মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব আলোচনা করো

মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব আলোচনা করো

মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব আলোচনা করো
মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব আলোচনা করো

মনসবদারি ব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও ভারতে মুঘল শাসনব্যবস্থাকে সুসংগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করার লক্ষ্যে এই ব্যবস্থার প্রয়োগ যথেষ্ট বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত ছিল।

(1) সেনাবাহিনী গঠন

মনসবদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে মুঘল সম্রাটেরা খুব সহজে এক বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

(2) সম্রাটের ক্ষমতা বৃদ্ধি

মনসবদারদের আনুগত্য, কর্তব্যবোধ এবং প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা মুঘল প্রশাসন ও ব্যক্তিগতভাবে সম্রাটের হাত শক্ত করেছিল। এর ফলে মনসবদারি ব্যবস্থা ভারতে এক কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

(3) অভ্যন্তরীণ বিরোধের অবসান

মনসবদারদের জাতিভিত্তিক বিন্যাসের দরুন ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, যেমন- তুর্কি, উজবেক, পারসিক, আফগান, রাজপুতদের পারস্পরিক সন্দেহ ও ঈর্ষাবোধ তাদের সম্মিলিতভাবে সম্রাটের বিরোধিতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে সম্রাট প্রয়োজনে এদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যত নিজেকে সুরক্ষিত রাখতেন। রাজকীয় আনুকূল্য লাভের জন্য তারাও দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শনে সচেষ্ট ছিলেন।

(4) বংশানুক্রমিক না হওয়ার সুবিধা

আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি প্রথায় বংশানুক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ না থাকায়, সামন্তপ্রথার আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা ছিল না। মনসবদার পদপ্রার্থীদের কাছে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদলাভের সুযোগ গড়ে উঠেছিল। সম্পত্তির উপর বংশানুক্রমিক অধিকার না থাকায় অনেকে মনে করেন যে, মনসবদার কর্তৃক সাধারণ প্রজাদের থেকে অতিরিক্ত শোষণ ও অত্যাচারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের প্রবণতা হ্রাস পেয়েছিল।

(5) একের মধ্যে অনেক

মনসব প্রথা ছিল একের মধ্যে অনেক। যদুনাথ সরকারের মতে, এই একটি ব্যবস্থার মধ্যে সেনাবাহিনী, অভিজাতবর্গ, সাধারণ প্রশাসক, এমনকি বিচারক, ডাকব্যবস্থার নিয়ামক ইত্যাদি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।

আতহার আলির মতে, আকবর যে রাজনৈতিক রসায়ন (Political Chemistry) থেকে এত বৃহৎ, দীর্ঘস্থায়ী ও গতিশীল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, তা হল প্রশাসনের প্রণালীবদ্ধকরণ (Systematization of Administration) এবং প্রণালীবদ্ধকরণের সাংগঠনিক রূপ ছিল মনসবদারি ব্যবস্থা। শক্তিশালী ও বিচক্ষণ শাসকদের আমলে এই ব্যবস্থা সাম্রাজ্যকে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। অবশ্য দুর্বল শাসকদের আমলে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হতে পারেনি। এই দোষ প্রথার নয়, এই দোষ প্রয়োগের ব্যর্থতার।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment