পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল আলোচনা করো

পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল আলোচনা করো
পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল আলোচনা করো।

পৃথিবীর আবর্তন গতির সংজ্ঞা: 

পৃথিবী তার কক্ষতলের সঙ্গে 66½° কোণে হেলে নিজ অক্ষ বা মেরুদণ্ডের চারদিকে নির্দিষ্ট গতিতে 23 ঘণ্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ডে বা প্রায় 24 ঘণ্টায় পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর এই গতিকে আবর্তন গতি বলে।
সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের উপর এইরূপ অনবরত আবর্তিত হওয়ায় এর প্রভাবে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়:–

• দিন-রাত্রির সৃষ্টি: 

আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশটি ধীরে ধীরে সূর্যের সামনে আসে সেখানে সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যেমন দিনের সৃষ্টি হয় তেমনই পৃথিবীর যে অংশটি সূর্য থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায় সেখানে সূর্যাস্তের মাধ্যমে রাত্রি ঘনিয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তের মৃদু ক্ষীণ আলোকে বলা হয় ঊষা (Dawn) ও সূর্যাস্তের পর মৃদু ক্ষীণ আলো গোধূলি (Twilight) নামে পরিচিত। ছায়াবৃত্ত (Shadow circle) দিন ও রাত্রির মধ্যে এক কাল্পনিক সীমারেখার সৃষ্টি করে।

• উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি: 

আবর্তন গতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে নিয়মিত এবং পরিমিত অনুকূল আলো ও উত্তাপ এসে পড়ে তাকে ব্যবহার করেই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি হয়।

• নিয়তবায়ু ও সমুদ্রস্রোতের দিক বিক্ষেপ : 

পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে নিয়ত বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় (ফেরেল আবিষ্কৃত সূত্র)।
নিয়ত বায়ুর দিক বিক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমুদ্রস্রোতেও একই ঘটনা ঘটে।

• জোয়ারভাটা সৃষ্টি: 

আবর্তন গতির ফলে প্রতিদিন পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং তার বিপরীত অংশে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। আবর্তন গতি না থাকলে চাঁদের পরিক্রমণ অনুযায়ী পৃথিবীর কোনো স্থানে প্রতি 27 দিনে একবার মুখ্য জোয়ার হত।

• সময় গণনা: 

পৃথিবীর একটি পূর্ণ আবর্তনের সময়কে 24 ঘণ্টা ধরা হয়। এই সময়কে আবার 24 ভাগে ভাগ করলে তার প্রতিটি ভাগ থেকে 1 ঘণ্টা পাওয়া যায়। আবার এই 1 ঘণ্টাকে 60 ভাগে ভাগ করে তার প্রতিটি ভাগ থেকে 1 মিনিট সময় পাওয়া যায় এবং এই 1 মিনিটকে আবার 60 ভাগে ভাগ করে তার প্রতিটি ভাগ 1 সেকেন্ডের হিসাব দেয়।

• দিক নির্ণয়: 

পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখে যেমন পূর্ব-পশ্চিম দিক নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে, একইভাবে উত্তর-দক্ষিণ দিক নির্ণয়ে সুবিধা হয়েছে।

• পৃথিবীর আকৃতির উপর প্রভাব: 

আবর্তন গতি থাকার ফলে পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল (পূর্ব-পশ্চিম) কিছুটা স্ফীত এবং মেরুদ্বয় (উত্তর-দক্ষিণ) কিছুটা বসে গিয়ে পৃথিবীকে অনেকটা অভিগত গোলকের চেহারা দিয়েছে।

• অন্যান্য প্রভাব: 

আবর্তন গতির উল্লিখিত প্রভাবগুলি ছাড়াও – (i) ভূচৌম্বকত্ব সৃষ্টি, (ii) দৈনিক উন্নতার হ্রাস-বৃদ্ধি এবং (Ⅲ) বায়ুচাপ বলয় সৃষ্টিতে আবর্তন গতির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ বলয় তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment