যে স্নিগ্ধছায়ায়
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনায় ‘তার স্নিগ্ধছায়ায়’ বলতে রবীন্দ্রনাথ নির্মিত শান্তিনিকেতনের আশ্রমের কথা বলেছেন।
সুখময় নীড়
১৮৬৩ সালে (১২৭০ বঙ্গাব্দ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে দুটি ছাতিম গাছ-সহ ২০ একর জমি বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের কাছে ইজারায় ক্রয় করেছিলেন। সেখানে তিনি একটি অতিথিশাল নির্মাণ করেন এবং নাম দেন ‘শান্তিনিকেতন’। শান্তিনিকেতনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কর্তৃক একটি উপাসনালয়ও প্রতিষ্ঠিত ছিল। রবীন্দ্রনাথ এই স্থানেই ১৯০১ সালে একটি গুরুকুল শিক্ষালয় স্থাপন করেন-নাম দেন ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’। এই বিদ্যালয়ই ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে গৎবাঁধা পাঠ্যসূচি মেনে পড়ানোর রেওয়াজ ছিল না, পড়ানো হত প্রকৃতিমাফিক। গাছের তলাতেই চলত শিক্ষাদান, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এখানে শিক্ষকতা করতেন। প্রতিষ্ঠার বছরেই যে ক-জন ছাত্রছাত্রী বিশ্বভারতীতে প্রবেশ করেছিলেন, সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁদের মধ্যেই একজন। ‘সুখময় নীড়’ নির্মাণ বলতে এখানে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার কথাই বলেছেন প্রবন্ধকার।
কারণ
শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরের শান্তিনিকেতনে একটি আদর্শ শিক্ষায়তন গড়ে তুলেছিলেন। মুখস্থসর্বস্ব ও আচারনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তীব্র কটাক্ষবাণ নিক্ষেপ করেছেন তাঁর বিভিন্ন রচনায়। ‘অসন্তোষের কারণ’ রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “যে শিক্ষা বাহিরের উপকরণ তাহা, বোঝায় করিয়া আমরা বাঁচিব না, যে শিক্ষা অন্তরের অমৃত তাহার সাহায্যেই আমরা মৃত্যুর হাত এড়াইব।” ভারত ও বিশ্বকে একসূত্রে বাঁধতে পারবে এমন এক পাঠকেন্দ্রের পরিকল্পনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ-যে শিক্ষাকেন্দ্রে ব্যাবহারিক, প্রয়োজনের উপযোগী শিক্ষার থেকে জীবনের পাঠ, আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষাদানই হবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাবনারই ফলশ্রুতি শান্তিনিকেতনের ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’। সঙ্গত কারণেই তাই প্রাবন্ধিক বলেছেন যে, শান্তিনিকেতনের, স্নিগ্ধচ্ছায়ায় বিশ্বজন একদিন সুখময় নীড় লাভ করবে।