিল মোটা।
- কাগজ নির্মাণ প্রযুক্তির প্রসার: পঞ্চম শতকে চিন ও তুর্কিস্থানের সর্বত্র কাগজ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। অধ্যাপক সার্টনের মতে, চিন, সমরখন্দ হয়ে কাগজ প্রস্তুত প্রণালী ইসলামিক দেশগুলিতে সম্প্রসারিত হয়েছিল। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী নাগাদ কাগজ নির্মাণশৈলী চিন থেকে পৌঁছোয় আরবে এবং দ্বাদশ শতকে আরবরা স্পেনে সর্বপ্রথম কাগজ প্রস্তুত করতে শুরু করে। এরপর স্পেন থেকে ত্রয়োদশ শতকে প্রথমে ইটালিতে (১২৭০ খ্রিস্টাব্দ) কাগজ প্রযুক্তি পৌঁছোয়। অতঃপর ইউরোপের নানা দেশে কাগজের প্রচলন ঘটে।
(2) মুদ্রণে কাগজের ব্যবহার: মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হলেও ছাপার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি হল কাগজ। তাই কাগজের পুরোপুরি প্রচলনের আগে মুদ্রণশিল্পের যথার্থ বিকাশও সম্ভব ছিল না। খানিকটা প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক কারণেই মুদ্রণে কাগজের ব্যবহার ছিল জরুরি। এই পরিস্থিতিতে সুদূর চিন দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশ হয়ে কাগজ নির্মাণ প্রযুক্তি ইউরোপে প্রবেশ করলে মুদ্রণশিল্পে গতি আসে।
- কাগজ নির্মাণ কৌশল: প্রাথমিক পর্বে ইউরোপে কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল ছিল ন্যাকড়া এবং পুরোনো শতচ্ছিন্ন পোশাক। জলশক্তি চালিত একটি যন্ত্রে (Stamping Mill) কাগজ নির্মাতাগণ এই উপাদানগুলিকে প্রথমে কাটতেন এবং এরপর জলে ভিজিয়ে কাপড়ের টুকরোগুলিকে নরম করতেন। এর ফলে সেগুলি তরল পিণ্ডের রূপ নিলে সেই পিণ্ডকে একটি বড়োসড়ো কাঠের ফ্রেমযুক্ত জালের উপর ফেলে তার থেকে জল নিষ্কাশন করা হত। তারপর সেগুলিকে শুকনো করা হত। সবশেষে শুকনো কাগজগুলিকে নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী কাটা হত। সবশেষে বলা যায়, কাগজ ছাড়া কম খরচে বহুল পরিমাণ পুস্তক ছাপানো ছিল প্রায় অসম্ভব। তাই মুদ্রণে কাগজের ব্যবহার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর