‘আগুন’ নাটক অবলম্বনে নারী চরিত্রগুলির পরিচয় দাও।
বাংলা গণনাট্যের যুগপুরুষ বিজন ভট্টাচার্যের অনন্য সৃষ্টি ‘আগুন’। বিশেষ যুগ ও কালের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই সৃষ্টির প্রয়াস। যারা এতদিন অবহেলিত, উপেক্ষিত ছিল, সেই সাধারণ মানুষের জীবনের সমস্যা, তাদের দুঃখ-দুর্দশা-সংকটকে উপজীব্য করলেন নাট্যকার। সমস্ত সংকটের অভিঘাত প্রথম আছড়ে পড়ে গৃহস্তের অন্দরমহলে, আর অন্দরমহলের অন্তঃপুরিকারা কীভাবে সামলে চলেন, সেইসব বীরাঙ্গনা নারীদের বহুমাত্রিক দৃষ্টিতে দেখালেন নাট্যকার।
পাঁচটি দৃশ্যসম্বলিত এই ‘একাঙ্কিায়’, প্রথম চারটি দৃশ্যে প্রধানত চারটি নারী চরিত্রের পরিচয় পাই।
(ক) সবজি বিক্রেতা-নেত্যর মা। (খ) কৃষক পরিবারে-কৃষাণি। (গ) শ্রমিক পরিবারে-ক্ষিরি। (ঘ) মধ্যবিত্ত পরিবারে-মনোরমা।
মন্বন্তরপীড়িত বাংলার প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্বিপাকের কাছে এই নারীরা বিন্দুমাত্র নতিস্বীকার করেনি, বরং লড়াকু সংগ্রাম জারি রেখেছিল। তার সুস্পষ্ট পরিচয় নিম্নোক্ত-
আকালের পটভূমিতে নেত্যর মা প্রত্যেকটি দিন খুব ভোরবেলাতে সবজির পসরা সাজিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যেত, তারপর চালের লাইনে দাঁড়াত। কৃষাণিকেও ঘরের সমস্ত কাজ গুছিয়ে সক্কাল সক্কাল চাল নেওয়ার লাইনে দাঁড়াতে হয়। কারখানার শ্রমিক সতীশের স্ত্রী ক্ষিরিকেও নিত্য অভাব-অনটনের মধ্যেও লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। রূঢ় বাস্তবের নিকষ দিকটি উদ্ভাসিত হয়-
“এখন সকালবেলাই তোমার পিন্ডি জোগাই কোত্থেকে বলতো।”
স্বামী ও কন্যা ফুলকিকে নিয়ে সংসারের সমস্ত দায়ভার, এমনকি চালের লাইনে দাঁড়ানো দক্ষ হাতে ক্ষিরিকে সামলে নিতে হয়।
নারীরা পুরুষকে উৎসাহ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে-অধিকার ছিনিয়ে নিতে, সেই সাহসী ও উৎসাহী নারীর প্রতিমূর্তি আমরা দেখতে পাই মনোরমার মধ্য দিয়ে-
“দেখ বাপু, আজ আবার একটু কষ্ট কর।”
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো