টাকা লেখো- দ্বাদশ সারণী

টাকা লেখো- দ্বাদশ সারণী

দ্বাদশ সারণী

খ্রিস্টপূর্ব ৪৬২ অব্দে প্লেবিয়ান ট্রিবিউন সি টেরেন্টিলিউস হারসা (C Terentilius Harsa) একটি প্রস্তাব এনে দাবি করেন যে, রাষ্ট্রীয় আইন লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে। প্লেবিয়ান জনতার চাপে পড়ে আইনসংহিতা রচনার জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়। সাধারণ সম্মতির ভিত্তিতে আইনের ১০টি সারণি (Tables) প্রকাশিত হয়। পরের বছর এই ১০টির সঙ্গে আরও ২টি সারণি যোগ করা হয়। এই আইনগুলি কাঠের ফলকে লিখে জনগণের কাছে প্রদর্শন করা হয় বলে একে The Law of Twelve Tables বলা হয়।

দ্বাদশ সারণিতে উল্লিখিত আইনসমূহের যে বিবরণ মেলে, সেগুলি হল-

  1. দেওয়ানি ও কার্যবিধি সংক্রান্ত (১, ২ বা ৩নং ধারা),
  2. পিতৃক্ষমতা সংক্রান্ত আইন (৪নং ধারা),
  3. অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত আইন (৫নং ধারা),
  4. উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন (৬নং ধারা),
  5. সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন (৭নং ধারা),
  6. ফৌজদারি আইন (৮নং ধারা),
  7. সরকারি আইনসমূহ (৯নং ধারা), ধারা)
  8. ধর্মসংক্রান্ত আইনসমূহ (১০ নংও
  9. পরিশিষ্ট (১১ ও ১২ নং ধারা)।
বিষয়বস্তু

দ্বাদশ সারণীকে সংহিতা বা Code রূপে অভিহিত করা হলেও আধুনিক ঐতিহাসিকগণ তা অতিরঞ্জিত বলেই মনে করেন।

  • এই আইনের ৪নং ধারায় পিতার ক্ষমতা বিষয়ে আলোচনা ও পিতার মর্যাদাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
  • দ্বাদশ আইনের ৫নং ধারায় বলা হয়েছে যে, পরিবারের পিতা এবং পিতার মৃত্যুর পর তার পুত্র- ছেলেদের অভিভাবক সর্বদাই পিতা হবেন মাতা নন।
  • ৬ নং ধারাতে উত্তরাধিকার আইনটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পিতার সকল সম্পত্তি উইলের মাধ্যমে বণ্টিত করতে পারবেন। তবে এর আগে তার মৃত্যু হলে পরিবারের নিকট কোনও আত্মীয় উক্ত সম্পত্তির মালিকানা পাবে। তা যদি না থাকে, তবে সেই সম্পত্তি লাভ করবে সাধারণ নাগরিকরা।
  • ৭নং ধারায় ব্যক্তিগত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রসঙ্গে আলোচনা আছে।
  • দ্বাদশ আইনের ৮নং ধারায় ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ক আইনগুলি সংকলিত আছে। প্রাচীন রোমান আইনানুযায়ী নির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধে নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান ছিল।
  • এ ছাড়া ৯নং ধারায় সরকারি আইনসমূহের ব্যাখ্যা ১০ নং ধারায় ধর্মসংক্রান্ত আইন ও বাকি দুটি ১১ ও ১২ নং ধারায় প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ানদের বাধানিষেধ সংক্রান্ত কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- উভয় শ্রেণির মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়।

দ্বাদশ সারণী বা আইন নতুন কোনও আইন নয়, এটি পুরোনো আইনের লিখিত রূপমাত্র। এই আইন প্রকাশিত হবার পরবর্তীকালে প্লেবিয়ানরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয় এবং রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। তা সত্ত্বেও দ্বাদশ সারণী রোমান আইনের ক্ষেত্রে ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। এই আইনকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে রোমান আইনকানুন রচিত হতে থাকে।

আরও পড়ুন – কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কী ছিল

Leave a Comment