রাজনৈতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে মার্কসীয় আলোচনার ওপর একটি টীকা লেখো |
রাজনৈতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে মার্কসীয় আলোচনা
মার্কসের পূর্বে ও তাঁর সমসাময়িক কালে রচিত সকল রাজনৈতিক তত্ত্ব ছিল মূলত ভাববাদী। মার্কস এবং এঙ্গেলগ্ন এঁদের বিরোধিতা করতে গিয়ে যেসব রচনা তুলে ধরেছেন, তা বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলে স্বীকৃত হয়।
প্রথমত, মার্কস ও এজোন্ন তাঁদের রচনায় বিজ্ঞানকে প্রযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে লেনিন, ভালিন, মাও-জে- দং, রোজা লুক্সেমবার্গ প্রমুখের গবেষণার দ্বারা মার্কসীয় তত্ত্বের বিকাশ ও প্রসার ঘটে। এই গবেষকগণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রতত্বের ধারায় গড়ে ওঠা সমস্ত রাজনৈতিক তত্বকে বুর্জোয়া মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই তত্ত্বকে তাঁরা বলেছেন অবৈজ্ঞানিক।
দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের আলোকে মার্কসীয় তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে। এই আলোচনায় মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রের আবির্ভাব, বিকাশ এবং বিলুপ্তির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তৃতীয়ত, মার্কসবাদীগণ তাঁদের তত্ত্বে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের আলোচনা ও শ্রেণিদ্বন্দ্বের বিশেষ রূপ ও তার সঙ্গো রাষ্ট্রের বিন্যাসকে তুলে ধরে সমাজ-বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছেন। মার্কসবাদী তত্বে সমাজজীবনের সঙ্গেঙ্গ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়গুলিকে সন্নিবিষ্ট করে দেখানো হয়েছে যে, সমাজজীবনের ভিত্তির মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে সমাজ পরিবর্তনের কারণ।
চতুর্থত, মার্কসীয় তত্ত্ব শ্রেণিসংগ্রামের চিন্তাধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। শ্রমিক শ্রেণি উপলব্ধি করে যে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজন আছে। এই সংগ্রাম হল রাজনৈতিক সংগ্রাম, যা পরিচালনায় শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক দল অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সংগ্রাম উৎপাদন প্রণালীর পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম বা সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম। অর্থাৎ এই সংগ্রামই হল সর্বোচ্চ পর্যায়ের শ্রেণিসংগ্রাম।
উপসংহার:
মার্কসবাদ মূলত সংগ্রামের চালিকাশক্তির বিষয়গুলিকে তুলে ধরে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করে। এই বিপ্লবের মাধ্যমে প্রলেতারিয়েত শ্রেণি ক্ষমতা দখল করবে এবং প্রলেতারীয় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ মার্কসীয় তত্ত্ব একটি কর্মক্ষেত্রের পথ দেখায়।