শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা
কোনো জাতি কতটা উন্নত তা বোঝা যায় সেই জাতির শিক্ষার মাধ্যমে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শিক্ষারই লক্ষ্য। আর এই শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যেসব মাধ্যমে জনগণের কাছে সংবাদ, মতামত, বিনোদন, পৌঁছোনো বা পরিবেশন করা হয় তাকে গণমাধ্যম বলে। সাধারণ অর্থে গণমাধ্যম বলতে জনগণের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমকে বোঝায়। প্রাচীনকালে কীর্তন, কবিগান, যাত্রাগান, মঙ্গলগান, ছড়া, লোককথা, পুতুল নাচ ইত্যাদির মাধ্যম ছিল। এগুলি মূলত লোকশিক্ষা, লোকমনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হত। বিজ্ঞানের হাত ধরে বর্তমানে সংবাদপত্র, দূরদর্শন, বেতার, চলচ্চিত্র, ইনটারনেট গণমাধ্যম হিসাবে প্রচলিত আছে।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম হিসাবে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সংবাদপত্র আজ পৌঁছে গেছে শহর থেকে গ্রামগঞ্জে মানুষের হাতে হাতে। রাজনীতি, খেলাধুলো, শিল্প, কৃষি, আবহাওয়া সমস্ত খবরই পাওয়া যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। দেশ-বিদেশের নানান তথ্য জানতে পেরে মানুষের জ্ঞানের সমৃদ্ধি ঘটে। শুধু তাই নয় ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। বর্তমানে ‘পড়াশোনা’, ‘বিজ্ঞানচর্চা’ প্রভৃতি শিরোনামে পত্রিকায় আলাদা আলাদা পাতা থাকে। যুবকদের জন্য থাকে কর্মসংস্থাপনের বিজ্ঞাপন। সার্বিকভাবে বলা যায় আদর্শ গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের বিশেষ ভূমিকা আছে।
বেতার গণশিক্ষার একটি শ্রুতিধর্মী মাধ্যম। বিশেষ করে নিরক্ষর মানুষ, যারা সংবাদপত্র পড়তে পারে না তারা বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন খবর জানতে পারে। বেতারে কৃষিসংবাদ, কৃষিশিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনা, আবহাওয়ার খবর, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রভৃতি সম্প্রচারিত হয়। তাই সাধারণ গ্রামীণ জীবনের মানের উন্নতির ক্ষেত্রে বেতার জনসাধারণের শুধু বন্ধু নয়, একজন শিক্ষকও বটে।
দূরদর্শন হল এমন একটি গণমাধ্যম যেখানে দেখা ও শোনার মাধ্যমে শিক্ষালাভ করা যায়। দূরদর্শনে বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কৃষিবিদ্যা প্রভৃতি সম্প্রচারিত হয়। ফলে জনশিক্ষার বিস্তার ঘটে। দূরদর্শন বিভিন্ন সময় নানারকম বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিশেষ উপকৃত হয়। সাহিত্যমূলক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রভৃতি অনুষ্ঠান দূরদর্শনে দেখানো হয়। ফলে দূরদর্শন জনগণের মধ্যে এক নান্দনিক রুচির বিকাশ ঘটায়। জনশিক্ষায় দূরদর্শনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আধুনিক যুগে গণমাধ্যমের অন্যতম একটি উপাদান চলচ্চিত্র। মানুষের উপর চলচ্চিত্রের প্রভাব অপরিসীম। চলচ্চিত্র বা সিনেমা চিত্তবিনোদন ছাড়া সমাজ গঠনে, শিক্ষাবিস্তারে ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাকে যুগোপযোগী, সর্বজনীন, সহজবোধ্য, আনন্দময় করে তোলবার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অনবদ্য। সাহিত্য, শিল্পকলা, অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, স্থাপত্য, ভাস্কর্য প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয় চলচ্চিত্র।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের নবতম সংযোজন ইনটারনেট। বর্তমানে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে ও কম সময়ে শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। ইনটারনেট শিক্ষার্থী তথা জনসাধারণের কাছে বিশ্বের দরজা খুলে দিয়েছে। ইনটারনেট বর্তমান যুগের সেরা গণমাধ্যম।
সমাজ-সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের প্রতি গণমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। গণমাধ্যমকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের দর্পণ বা আয়না। সমাজ বা রাষ্ট্রে যা ঘটছে সে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি অবিকৃতভাবে গণমানুষের সামনে তুলে ধরা গণমাধ্যমের কাজ। গণমাধ্যমের দায়িত্ব জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো, সচেতন করা, প্রভাবিত করা, বিনোদন দেওয়া, জ্ঞানের ধারাকে সচল রাখা। গণমাধ্যমকে দেশের প্রতি তথা সমাজের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে, তবেই শিক্ষাবিস্তারে সুদূরপ্রসারী প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা