পরিবহণ বলতে কী বোঝো? পরিবহণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখো। |
পরিবহণ:
যে পদ্ধতিতে স্থানান্তরযোগ্য দ্রব্য এবং যাত্রীকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়, তাকে পরিবহণ বলে। পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত রাস্তা, যানবাহন ও নিয়মকানুনকে একসঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক ভারতে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেমন–
A স্থলপথ (Roadways):
ভূপৃষ্ঠস্থ স্থলভাগকে কেন্দ্র করে যে পরিবহণ পথ গড়ে উঠেছে, তাকে স্থলপথ পরিবহণ বলে।
শ্রেণিবিভাগ:
স্থলপথে প্রধানত দু-ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যেমন-
সড়ক পরিবহণ: স্থলপথে ট্রলি, ভ্যান, সাইকেল, টেম্পো, বাস, লরি, অটো, টোটো প্রভৃতি চলাচলের জন্য গড়ে ওঠা পরিবহণ ব্যবস্থা হল সড়ক পরিবহণ। স্বল্প দূরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে লাভজনক মাধ্যম। সড়কপথ (i) জাতীয়, (ii) রাজ্য, (iii) জেলা, (iv) গ্রাম্য ও (v) সীমান্ত প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত।
রেল পরিবহণ: স্থলভাগের যে নির্দিষ্ট পরিবহণ পথ ধরে ডিজেল ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনচালিত রেলগাড়ি চালানো হয়, তাকে রেল পরিবহণ বলে। মাঝারি দূরত্ব এবং অধিক পরিমাণ পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলপথ সবচেয়ে সুলভ মাধ্যম। প্রসঙ্গত, রেল পরিবহণের দুটি বিশেষ রূপ দেখা যায়। যথা- (ⅰ) ভূপৃষ্ঠস্থ পণ্য ও যাত্রীবাহী রেলপথ। (ii) ভূগর্ভস্থ যাত্রীবাহী মেট্রো রেলপথ।
B জলপথ (Waterways) :
সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ, খাল প্রভৃতি জলভাগকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পরিবহণ ব্যবস্থাকে জলপথ পরিবহণ বলে। জলপথগুলিতে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ প্রভৃতি চলাচল করে।
শ্রেণিবিভাগ:
জলপথকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
অভ্যন্তরীণ জলপথ: কোনো দেশের নদনদী ও খালপথকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ জলপথ গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক জলপথ : কোনো বহির্দেশীয় অংশে থাকা সাগর বা মহাসাগরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক জলপথ গড়ে ওঠে।
C আকাশপথ (Airways):
বায়ুমণ্ডলীয় যে পথ ধরে বিভিন্ন উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবহণ যান চলাচল করে, তাকে আকাশপথ পরিবহণ বলে। আকাশপথে রকেট, বিমান, হেলিকপ্টার প্রভৃতি চলাচল করে। সবচেয়ে দ্রুতগামী পরিবহণ যানগুলি এই আকাশপথে চলাচল করে বলে অধিক দূরত্বে এই পথ খুবই উপযোগী।
শ্রেণিবিভাগ :
আকাশপথে পরিবহণ আবার দুটি ভাগে বিভক্ত –
অভ্যন্তরীণ আকাশপথ: যে-কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অভ্যন্তরীণ আকাশপথ অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক আকাশপথ : সারা পৃথিবীব্যাপী বায়ুমণ্ডল জুড়ে আন্তর্জাতিক আকাশপথ অবস্থিত।
D নলপথ (Pipeline):
যে পথে নলকে ব্যবহার করে পার্থিব বিভিন্ন সম্পদের পরিবহণ করা হয়, তাকে নলপথ পরিবহণ বলে। এই নলপথকে ব্যবহার করে পানীয় জল, খনিজ তেল, স্বাভাবিক গ্যাস প্রভৃতি পরিবহণ করা হয়।
E রজ্জুপথ (Ropeways):
দুর্গম পাহাড়ি বা পার্বত্য অঞ্চলে দড়ি (Rope)-কে ব্যবহার করে যে পরিবহণপথ গড়ে ওঠে, তাকে রজ্জুপথ বলে। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলের স্বল্প পরিসরে গভীর উপত্যকা পারাপারের জন্য এবং মালভূমিতে কম দূরত্বে খনিজ দ্রব্য প্রেরণের জন্য রজ্জুপথ বা Ropeway ব্যবহার করা হয়।