নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৪

Bantra MSPC High School

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৪

1 (i) ভ্যাতিয়েম হল প্রাক্ বিপ্লব ফ্রান্সের (c) আয়কর। 1
(ii) ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ গ্রন্থটি রচনা করেন – (b) মন্তেস্কু। 
(iii) ‘আমার পরেই মহাপ্রলয় আসছে’ – উক্তিটি করেন।
(a) পঞ্চদশ লুই।
(iv) তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টে শপথ নেন ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের – (a) ২০ জুন।
(v) ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন’ গঠিত হয় – (b) ১৮০৬ খ্রি। 
(vi) ফরাসি বিপ্লবের ‘অগ্নিময় তরবারি’ বলা হয় – (c) নেপোলিয়নকে।
(vii) ‘ফরাসি সমাজের বাইবেল’ বলা হয় (c) কোড নেপোলিয়নকে।
(viii) ভিয়েনা সম্মেলনের সূচনা হয় – (c) ১৮১৫ খ্রি।
(ix) প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায় (b) ভিয়েনা সম্মেলন।
(x) সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হন – (a) নেপোলিয়ন।
(xi) অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্স ছিল একটি – (b) কৃষিনির্ভর দেশ। 
(xii) চিনে মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণা করেছিল – (d) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(xiii) সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটেছিল (a) ইংল্যান্ডে।
(xiv) যে দেশ মিশরে সুয়েজ খাল খনন করেছিল সেটি হল (a) ফ্রান্স।
(xv) ‘এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া’ – এই স্লোগান যে দেশের সেটি হল – (b) জাপানের।
(xvi) পার্ল হারবার-এর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের (b) ৭ ডিসেম্বর।
(xvii) ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয় (b) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর।
(xviii) জাতিপুঞ্জের সদর দপ্তর যে শহরে অবস্থিত তা হল – (b) নিউ ইয়র্কে।
(xix) ইয়াল্টা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল (d) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
(xx) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বর্তমান মহাসচিব হলেন (d) অ্যান্টোনিও গুটারেস।
2
বিভাগ-খ
উপবিভাগ : A
(i) বুরবোঁ রাজবংশের রাজত্বকালে ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল।
(ii) ইয়ং ইটালি দল গঠন করেন জোসেফ ম্যাৎসিনি। 
(iii) জাতিসংঘের জনক হলেন উড্রো উইলসন।
(iv) ‘তৃতীয় বিশ্ব’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন আলজেরিয়ার সাহিত্যিক ফ্রানজ ফ্যানন।
উপবিভাগ : B
(i) লেতর দ্য ক্যাশে নামে গ্রেফতারি পরওয়ানার সাহায্যে বিনা বিচারে যে-কোনো ফরাসি নাগরিককে কারারুদ্ধ করা যেত। – সত্য।
(ii) ‘কার্বোনারি’ দলের আদর্শ ছিল ‘ঐক্যবদ্ধ ইটালি’।— মিথ্যা। [ সঠিক উত্তর : জাতীয় জাগরণ বা রিসর্জিমেন্টো ]
(iii) চার্চিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। — মিথ্যা । [ সঠিক উত্তর : ব্রিটেনের ]
(iv) জাতিপুঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হল নিরাপত্তা পরিষদ। – সত্য।
ক-স্তম্ভের সঙ্গে খ-স্তম্ভের মিলকরণ :
হাতহাস
(i) বাস্তিল দুর্গের পতন → (d) ১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ
(ii) ফরাসি বাহিনী → (c) গ্র্যান্ড আর্মি
(iii) কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো → (b) কার্ল মার্কস
(iv) হিরোশিমা ও নাগাসাকি → (a) জাপান
উপবিভাগ : E
(i) ব্যাখ্যা (c) ফরাসি রাজপরিবারের বিলাসিতা, যুদ্ধনীতি, ঋণনীতি ইত্যাদির জন্য। 
(ii) ব্যাখ্যা – (b) মুক্তির ঘোষণার মাধ্যমে তিনি রাশিয়ায় ভূমিদাসদের মুক্তি দেন।
(iii) ব্যাখ্যা – (a) বেশ কিছু প্রাকৃতিক সুযোগসুবিধা ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছিল।
(iv) ব্যাখ্যা – (b) নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য উভয় রাষ্ট্রের সংঘাত অনিবার্য ছিল।
বিভাগ-গ
3 (i) ফ্রান্সে প্রথম সংবিধান রচিত হয় ১৭৮৯-১৭৯১ খ্রিস্টাব্দ – এই দুবছরের মধ্যে এবং এই সংবিধান রচনায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মুনিয়ের, বারনাভ, মিরাবো, লাফায়েৎ, তালেরা প্রমুখ।
(ii) ষোড়শ লুই ফ্রান্সের অর্থসংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যার মাধ্যমে ফরাসি অভিজাতদের বিশেষ অধিকারগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই অবস্থায় ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা দেশের সমস্ত প্রদেশের পার্লামেন্ট মুলতুবি করে অভিজাতসহ সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নিলে অভিজাতরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
(iii) ফ্রান্সে ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাটি ইংল্যান্ডের ম্যাগনাকার্টা ও বিল অফ রাইটস (১৬৮৯ খ্রি) এবং আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (১৭৯৬ খ্রি)-এর অনুকরণে রচিত হয়।
(iv) রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ডের ফলে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যাভাব ও অর্থাভাবে চরম সংকট তৈরি হয় এবং জনগণ প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরোধিতা করে। অপরদিকে ইউরোপের দেশগুলি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে সচেষ্ট হয়। এই অবস্থায় জেকোবিন দল ফ্রান্সে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তাকে সন্ত্রাসের রাজত্ব বা সন্ত্রাসের শাসন বলা হয়।
(v) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন এবং ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, সুইডেনকে নিয়ে গঠিত চতুর্থ শক্তিজোটের মধ্যে লিপজিগের যুদ্ধ বা জাতিসমূহের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
(vi) স্পেনীয় ক্ষত : ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে নিজ ভ্রাতা যোশেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসালে স্পেনবাসীর আত্মমর্যাদা বা জাতীয়তাবোধে তীব্র আঘাত লাগে এবং পোর্তুগালের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে। উপদ্বীপের যুদ্ধে (১৮০৭-১৩ খ্রিস্টাব্দ) নেপোলিয়নের পরাজয়ের ফলে আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সামরিক মর্যাদা বিনষ্ট হয় এবং স্পেনীয়দের সাফল্য ইউরোপে নেপোলিয়ন বিরোধী মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জোগায় এবং ফরাসি সাম্রাজ্যের সংগঠনে ফাটল ধরায় যা ‘স্পেনীয় ক্ষত’ নামে পরিচিত।
(vii) ফরাসি বিপ্লব রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সূত্র ধরেই নেপোলিয়ন ফ্রান্সের কনসাল পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কনসাল থেকে সম্রাট হয়ে এবং বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, বাক্‌স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শকে ধ্বংস করেন। তা ছাড়া তিনি ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা নিজের কুক্ষিগত করেছিলেন। তাই নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলা হয়।
(viii) ইটালির যুবসমাজকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জোসেফ ম্যাৎসিনি ফ্রান্সের মার্সাই শহরে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ইয়ং ইটালি’ দল গঠন করেন।
(ix) মানবজাতির ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে জাতীয়তাবাদ একটি মহান আদর্শরূপে পরিচিত। জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয় নিজের দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা থেকে। জাতীয়তাবাদ একটি ভাবগত ধারণা। কোনো একটি জনসমাজের মধ্যে বংশ, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি কারণে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হওয়ার ফলে যখন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে ওঠে, তখন সেই আদর্শকে ‘জাতীয়তাবাদ’ বলা হয়।
(x) ভিয়েনা সম্মেলনের গুরুত্ব : ভিয়েনা ব্যবস্থা ব্যর্থ হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপকে প্রায় ৪০ বছর শান্তি দিতে সক্ষম হয়েছিল। এই সম্মেলনই প্রথম সম্মেলন যেখানে ইউরোপীয় সমস্যার সমাধান সমবেতভাবে হয়েছিল। এই সম্মেলনের আদর্শ দ্বারাই পরবর্তীকালে বার্লিন সম্মেলন, ভার্সাই সন্ধি প্রভৃতি অনুপ্রাণিত হয়। এই সম্মেলনে বিশ্বশান্তি রক্ষার প্রয়াসে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে জাতিসংঘ ও জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়। এই সম্মেলনে জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করা হলেও আন্তর্জাতিকতাবাদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(xi) শিল্পবিপ্লব কথাটি সর্বপ্রথম ফরাসি সমাজতান্ত্রিক অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি (১৮৩৭ খ্রি) ব্যবহার করেন। অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমে ইংল্যান্ড ও পরে অন্যান্য দেশে বৈপ্লবিক আবিষ্কার ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে উৎপাদনের পরিমাণগত ও গুণগত মানের যে পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ও প্রচলিত আর্থ-সামাজিক সংগঠনের যে আমূল পরিবর্তন ঘটে, সাধারণভাবে তাকে শিল্পবিপ্লব বলা হয়।
(xii) প্যারি কমিউন : ফ্রান্সের প্যারিস শহরের বিপ্লবী শ্রমিকরা ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে প্যারি কমিউন নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে প্যারিসের শাসনক্ষমতা হস্তগত করে।
উদ্দেশ্য : প্যারিস নগরীর বিপ্লবী পৌরপ্রশাসন পরিচালনা করা। ও প্যারিসের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা, ও সমগ্র ফ্রান্সের ওপর আধিপত্য বিস্তার করা।
কাজ : রাষ্ট্র বা চার্চের নিয়ন্ত্রণ থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত করা। ও শ্রমিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্কার প্রবর্তন করা। দুই মাস শাসন চালানোর পর কমিউনের হাত থেকে ভার্সাই- এর প্রজাতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।
(xiii) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ ফার্দিনান্দ ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো পরিদর্শনকালে জনৈক বসনিয় যুবক ব্ল্যাক হ্যান্ড দলের সদস্য গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ কর্তৃক নিহত হন। এই ঘটনা ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনাকে কেন্দ্ৰ করে ইউরোপ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।
(xiv) মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের, ইটালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলারের মধ্যে। এই চুক্তি মুসোলিনির উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
(xv) Baita MN High School (HS)-এর 3. (ix) -এর উত্তরটি দেখুন।
(xvi) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে প্রিন্স অব ওয়েলস’ নামে এক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে যোগ দেন এবং যুদ্ধোত্তর সময়কালে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কে একটি ঘোষণা প্রকাশ করেন। এটি আটলান্টিক সনদ (চার্টার) নামে পরিচিত।
বিভাগ-ঘ
4 উপবিভাগ : A
(i) ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তা ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব নামে খ্যাত। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ফরাসি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন ফরাসি জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষোভের কারণেই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ঘটেছিল।

অর্থনৈতিক কারণ : 

অর্থনৈতিক দুরবস্থাও ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।
বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা : ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণিভুক্ত ধর্মযাজক ও দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত অভিজাতরা বেশির ভাগ ভূসম্পত্তি ভোগ করলেও তাদের কর দিতে হত না। অপরপক্ষে সরকারের মোট রাজস্বের ৯৬% দিতে হত তৃতীয় সম্প্রদায়কে। বিভিন্ন ধরনের কর প্রদানের পর তাদের হাতে আয়ের মাত্র ২০% থাকত। এই অত্যধিক করের বোঝা তৃতীয় সম্প্রদায়কে বিদ্রোহী করে তুলেছিল।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি : ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু জনগণের আয় সেই হারে বাড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
রাজপরিবারের অতিরিক্ত ব্যয় ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজপরিবারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে ফরাসি রাজকোশ শূন্য হয়ে যায়। 
রাজার কর আরোপের চেষ্টা : রাজপরিবারের বিলাসিতা, যুদ্ধে প্রচুর অর্থব্যয়, রাজকোশের অর্থশূন্যতা প্রভৃতি কারণে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই অর্থ সংগ্রহ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি দরিদ্র তৃতীয় শ্রেণির ওপর নতুন নতুন কর আরোপ করতে থাকেন, যার ব্যয়ভার বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল। ফলে মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
ব্যয়বহুল যুদ্ধ : চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই বিভিন্ন ব্যয়বহুল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিপুল অর্থব্যয় করেন। এরপর ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে আবারও বিপুল অর্থব্যয় হয়। এর ফলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
(ii) Balurghat High School -এর 7. (i) -এর উত্তরটি দেখুন।
উপবিভাগ : B
(iii) Balurghat High School -এর 7. (ii) অথবা-এর উত্তরটি দেখুন।
(iv) ভূমিদাস প্রথা ছিল রাশিয়ার একটি প্রাচীন প্রথা এবং রাশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় ভূমিদাসের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ কোটি। তারা মালিকদের দ্বারা বিভিন্নভাবে শোষিত ও নিপীড়িত হত। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণাপত্র দ্বারা রাশিয়া থেকে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটান। এজন্য তাঁকে মুক্তিদাতা জার’ (Tsar Liberator) বলা হয়। তাদের মুক্তি ও পরবর্তী জীবনের জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
মুক্তির ঘোষণা : রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণাপত্র’ (Edict of Emancipation) স্বাক্ষর করে রাশিয়া থেকে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান। এই ঘোষণাপত্রে ২২টি ধারা ছিল।
মুক্ত ভূমিদাসদের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা :
(১) মুক্ত ভূমিদাসদের ওপর তার মালিকের আর কোনো অধিকার থাকবে না। তারা রাশিয়ার স্বাধীন নাগরিকের মতো জীবনযাপন করতে পারবে।
(২) ভূমিদাসরা পূর্বে প্রভুর যে জমি চাষ করত এখন থেকে তারা ওই জমির অর্ধেক লাভ করবে এবং অবশিষ্ট অর্ধাংশ প্রভুর হাতে থাকবে। জমির মালিককে অর্ধেক জমির ক্ষতিপূরণ সরকার দিয়ে দেবে।
(৩) ‘ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট’ নামক সরকারি কর্মচারী এবং ‘মির’ নামক গ্রাম্য সমিতিকে জমি বণ্টন, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
(৪) মুক্ত ভূমিদাসদের ৪৯ বছর ধরে কিস্তিতে ৬.৫% হার সুদে প্রাপ্য জমির অর্থ শোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
(৫) মুক্ত ভূমিদাসরা যে সমস্ত জমি লাভ করে তার মালিকানা ভূমিদাসদের হাতে না দিয়ে ‘কমিউন’ বা ‘মির’ নামক গ্রাম্য সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভূমিদাসদের মুক্তি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় অবদান। এর ফলে রাশিয়ায় আধুনিক যুগের সূচনা হয়।
উপবিভাগ : C
(v) ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লব দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ : ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লব ইংল্যান্ডের মতো দ্রুত গতিতে ঘটেনি। ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটার বেশ কিছুদিন পরে ফ্রান্সে শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লব ধীরগতিতে ঘটার পিছনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দায়ী ছিল। যেমন –
(১) রাজনৈতিক অস্থিরতা : ফ্রান্সে ধীরগতিতে শিল্পবিপ্লব ঘটার অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতার জন্য ফ্রান্সের বিপ্লবকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা যায়। এর ফলে ফ্রান্সে শিল্প উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ, সময় এবং সুযোগ আসতে বিলম্ব হয়।
(২) শিল্প-সহায়ক উপাদানের অভাব : সুলভ শ্রমিক, কাঁচামালের জোগান, পণ্য বিক্রির বাজার, পরিবহণ ব্যবস্থা ইত্যাদি শিল্পের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির ফ্রান্সে যথেষ্ট অভাব ছিল। ফলে সেখানে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ করা যায়।
(৩) পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে তারতম্য ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব মূলত বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হওয়ার ফলে তার গতি ছিল দ্রুত। এ ছাড়া ইংল্যান্ড সরকারের শিল্পপতিদের অনুকূলে আইন প্রণয়ন ও সংশোধন এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ফ্রান্সে সরকারি উদ্যোগে শিল্পায়ন হলেও তা ইংল্যান্ডের তুলনায় ছিল নগণ্য।
(৪) সামন্ততান্ত্রিক প্রবণতা : ফ্রান্সের জমিদার অভিজাতশ্রেণি শিল্পের কাজকে ঘৃণার চোখে দেখত। তারা জমি ও কৃষি থেকে উপার্জন করতেই বেশি আগ্রহী ছিল। 
(৫) উন্নত পরিসেবার অভাব : ইংল্যান্ডের মতো ফ্রান্সে প্রচুর মূলধন, যন্ত্রপাতি এবং কয়লার প্রাচুর্য ছিল না। ফলে এই সমস্যাগুলি সেই দেশের শিল্পবিপ্লবকে বিলম্বিত করে দেয়।
(vi) বহুদিন থেকেই বিদেশি শক্তিগুলি চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু চিনারা এই বিদেশিদের বর্বর ও ম্লেচ্ছ মনে করত। তাদের সঙ্গে কোনোরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে তারা বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করত না। কিন্তু ঊনবিংশ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আগ্রাসন থেকে চিন রক্ষা পায়নি। চিন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।
নানকিং-এর সন্ধি : আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে চিনা শাসকদের প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ বা প্রথম অহিফেন যুদ্ধ হয় (১৮৩৯-১৮৪২ খ্রি)। মাঞ্জু সম্রাটদের দুর্বলতার দরুন চিন ইংল্যান্ডের সঙ্গে অপমানজনক নানকিং-এর চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। হংকং সহ পাঁচটি বন্দর ইউরোপীয় বাণিজ্যের জন্য মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই বন্দরগুলিতে ইংরেজরা অতিরাষ্ট্রিক অধিকার’ অর্জন করে।
তিয়েনসিন-এর সন্ধি : ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-চিন বা দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধে চিন পরাজিত হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সঙ্গে তিয়েনসিনের সন্ধি (১৮৫৮ খ্রি) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির শর্তানুসারে আরো এগারোটি বন্দর বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এছাড়া এই সন্ধি অনুসারে চিনে খ্রিস্টধর্ম প্রচার, দূতাবাস গড়ে তোলা, বিদেশি বণিকদের চিনা আইনের বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই – এইসব প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়।
শিমনোসেকির সন্ধি : জাপান ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিনকে পরাজিত করে শিমনোসেকির সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করে। জাপান চিনের মাঞ্জুরিয়া, লিয়াওটুং, ফরমোজা প্রভৃতি স্থানে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
ঐতিহাসিক ভিন্যাক বলেন যে, তরমুজকে লোকে যেমন খণ্ড খণ্ড করে খায় সেইভাবেই ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি চিনা তরমুজকে খণ্ড খণ্ড করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে উদ্যত হয়। চারটি তথ্যে বিষয়টি পরিষ্কার, যেমন– (১) রাশিয়া চিনের লিয়াওটুং উপদ্বীপ এবং পোর্ট আর্থার দখল করে নেয়, (২) জার্মানি দখল করে কিয়াওচাও বন্দর ও শাংটুং প্রদেশের অংশবিশেষ, (৩) ইংল্যান্ড ওয়াইহ্যাওয়ে অধিকার করে। এর ফলে ইয়াংসি উপত্যকায় তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, (৪) ফ্রান্স ইন্দো-চিন বা আনাম থেকে চিনের অভ্যন্তর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সুযোগ পায়। এর ফলে ফ্রান্স ইউনান, কোয়াংশি প্রভৃতি অঞ্চলের খনিজ সম্পদ রেলপথের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার অবকাশ পায়।
মুক্তদ্বার নীতি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সব দেশ মিলে চিন দখল করে নিলে মার্কিন বাণিজ্যের আর সুযোগ থাকবে না। সেই কারণে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে তার মুক্তদ্বার নীতি’ ঘোষণা করেন। এই নীতিতে বলা হয় যে, চিনে সব দেশই সমান বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে।

উপবিভাগ : D
(vii) Baita MN High School (HS)-এর 4. (xi) -এর উত্তরটি দেখুন।
(vii) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নীতিসমূহ : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যগুলির বাস্তব রূপায়ণের জন্য সনদের ২ নং ধারায় জাতিপুঞ্জের সাতটি নীতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। নীতিগুলি হল – (১) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সমস্ত ক্ষুদ্র-বৃহৎ সদস্য-রাষ্ট্রই সমান। (২) সামগ্রিক কল্যাণের জন্য সকল সদস্য-রাষ্ট্র জাতিপুঞ্জের সনদ কর্তৃক আরোপিত দায়িত্বগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে। (৩) সমস্ত সদস্য-রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধের মীমাংসা করবে। (৪) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কোনো সদস্য-রাষ্ট্রই কোনো রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করবে না। (৫) সমস্ত সদস্য-রাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে সবরকমভাবে সাহায্য করবে। (৬) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। (৭) যে সকল রাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্র নয় তারাও যাতে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সনদের নীতিগুলি মান্য করে সে বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে।
বিভাগ-ঙ
5 (i) ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফরাসি সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। সামাজিক বৈষম্যই ছিল এই সমাজব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এইরূপ মাত্রাহীন রাজনৈতিক সংকটের কারণে ফ্রান্সকে “রাজনৈতিক কারাগার’ বলে অভিহিত করেছেন। ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা— প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয় শ্রেণি (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল ‘বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল ‘অধিকারহীন শ্রেণি’।
প্রথম শ্রেণি (First Estate) : ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এরা ছিলেন সুবিধাভোগী এবং ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ১%-এরও কম। এদের মোট সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। অথচ এদের দখলে ছিল। ফ্রান্সের মোট জমির ১০%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনো প্রকার করও দিতেন না। যাজকরা বিবাহকর, ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে স্বেচ্ছাকর ছাড়া অন্য কোনো কর দিতে রাজি ছিলেন না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযোগসুবিধা এরা ভোগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। ফরাসি গির্জার বাৎসরিক আয় ছিল প্রায় ১০ কোটি লিভ। যাজকরা আবার দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা উচ্চতর যাজক অর্থাৎ বিশপ, আর্চ-বিশপ, মঠাধ্যক্ষ ও ক্যাননরা এবং নিম্নতর যাজক অর্থাৎ সাধারণ গ্রামীণ পাদরিরা। গির্জার বার্ষিক আয়ের অধিকাংশই ভোগ করত এই প্রভাবশালী উচ্চতর যাজকরা। এরা বিলাসব্যসন, অনাচার, উচ্ছৃঙ্খলতায় নিমজ্জিত ছিল। নিম্নতর যাজকদের প্রতি এরা ঘৃণা পোষণ করত। অন্যদিকে গ্রামের গির্জার পাদরিদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। তাদের বেতন ছিল সামান্য, যদিও এরা ছিল নিষ্ঠাবান। উচ্চতর যাজকদের তারা ঘৃণার চোখে দেখত।
দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate ) : ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিলেন ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ ফ্রান্সের মোট জমির ২০% ছিল এদের দখলে। এরা জমির জন্য সরকারকে কোনো প্রত্যক্ষ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। এরা প্রজাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার সামন্তকর আদায় করত। অভিজাতরাও দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল – (a) জন্মসূত্রে অভিজাত – এরা অসিধারী অভিজাত, দরবারি অভিজাত বা বা সাবেকি অভিজাত প্রভৃতি নামেও পরিচিত ছিল। এরা জন্মসূত্রে অভিজাত সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় যথেষ্ঠ গর্ববোধ করত। এদের সংখ্যা ছিল মাত্র চার হাজার। এরা রাজার মন্ত্রী, সেনাধ্যক্ষ, সভাসদ, দূত, প্রাদেশিক শাসক প্রভৃতি পদগুলিতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করত। (b) কর্মসূত্রে অভিজাত — বুরবোঁ রাজারা অনেক সময় অর্থের লোভে প্রশাসনিক পদ বিক্রি করতেন। যারা এই সমস্ত পদ ক্রয় করতেন তারা কর্মসূত্রে অভিজাত বা পোশাকি অভিজাত নামে পরিচিত ছিলেন। এদের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল পোশাক। এদের সংখ্যা ছিল ৩২,৫০০-৫০,০০০। অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের ঘৃণার চোখে দেখত। পুরোনো অভিজাতদের অবস্থা ছিল বেশ খারাপ। রাজার সভাসদ হিসেবে অভিজাতরা বিশেষ পুরস্কার বা ভাতা পেতেন। নিজেদের মর্যাদার প্রতীক হিসেবে অভিজাতরা তরবারি ধারণের অধিকার পেয়েছিলেন। এ ছাড়া এরা নিজেদের নামের পূর্বে লর্ড, মারকুইস, ব্যারন প্রভৃতি উপাধি ব্যবহার করতেন। গির্জাতে এদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কোনো অভিজাতের সাজা কমিয়ে শিরশ্ছেদ করা হত।
তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate) : ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, বণিক, পুঁজিপতি, শিল্পপতি, শিক্ষক, আইনজীবী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৯৭%-এর বেশি। ফ্রান্সের করের বোঝার বেশিরভাগটাই এদের বহন করতে হত। ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্তরা ছিল তৃতীয় সম্প্রদায়ের ভিত্তি। যাজক ও অভিজাতদের পরেই ছিল এদের স্থান। বুর্জোয়ারা আবার তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল – উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন। বড়ো ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শিল্পপতিরা ছিল উচ্চ শ্রেণির বুর্জোয়া। চিকিৎসক, অধ্যাপক, আইনজীবীরা ছিল মধ্য বুর্জোয়া শ্রেণি। কারিগর, দোকানদার, কৃষক, শ্রমিকরা ছিল নিম্ন বুর্জোয়া। বিদ্যা, বুদ্ধি, উপার্জনে উচ্চ বুর্জোয়ারা বলীয়ান হলেও বংশকৌলিন্যের অভাবে সমাজে তাদের গুরুত্ব কম ছিল। এ ছাড়া তৃতীয় সম্প্রদায়ের অধীন আর একটি গোষ্ঠী ছিল সাঁকুলোৎ বা ভবঘুরে। এদের মধ্যে ছিল শহরের খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ দিনমজুর, কুলি, মালি, ভিস্তিওয়ালা, কাঠুরে, পরিচারক প্রভৃতি।
(ii) ভূমিকা : নেপোলিয়ন অসামান্য প্রতিভাবলে একজন সামান্য সৈনিক থেকে ফ্রান্সের শাসক বা সম্রাট হয়েছিলেন। তিনি সমগ্র ইউরোপব্যাপী এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

নেপোলিয়নের পতনের কারণ :

নেপোলিয়নের অপরিমিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা : নেপোলিয়ন ছিলেন অপরিমিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি। তিনি সামরিক শক্তির জোরে যতই সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন ততই তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে। তিনি সমগ্র ইউরোপের অধীশ্বর হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করার মতো রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি তাঁর ছিল না।
সাম্রাজ্যের দুর্বল ভিত্তি : নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল দুর্বল। সামরিক শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই সাম্রাজ্যের প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল না। তা ছাড়া তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে যেসব জাতিকে ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত করেন, সেসব জাতিও নেপোলিয়ন ও ফরাসি শাসনকে ঘৃণার চোখে দেখত।
স্বৈরাচারী শাসন : নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের হাত ধরে ক্ষমতালাভ করেছিলেন। কারণ ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে তিনি ইউরোপে বংশানুক্রমিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি যে শাসন ইউরোপের ওপর চাপিয়েছিলেন, তা ছিল আরও বেশি মাত্রায় স্বৈরাচারী। জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদের বিরোধী। ইটালি, স্পেন ও জার্মানিতে তিনি তাঁর পুত্র এবং ভাইদের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা : নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে দুর্বল করার জন্য মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা ঘোষণা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশের ওপর বলপ্রয়োগ করতেও পিছপা হননি। ফলে রুষ্ট হয়ে ওইসব দেশ নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং তাঁর সমস্ত পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করেছিল। তাছাড়া এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় নৌশক্তিও তাঁর ছিল না। তাই এই মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা ছিল নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ।
ধর্মীয় বিবাদ : নেপোলিয়নের সঙ্গে পোপ সপ্তম পায়াসের এক ‘ধর্মমীমাংসা চুক্তি’-র ফলে ফ্রান্সে ক্যাথলিক ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এতে প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্ষুব্ধ হয়। আবার পোপ মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন পোপকে বন্দি করেন। এর ফলে সমগ্র ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা নেপোলিয়নের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
স্পেন ও মস্কো নীতি : নেপোলিয়ন স্পেনের সিংহাসনে তাঁর ভাই জোসেফকে বসিয়ে স্পেনবাসীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করেছিলেন। নেপোলিয়ন স্পেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান করলে স্পেনীয়রা সেই অভিযান ব্যর্থ করে দেয়। নেপোলিয়ন এ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘স্পেনীয় ক্ষতই আমাকে ধ্বংস করেছে (‘The Spanish ulcer ruined me’)। নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ ছিল দূরবর্তী ও ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের মস্কো অভিযান। এই অভিযানের সামরিক ব্যর্থতা তাঁর মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল।
ইংল্যান্ডের বিরোধিতা : নৌশক্তিতে বলীয়ান ইংল্যান্ডের বিরোধিতা নেপোলিয়নের পতনকে সুনিশ্চিত করেছিল। ইংল্যান্ড নীলনদ ও ট্রাফালগারের যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাস্ত করে এবং তাঁর মহাদেশীয় অবরোধ প্রতিহত করে। এছাড়া ইংল্যান্ড উপদ্বীপের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নেপোলিয়নের শক্তিকে বিধ্বস্ত করেছিল।
জাতিসমূহের যুদ্ধ : নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতা ইউরোপের দেশগুলিকে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে লড়াইয়ে নামার প্রেরণা জোগায়। ইটালি, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশে মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয় এবং চতুর্থ শক্তিজোট (ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, প্রাশিয়া) লিপজিগের বা জাতিসমূহের যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করে।
উপসংহার : বহু যুদ্ধে জয়ী দুর্ধর্ষ সামরিক শক্তির অন্যতম অধিকারী নেপোলিয়ন ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হয়ে ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে নির্বাসিত হন, কিন্তু পরের বছর তিনি আবার ফ্রান্সে এসে সিংহাসন দখল করেন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলির মিলিত আক্রমণে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন ওয়াটারলুর যুদ্ধে তিনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হন। অবশেষে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে এই দ্বীপেই নেপোলিয়নের মৃত্যু হয়।
(iii) Bankura Zilla School -এর 5. (iii) -এর উত্তরটি দেখুন।
এগুলিও দেখতে পারেন


সেট ১ ➤ Baita MN High School (HS)

সেট ২ ➤ Balurghat High School

সেট ৩ ➤ Bankura Zilla School

Leave a Comment