“মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি”- কোন্ প্রসঙ্গে এবং কেন ফটিক একথা বলেছে?
উক্তির প্রসঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ ছোটোগল্পে ফটিক গ্রাম থেকে কলকাতায় মামার বাড়িতে এসেছিল লেখাপড়া শেখার অভিপ্রায়ে। কিন্তু কলকাতায় আসার পর বিশেষত মামার বাড়িতে স্নেহহীন পরিবেশে তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। স্কুলেও তার মতো নির্বোধ এবং অমনোযোগী বালক আর ছিল না। চারপাশের বিরুদ্ধে পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্ত ফটিক সাহস করে মামার কাছে জানতে চান- “মামা, মার কাছে কবে যাব।” উত্তরে ফটিকের মামা জানিয়েছিলেন-“স্কুলের ছুটি হোক।” এরপর একদিন মামাবাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে ফটিক। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে পথহারা ফটিককে মামার বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ। রাত্রে জ্বরের ঘোরে মামাকে কাছে পেয়ে বাড়ি যাওয়ার প্রসঙ্গে এখন তার ছুটি হয়েছে কিনা তা জানতে চায় ফটিক।
উক্তির কারণ
অনেক আগ্রহ নিয়ে বিধবা মায়ের আশ্রয় থেকে শহরের পথে পা বাড়িয়েছিল ফটিক। কিন্তু ফটিকের আগমনকে তার মামি অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধি ছাড়া আর কিছু মনে করতে পারেননি। নতুন স্থানে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে ফটিক নিজেও সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে প্রভুহীন কুকুরের মতো দিন কাটাতে থাকে। বন্দিজীবনের অবসরে ফটিক ছুটির স্বপ্ন দেখে, কল্পনায় পৌঁছে যায়-ঘুড়ি ওড়াবার খোলা মাঠ, ঘুরে বেড়ানোর নদীতীর অথবা সাঁতার কাটার সংকীর্ণ স্রোতস্বিনীতে।
বাস্তবে, মামার কথামতো স্কুলের ছুটি না হলে সে বাড়িতে ফিরতে পারবে না। কিন্তু স্কুলের ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না পেরে বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ি ত্যাগ করে ফটিক। তাকে ফিরিয়ে আনা হলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ফটিক বলে-“আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।” অর্থাৎ তাকে ফিরিয়ে আনার কারণ কি তার ছুটি না হওয়া? -সেই প্রসঙ্গে জানতেই ফটিক এ কথা বলেছে।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো