ছাত্রজীবন প্রবন্ধ রচনা
‘Student life is the seed time of life.’, অর্থাৎ ‘ছাত্রজীবন হল জীবনের বীজবপনের সময়।’ আজকের ছাত্র আগামী দিনের দায়িত্বশীল নাগরিক। ‘ছাত্রানাং অধ্যয়াং তপঃ’-ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য এটাই যে, অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের তপস্যা। ছাত্রজীবনে আমরা শুধু বই থেকেই শিখি না; আমরা মানসিক, শারীরিক, দার্শনিক এবং সামাজিকভাবে বেড়ে উঠি। ছাত্রজীবন মানেই আমাদের শৃঙ্খলা এবং অধ্যয়ন শিখতে সাহায্য করে। ছাত্রজীবন হল এমন একটি সময় যখন শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত বুদ্ধির মাধ্যমে একজন শৈশব থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হয়। ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সুসম্পন্ন করতে পারলে ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতা অর্জিত হয়। ছাত্রজীবনের অর্জিত শিক্ষা, তাদের আদর্শ ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়।
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে-‘A sound mind is sound body. অর্থাৎ ‘সুস্থ দেহ-ই সুন্দর মন।’ আর এই সম্পদ ছাত্রজীবনে অর্জন করতে হবে। এজন্য ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলো করার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাস্থ্যবান দেহ সুখসম্পদের অধিকারী। যারা অসুস্থ, দুর্বল ও রুগ্ন, তারা জীবনযুদ্ধে কখনও জয়ী হতে পারে না। ছাত্রজীবনের সার্বিক বিকাশে ও উন্নতিতে বিদ্যাচর্চার সঙ্গে সঙ্গে শরীরচর্চাও অত্যন্ত জরুরি।
ছাত্রজীবন অধ্যবসায়, জ্ঞানতৃষ্ণা, ত্যাগব্রত, সততা, আত্মপ্রত্যয় ও মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রকৃষ্ট সময়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় ‘সোনালি সময়’। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সময় ছাত্রদের অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমী হতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে থাকবে কৌতূহলী মনোভাব। অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। এই জ্ঞানপিপাসাই ছাত্রকে গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসাবে। ছাত্রদের মধ্যে থাকবে মানবতাবোধ। মানুষের আর্তক্রন্দনে, দুঃসহ লাঞ্ছনায়, দৈবদুর্বিপাকে ছাত্রসমাজ কখনোই নীরব থাকতে পারে না। সংসারের ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা ছাত্রসমাজকে কখনও আচ্ছন্ন করতে পারে না।
নিয়মকানুন ও নিয়মাবলি ছাড়া বিশ্বজগৎ ছন্নছাড়া। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চলে নির্দিষ্ট নিয়মরীতিতে। এই নিয়মকানুন শৃঙ্খলা যেমন বিশ্বপ্রকৃতির ক্ষেত্রে, ঠিক তেমনই ছাত্রজীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া সমস্ত কিছু বিফল। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক, জাতির ভবিষ্যৎ তাদের উপর নির্ভরশীল। দেশের সাধারণ মানুষ ছাত্রদের উপর নির্ভরশীল। তারাই আগামী দিন দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে। সেইজন্য ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলারক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ছাত্রদের মধ্যে শুধু শৃঙ্খলাবোধ থাকবে তা নয় থাকবে তাদের জীবনসাধনা। আমরা প্রাচীন ‘গুরুকুল’ শিক্ষায় দেখেছি তপস্যার মধ্য দিয়ে শিক্ষা। বর্তমান দিনে ছাত্রদের চাই শিক্ষার প্রতি গভীর সাধনা, তা না হলে তারা সিদ্ধিলাভ করতে পারবে না।
ছাত্রজীবন সমাজের উপযুক্ত মানুষ হয়ে ওঠার সোপান। ছাত্রজীবনেই মজবুত হয় যাবতীয় মানবিক গুণাবলি; যেমন- সেবা, ত্যাগ, দয়া, দেশপ্রেম, পরোপকার প্রভৃতি। যাবতীয় মানবিক গুণাবলি চর্চার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সমাজের এবং দেশের প্রতি তাদের একটা দায়বদ্ধতা থাকে। ছাত্ররা তারুণ্যের দীপ্তিতে প্রজ্জ্বলিত। দেশ ও জাতি গঠনের সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তারাই পারে সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে। প্রত্যেক ছাত্রকে বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকে সৎ, নৈতিক চরিত্রবান, বিবেকসম্পন্ন ও আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত।
‘Education is the backbone of a nation.’, অর্থাৎ শিক্ষার জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া জাতি উন্নত হতে পারে না। ছাত্রজীবনই শিক্ষার আদর্শ সময়। তাই আগামী দিনের জাতির উন্নয়নের কর্ণধার ছাত্রসমাজ।
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা