অপরসায়নের উৎপত্তি কীভাবে হয়

ভূমিকা
আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হল রসায়নবিদ্যা। প্রাচীন কাল থেকেই ব্যাবহারিক দিক থেকে রসায়নবিদ্যার চর্চা হলেও তা কখনোই বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর ছিল না। প্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত সময়ে ইউরোপে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাহীন যে ব্যাবহারিক রসায়নবিদ্যা চর্চিত হত, তা অপরসায়ন নামে পরিচিত। আধুনিক রসায়নবিদ লাইবিন বলেছেন, “অপরসায়নও একটি বিজ্ঞান এবং পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তার অগ্রগতি হয়েছে।”
(1) শব্দের ব্যাখ্যা: প্রাচীন মিশরীয় শব্দ খেম (Khem) থেকে গ্রিক খেমিয়া (Khemia) শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। এই ‘খেমিয়া’ আবার আরবদের উচ্চারণে আলকিমিয়ায় পরিণত হয়। আরবীয় শব্দ আলকিমীয় থেকে ইংরেজি শব্দ অ্যালকেমি (Alchemy) শব্দটির উৎপত্তি হয়। এরই বাংলা প্রতিশব্দ অপরসায়ন।
(2) উৎপত্তি: প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাস থেকেই অপরসায়নের উৎপত্তি হয় বলে মনে করা হয়। মৃত্যুর পরেও মানুষের আর একটি জীবন থাকে-প্রাচীন মিশরীয়দের এই বিশ্বাস থেকে তারা বিশেষ ব্যক্তিদের মৃতদেহ সংরক্ষণ করে মমি তৈরি করত। এই মমি তৈরির পদ্ধতি রীতিমতো রসায়নের প্রয়োগ দ্বারাই সম্ভব হয়েছিল। এইভাবে অপরসায়নের পথ চলা শুরু হয়।
(3) প্রসার: ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মিশর জয়ের মাধ্যমে মিশর থেকে গ্রিসে অপরসায়ন চর্চা প্রবেশ করে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে আরবদের মিশর জয়ের পর। আরবে অপরসায়নচর্চা শুরু হয়। সেখান থেকে অষ্টম শতকে প্রথমে স্পেন এবং পরবর্তীকালে সমগ্র ইউরোপে অপরসায়ন চর্চা প্রসারিত হয়।
মূল্যায়ন
অ্যারিস্টট্লের ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভরসা রেখেই ইউরোপে রসায়নবিদ্যার চর্চা বহুল প্রচলিত হয়, যা অপরসায়নবিদ্যা নামে পরিচিত। অ্যালকেমিস্ট বা অপরসায়নবিদরা রোগ নিরাময় করতেন কিংবা নিম্নমানের ধাতুকে উচ্চমানের ধাতুতে রূপান্তরিত করতেন। কিন্তু এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারতেন না।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর