‘মামীর স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দূগ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে,’- কোন্ প্রসঙ্গে ফটিকের এরূপ ধারণা জন্মেছে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ ছোটোগল্প থেকে আলোচ্য উক্তিটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বম্ভরবাবু ফটিকের পড়াশোনা এবং মানসিক উন্নতির জন্য ফটিককে কলকাতায় নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। দাদার প্রস্তাবে ফটিকের বিধবা মাতা সহজেই রাজি হয়ে যায়। ফটিকও “কবে যাবে”, “কখন যাবে” বলে মামাকে অস্থির করে তোলে। উৎসাহে তার রাত্রে ঘুম পর্যন্ত আসতে চায় না।
কলকাতায় পৌঁছে মামির সঙ্গে প্রথম আলাপেই বালক ফটিক বুঝতে পারে-মামি এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধিতে মনে মনে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি নিজের তিনটি ছেলেকে নিয়ে নিজের নিয়মে ঘরকন্না করছিলেন। এর মধ্যে সহসা একটি তেরো বছরের অপরিচিত এবং অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে এসে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ফটিকের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বম্ভরবাবু এই বয়সে কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছেন বলে ফটিকের মামি মনে করতেন। নতুন ও অপরিচিত স্থানে ফটিকও ঠিক খাপ খাওয়াতে পারে না। সে নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সবসময় লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে থাকে।
অথচ এই বয়সেই স্নেহের জন্য তার মনে অতিরিক্ত কাতরতা জন্মায়। কিন্তু এই সময়েই মামির কাছ থেকে সে বিন্দুমাত্র স্নেহের আভাসটুকু পর্যন্ত পায়নি। সুতরাং ফটিকের অবস্থা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হয়ে যায়। চারিদিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাকে পদেপদে কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। ফটিকের মতো বালক বয়সে নারীজাতিকে সাধারণত কোনো এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলে ধারণা হতে আরম্ভ হয়। কিন্তু এমন সময়ে মামির স্নেহহীন উপেক্ষা তার কাছে কীরূপ দুঃসহ বলে মনে হত, আঘাত করত, সেটা বোঝানোর প্রসঙ্গে ফটিকের এরূপ ধারণা জন্মেছিল।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো