ছুটি গল্পের নামকরণের সার্থকতা

ছুটি গল্পের নামকরণের সার্থকতা

ছুটি গল্পের নামকরণের সার্থকতা
ছুটি গল্পের নামকরণের সার্থকতা

‘What’s in a name?’ শেকসপিয়রের এই উক্তি যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, বাংলা সাহিত্যে নামকরণ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নামকরণ হল সেই চাবিকাঠি যার সাহায্যে পাঠক গল্পপাঠের আগেই গল্পের বিষয়বস্তুর পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। নামকরণ হল রচনার মর্ম আলো করা শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। বাংলা সাহিত্যে নামকরণের কয়েকটি রীতি প্রচলিত আছে-(১) চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ (২) ঘটনাকেন্দ্রিক নামকরণ (৩) ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ।

আমাদের পাঠ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের নামকরণ ব্যঞ্জনাধর্মী। গ্রামের উদার-মুক্ত প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা দুরন্ত বালক ফটিক কেমন করে শহরের চার দেয়ালের কঠিন বাঁধনে বন্দি হয়ে রইল, কেমন করেই বা এই মুক্ত-পাগল বালক চিরকালের মত ছুটি নিয়ে হারিয়ে গেল, তারই বাস্তব-করুণ কাহিনি হল ‘ছুটি’। অবাধ্য, দুরন্ত, চঞ্চল বালক ফটিক কলকাতায় মামাবাড়ি আসার পর অনাদর, অবহেলা, স্কুলের বন্ধুদের অবজ্ঞা, উপহাস, সর্বোপরি মাতৃতুল্য মামির স্নেহহীন নিপীড়ন বয়ঃসন্ধির পর্বে দাঁড়িয়ে থাকা ফটিককে এক ভীরু, অসহায় জীবে পরিণত করেছিল। মামার কাছে বাড়ি যাওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান পুজোর ছুটিতে সে বাড়ি যেতে পারবে। একথা জানার পর থেকে বহুপ্রত্যাশিত ছুটির অপেক্ষা করেছে সে। অসুস্থ ফটিক মায়ের কাছে যাবে বলে মামাবাড়ি ছেড়ে অজানা পথে পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু হতভাগ্য নিরুদ্দিষ্ট বালক ফটিক যখন আবার মামাবাড়িতে ফিরে আসে তখন তার জীবনের শেষ ছুটির সময় আগত। রোগশয্যার চারপাশে অবুঝ বোকা দৃষ্টি নিয়ে সে খুঁজেছে মাকে। কিন্তু সেই অন্বেষণ কঠিন দেয়ালে বাধা পেয়ে তার আশা ফিরে এসেছে শূন্যতায়। তাই মাকে শেষশয্যার পাশে দেখে অভিমানে ফটিক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মায়ের থেকে। শেষশয্যায় ফটিক তার মার ব্যাকুল আহ্বানে সাড়া দিতে পারেনি। চিরচঞ্চল দুর্জন এই বালক ফটিক যেন এক অবুঝ অভিমানে বহুপথ অতিক্রম করে আগেই চলে গেছে প্রকৃতি জননীর স্নেহাঞ্চলে।

মুক্তপ্রাণের বন্ধনমুক্তি এ গল্পে ‘ছুটি’ বিশেষণে ব্যঞ্জিত হয়েছে। ‘আপদ’ গল্পে নীলকান্ত-এর সঙ্গে ফটিকের আত্মিক যোগ অনুভব করা যায়, যদিও গল্পদুটির পরিস্থিতি আলাদা। ‘ছুটি’-র নামকরণে আছে মুক্তির ব্যঞ্জনা। বন্ধনদশার শৃঙ্খল ঘুচিয়ে ফটিক যে মুক্তমনের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে ফিরতে চেয়েছে-সেখানেই তার যথার্থ ছুটি। বিদ্যালয়ের প্রথাগত ছুটি বাচ্যার্থকে অতিক্রম করে এই ছুটি গভীরতর ব্যঞ্জনা বহন করে বাত্ময় হয়ে উঠেছে। জীবনের পাঠশালা থেকে চিরকালের ছুটি নিয়ে ফটিকের মুক্তি ঘটেছে অনন্ত বিশ্বপ্রকৃতিতে। আর এখানেই ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ হিসাবে ‘ছুটি’ গল্পের সার্থকতা।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment