বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ো গল্পের বিষয়বস্তু
পেলাইও তার বাড়িতে স্ত্রী এলিসেন্দা আর শিশুপুত্রকে নিয়ে থাকে। এক ভয়ানক দুর্যোগের দিনে দুপুরবেলায় পেলাইও তাদের বাড়ির কাদা ভরা ডোবায় অদ্ভুত ধরনের ডানাওয়ালা একটি বৃদ্ধ মানুষকে দেখে প্রথমে পেলাইও ঘাবড়ে যায়। পরে স্ত্রী এলিসেন্দাকে ডেকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ও তার সঙ্গে কথা বলে তাকে একজন নাবিক হিসেবে কিন্তু গোনসাগার সাবধানবাণীকে কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে দিনে দিনে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। ছোটোখাটো মেলার আকৃতি নেয় পেলাইওর বাড়ির চারপাশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীও নিয়োগ করতে হয়। মেলায় সমবেত মানুষের বর্জ্যপদার্থ পরিষ্কার করার খরচ বাবদ পাঁচ সেন্ট দর্শনি ধার্য করে পেলাইও।
দর্শনি অর্থে পেলাইওর পরিবারে সচ্ছলতা এল। ফলে সে পাহারাদারের চাকরি ছেড়ে খরগোশের খামার তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করতে শুরু করে। কিন্তু দেবদূত দেখতে আসা লোকের পরিমাণ ক্রমে কমতে শুরু করে। কারণ, প্রথমত মানুষ যে অলৌকিক প্রাপ্তির আশা করেছিল তা ঘটেনি, অন্যদিকে মেলায় উপস্থিত একটি মাকড়সা মেয়ের দুঃখের কাহিনি আগত মানুষজনকে দেবদূতের চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। যদিও সাব্যস্ত করে। কিন্তু তাদের প্রতিবেশী এক মহিলা ওই ডানাওয়ালা বৃদ্ধকে দেবদূত বলে ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন-হয় দেবদূত তাদের বাচ্চাকে নিয়ে যেতে এসে পথে বৃষ্টির দাপট সামলাতে না পেরে এভাবে আটকে পড়েছেন অথবা কোনো দৈব্য কারণে তার এমন অবস্থা।
পেলাইও নগররক্ষকের কাজ করত। সে তার খাটো মুগুর নিয়ে নজরদারি চালিয়ে যায় এবং রাত্রে শুতে যাওয়া আগে মুরগির খাঁচায় বুড়োটিকে বন্দি করে রাখে। তবে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কাতারে কাতারে নরনারী পেলাইওর বাড়িতে হাজির হয় এবং দেবদূতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বদলে তারা ঠাট্টা-মশকরা করতে থাকে।
ঘটনাটি ঈশ্বর বিষয়ক হওয়ায় একটি ধর্মীয় সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য স্থানীয় পাদরি (পাদ্রে) গোনসাগা ঘটনাটি সরেজমিনে পরীক্ষা করার জন্য খাঁচায় ঢুকে পড়েন। কিন্তু দেবদূত তাঁদের দেবভাষা লাতিন বুঝতে না পারায় এবং তার দেহে প্রাকৃতিক দুর্যোগের গন্ধ পাওয়ায় গোনসাগা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি অবশ্য সকল বিচারের ভার তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর সঁপে দেন আর উৎসুক জনতাকে জানান, শয়তানের ছলের অভাব হয় না। সে দেবতার চেহারা ধারণ করে সরলমতি অসাবধানি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
পেলাইও আর তার স্ত্রীর এ বিষয়ে কোনো আপশোশ ছিল না, কারণ ইতোমধ্যে তাদের দোতলা বাড়ি তৈরি হয়ে যায় আর তাদের জীবনযাত্রায় শৌখিনতার ছোঁয়াও লাগে।
সমস্যা সৃষ্টি হল তখন দেবদূত যখন প্রায় অন্ধ অবস্থায় অশক্ত শরীরে বাড়ির সর্বত্র চলাফেরা করতে লাগল। যেন একই সময়ে অনেকগুলো দেবদূত সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে মনে হতে লাগল পেলাইওদের। তারা আরও ভয় পায় দেবদূতের মরণাপন্ন অবস্থা দেখে, কারণ দেবদূত মারা গেলে কী কর্তব্য তা তারা জানত না। কিন্তু আকস্মিকভাবে প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও সে বেঁচে রইল।
ডিসেম্বরের গোড়ায় দেবদূতের ডানায় নতুন পালক গজাতে শুরু করল; কিন্তু সে সদা সতর্ক থাকত যাতে তার গজানো পালক কেউ দেখতে না পায়, আর তার গাওয়া নাবিকের গান কেউ না শোনে। এর কিছুদিন পরে একদিন সকালে যখন এলিসেন্দা দুপুরের রান্নার জন্য পেঁয়াজকলির গুচ্ছ কাটছিল তখন জানালা দিয়ে সে দেখে যে বিদঘুটে অঙ্গভঙ্গি করে দেবদূত ওড়ার চেষ্টা করছে। অবশেষে সে সফল হয়। অসুস্থ শকুনের মতো দেবদূত দূর আকাশে ছোটো থেকে আরও ছোটো বিন্দুতে পরিণত হয়ে এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়। এলিসেন্দা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, কারণ দেবদূত আর তার সুখী জীবনে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না।
আরও পড়ুন – বিড়াল প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ও নামকরণ